শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বিনোদন রিপোটর্
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার নুহাশ পল্লীতে স্বজন এবং ভক্তদের নিয়ে কেক কাটেন তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত
নানা আয়োজনে গতকাল মঙ্গলবার পালিত হলো কথাসাহিত্যিক, নাটক ও চলচ্চিত্রের নন্দিত নিমার্তা হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জন্মবাষির্কী। শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তাকে। দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল। গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে ব্যতিক্রমী আয়োজনে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন পালিত হয়। সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, সকালে কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, পায়রা উড়িয়ে ও কেক কেটে পালন করা হয়েছে কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। জন্মদিন পালন উপলক্ষে প্রথমে রাত ১২টা ১ মিনিটে পুরো নুহাশ পল্লীতে ২ হাজার ৫০০ মোমবাতি প্রজ্জলন করা হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুর হিমু পরিবহনের ২০ জন হিমু গাজীপুর শহর থেকে সাইকেল নিয়ে নুহাশ পল্লীতে আসেন। তারা হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। নুহাশ পল্লীতে ভাস্কর আসাদ তার নিজের করা বেশ কিছু ভাস্কযর্ প্রদশর্ন করেন। সকালে প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তাদের দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতসহ স্বজন এবং ভক্তদের নিয়ে নুহাশ পল্লীতে কেক কাটেন। এর আগে হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত ও আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। কবর জিয়ারত শেষে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ আছে এ গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে। হুমায়ূন আহমেদের আলোতে গাজীপুর আলোকিত হয়ে আছে। এক অথের্ বাংলাদেশ আলোকিত হয়ে আছে।’ তার জন্মদিন উপলক্ষে উৎসবমুখর পরিবেশে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণের চেতনা চত্বরে সপ্তমবারের মতো দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ‘হুমায়ূন মেলা’। ১১টা ৫ মিনিটে শুরু হয় ‘আনোয়ার সিমেন্ট-চ্যানেল আই হুমায়ূন মেলা’র অনুষ্ঠান। চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বাতার্ প্রধান শাইখ সিরাজসহ বক্তব্য রাখেন অনেকে। শিল্প-সাহিত্য ও শোবিজাঙ্গনের অনেকে এই মেলায় উপস্থিত হন। একে একে বক্তব্য রাখেন আগত অতিথিদের সবাই। শাইখ সিরাজ বলেন, আমাদের এ দেশের সাহিত্যের আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হুমায়ূন আহমেদ। মধ্যবিত্ত বাঙালির চেতনার গভীরে গিয়ে তিনি এমন সব সাহিত্যকমর্ রচনা করেছেন, যেগুলো কখনো মুছে যাবে না। আমরা চাইব হুমায়ূন মেলার মধ্য দিয়ে আমাদের তরুণরা শুদ্ধ সংস্কৃতি এবং মানবিক চেতনায় বড় হয়ে উঠুক এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাক। এরপর একে একে বক্তব্য উপস্থিত করেন অতিথিরা। উপস্থিত সবাই চ্যানেল আইকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিয়েছেন প্রতি বছর এমন আয়োজনের ব্যবস্থা করার জন্য। এ ছাড়া প্রকাশনা সংস্থা অন্য প্রকাশের পক্ষ থেকে ‘হুমায়ূন আহমেদ পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য ও জীবন’ শীষর্ক স্মরণ অনুষ্ঠান। কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বিকাল পঁাচটায় এই অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে এর আগে সোমবার এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় এবার ‘হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান ও ফাতিমা রুমি। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে পুরস্কার হিসেবে রিজিয়া রহমানকে পঁাচ লাখ ও ফাতিমা রুমিকে এক লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তার ডাক নাম ছিল কাজল। বাবার রাখা তার প্রথম নাম শামসুর রহমান। পরে তিনিই তার ছেলের নাম বদলে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। দূরারোগ্য ক্যান্সারে ভোগে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে তাকে সমাহিত করা হয়।