'ফ্যামিলি ক্রাইসিস' নাটকের অভিনয়শিল্পীরা
পারিবারিক গল্পের কারণেই এক সময় তুমুল জনপ্রিয় ছিল টিভি ধারাবাহিক নাটক। এসব নাটকে মা-বাবা, ভাই-বোন, ভাবি-দুলাভাই, দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু চ্যানেল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোনালি সময় হারায় টিভি নাটক। দর্শক নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে আগ্রহী হয়ে পড়েন বিদেশি চ্যানেলের ভিন দেশি সিরিয়ালে। দেশীয় চ্যানেলগুলোও প্রচারে আনে বিদেশি সিরিয়াল। পারিবারিক গল্পের কারণেই দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এসব সিরিয়াল।
দর্শকের মাঝে ভিনদেশি সিরিয়ালের পারিবারিক গল্পের আগ্রহীর দরুন দেশীয় টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষও উদ্যোগ নেয় পারিবারিক ধারাবাহিকের। ফলে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পারিবারিক ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে বিভিন্ন চ্যানেলে। দর্শকপ্রিয়তার কারণে কোনো কোনো নাটকের সিকু্যয়ালও তৈরি করা হচ্ছে। একটি শেষ হতে না হতেই শুরু হচ্ছে আরেকটি নাটক। হারিয়ে যাওয়া সেই পারিবারিক আবহ দেখে আবারও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন দর্শক। নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা এখন এসব নাটকে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। অনেকটা জোয়ার বইছে পারিবারিক নাটকের। গল্প তো বটেই খোদ নাটকের নামকরণ হচ্ছে পরিবার নিয়ে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে 'ফ্যামিলি ক্রাইসিস', 'জয়েন্ট ফ্যামিলি', 'ফ্যামিলি ফ্যান্টাসি', 'ফ্যামিলি প্রবলেম', 'ফ্রেন্ডস ফ্যামিলি', 'পরিবার : দ্য ফ্যামিলি', 'হইচই পরিবার'সহ আরও অনেক নাটক। এছাড়া আমাদের বাড়ি, মা-বাবা-ভাই বোনসহ আরও কিছু নাটকে দেখা যাচ্ছে বাঙালি পরিবারের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার গল্প।
দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে দীপ্ত টিভির ধারাবাহিক নাটক 'মান অভিমান'। এ নাটকটি মূলত মধ্যবিত্ত পরিবারের পাঁচটি মেয়েকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। অভিনয় করেছেন তোফা হাসান, সমাপ্তি মাশুক, ইফফাত আরা তিথি, শিবলী নওমান, শাকিলা আক্তার, কাজী রাজু, মিলি বাশার, ইমিলা হক, শাহ আল দুলালসহ আরও অনেকে। 'প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস' উপন্যাসের অনুপ্রেরণায় এর চিত্রনাট্য করেছেন নাসিমুল হাসান। পরিচালনা করছেন আশিস রায় এবং জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। ইতোমধ্যে এর ৮০০ পর্ব প্রচারিত হয়েছে।
এনটিভিতে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে প্রচারিত হচ্ছে ধারাবাহিক নাটক 'জয়েন্ট ফ্যামিলি'। রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনায় এতে অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব, কেয়া পায়েল, দিলারা জামান, মনিরা মিঠু, শহীদুল আলম সাচ্চু, আব্দুলস্নাহ রানা, সুষমা সরকার, নাফিজা মেঘলা, শাহেদ আলী সুজন প্রমুখ। একই চ্যানেলে সপ্তাহের প্রতি রবি, সোম ও মঙ্গলবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে প্রচারিত হচ্ছে ধারাবাহিক নাটক 'মা বাবা ভাই বোন'। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে 'মা বাবা ভাই বোন' অবলম্বনে নাটকটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন হাসান রেজাউল। অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, সাবেরী আলম, শবনম ফারিয়া, আবু হুরায়রা তানভীর, তাসনুভা তিশা, শম্পা রেজা, সাজু খাদেমসহ অনেকে। এটিএন বাংলায় সপ্তাহের প্রতি রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার রাত ৮টায় প্রচারিত হচ্ছে ধারাবাহিক নাটক 'পরিবার'। পরিচালনা করেছেন রাশেদা সাজ্জাদ লাজুক। অভিনয় করেছেন মিশু সাব্বির, মনিরা মিঠু, সালহা নাদিয়া, নাদিয়া মিম, কাজল সুবর্ণ, জামিল হোসেন, সুব্রত, মিলি বাশার, মাসুম বাশার, ম ম মোর্শেদ প্রমুখ। একই চ্যানেলে প্রতি রবি ও সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে চলছে নতুন ধারাবাহিক 'সাদাসিধে ছোটভাই'। মাসুম রেজার রচনায় নাটকটি পরিচালনা করেছেন সকাল আহমেদ। অভিনয়ে শহীদুজ্জামান সেলিম, সাবেরি আলম, এফ এস নাঈম, অ্যালেন শুভ্র, অর্ষা, মৌসুমি হামিদ প্রমুখ। বৈশাখী টিভিতে প্রতি মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে প্রচারিত হচ্ছে 'জমিদার বাড়ি'। টিপু আলমের রচনায় নাটকটি পরিচালনা করেছেন সাজ্জাদ হোসেন দোদুল। বাংলাভিশনে সোম ও মঙ্গলবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে প্রচারিত হচ্ছে 'বউ দৌড়'। একই চ্যানেলে বুধ থেকে রোববার রাত ৮টায় প্রচারিত হচ্ছে 'গুলশান এভিনিউ-২'। পারিবারিক গল্প নিয়ে সিএমভি'র ব্যানারে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে ধারাবাহিক নাটক 'ফ্যামিলি প্রবলেম'। পরিচালনা করেছেন নাসির উদ্দিন মাসুদ। অভিনয় করেছে মারজুক রাসেল, রুনা খান, চাষি আলম, জে এস হিমি, মুসাফির সৈয়দ, এলেন শুভ্র, মুকিত জাকারিয়া, সাবেরী আলম, হান্নান শেলি, আব্দুলস্নাহ রানা, শর্মি সারমিন, সুমাইয়া আনজুম মিথিলাসহ অনেকে। শিগগিরই ধারাবাহিকটি উন্মুক্ত হবে প্রতিষ্ঠানটির ইউটিউব চ্যানেলে। পাশাপাশি প্রচার হবে নাগরিক টিভিতেও। ১৮২ পর্বের পর শেষ হয় নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের আলোচিত ও ব্যাপক প্রশংসিত ধারাবাহিক 'ফ্যামিলি ক্রাইসিস'। সেই ধারাবাহিকতায় পারিবারিক নতুন গল্প নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এবারের নাটকের নাম 'ফ্যামিলি ক্রাইসিস রিলোডেড'।
এ প্রসঙ্গে অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, 'দর্শক পারিবারিক নাটক পছন্দ করেন। পরিবারের সবাই মিলে এ নাটক দেখতে পারেন। করোনার শুরুর দিকে অনেক আগের নাটকগুলো পুনঃপ্রচার হয়েছে। দর্শক নাটকগুলো দেখেছেন। বর্তমানে আমরা পরিবার থেকে সরে যাচ্ছি। পারিবারিক জীবনের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ ছিল, সেটা আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। তবে এখন কিছু পরিচালক পারিবারিক গল্পের নাটক নির্মাণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এটা অত্যন্ত ভালো খবর। এটা অব্যাহত থাকা দরকার।'