শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খান আতাউর রহমান চলে যাওয়ার দুই যুগ

ম বিনোদন রিপোর্ট
  ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

অনন্য প্রতিভার অধিকারী বরেণ্য চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব খান আতাউর রহমান। শুধু চলচ্চিত্র নির্মাতাই নন, তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেতা, গীতিকবি, সুরকার, সংগীত পরিচালক, গায়ক, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক। চলচ্চিত্রের এমন প্রতিভা বিরল। খান আতা নামেও অধিক পরিচিত তিনি। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এবং বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তিতুল্য এই ব্যক্তিত্বের আজ মৃতু্যবার্ষিকী। তার চলে যাওয়ার দুই যুগ পূর্তি হচ্ছে আজ ১ ডিসেম্বর। কীর্তিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ১৯৯৭ সালের এই দিনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে মৃতু্যবরণ করেন। সমাজ, সংস্কৃতি ও দেশের মুক্তিযুদ্ধের এই অগ্রনায়ক তার সৃষ্টির মাঝেই বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।

১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া খান আতাউর রহমান ৫ বার বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন, ২০০৩-এ পেয়েছেন মরণোত্তর একুশে পদক। খান আতা ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানি পরিচালক আখতার জং কারদার পরিচালিত উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র 'জাগো হুয়া সাভেরা'তে মূল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন। এতে তার বিপরীতে ছিলেন ভারতীয় অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্র। এ ছায়াছবির সহকারী পরিচালক ছিলেন জহির রায়হান। একই বছরে মুক্তি পায় তার অভিনীত প্রথম বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র 'এ দেশ তোমার আমার'। এই চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন এহতেশাম। ১৯৬০ সালে জহির রায়হানের সাথে খান আতা গড়ে তোলেন লিটল সিনে সার্কেল। এতে পরের বছরগুলোতে তার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। অভিনেতা হিসেবে তিনি কাজ করেছেন 'কখনো আসেনি', 'যে নদী মরুপথে', 'সোনার কাজল', 'জীবন থেকে নেয়া', 'সুজন সখী'র মতো সফল চলচ্চিত্রে।

খান আতার প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র 'অনেক দিনের চেনা' মুক্তি পায় ১৯৬৩ সালে। ১৯৬৭ সালে তিনি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবনী নিয়ে নির্মাণ করেন 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা'। চলচ্চিত্রটি ১৯৬৯ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে গোল্ডেন প্রাইজের জন্য মনোনীত হয়। এরপর তিনি নির্মাণ করেন 'সাত ভাই চম্পা', 'অরুণ বরুণ কিরণমালা' ও 'জোয়ার ভাটা'। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করেন 'আবার তোরা মানুষ হ'। যার বিষয়বস্তু ছিল যুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতা। ১৯৭৫ সালে প্রমোদ কর ছদ্মনামে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মাণ করেন রোমান্টিক চলচ্চিত্র 'সুজন সখী'। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে পুরস্কৃত হন। ৮০'র দশকে নির্মাণ করেন 'হিসাব নিকাশ' এবং 'পরশপাথর' নামের দুটি চলচ্চিত্র। মুক্তিযুদ্ধের ওপর ১৯৯৪ সালে তিনি নির্মাণ শুরু করেন 'এখনো অনেক রাত'। ১৯৯৭ সালে ছবির কাজ শেষ হয়। কিন্তু সেন্সর বোর্ড ছবিটির ৭টি দৃশ্য কেটে ফেলার নির্দেশ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন তিনি। তিনি 'কবি জসীমউদ্‌?দীন', 'গঙ্গা আমার গঙ্গা', 'গানের পাখি আব্বাস উদ্দিন'সহ বেশকিছু তথ্যচিত্রও তৈরি করেছেন।

খান আতা সংগীত পরিচালক হিসেবে প্রথম কাজ করেন এহতেশাম পরিচালিত 'এ দেশ তোমার আমার' চলচ্চিত্রে। পরে ১৯৬২ সালে 'সূর্যস্নান' ছবিতে তিনি উপহার দেন 'পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে'র মতো বিখ্যাত গান। যাতে কণ্ঠ দেন আরেক কিংবদন্তি কলিম শরাফী। ১৯৬৩ সালে জহির রায়হানের 'কাঁচের দেয়াল' চলচ্চিত্রে তিনি উপহার দেন 'শ্যামল বরণ মেয়েটি' শীর্ষক একটি জনপ্রিয় গান। 'সূর্যস্নান' চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে এবং 'কাঁচের দেয়াল'-এর জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রকাশ করেন 'বাহানা', 'সাগর', 'আখেরি স্টেশন', 'মালা' প্রভৃতি উর্দু ছবিতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে