বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নামছে আজ

মাতিয়ার রাফায়েল
  ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া বিংশতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নামছে আজ। এবারের উৎসবটি নানা কারণেই উলেস্নখযোগ্য হয়ে থাকবে। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে ৭০টি দেশের ২২৫টি চলচ্চিত্র নিয়ে এই উৎসবের উলেস্নখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল এবারে বাংলাদেশের একঝাঁক তরুণের চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ৪০টি প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে ২২টি শর্টফিল্ম ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং ১৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য। উৎসবের আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, এই সিনেমা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবার ইন্ডিপেন্ডেন্ট (স্বাধীন) ও ক্রিয়েটিভ (সৃজনশীল) নির্মাতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ইন্ডিপেনডেন্ট ও আর্টিস্টিক সিনেমাকেই গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এবারের উৎসবের প্রদর্শনী শুধু মিলনায়তনেই নয় অনলাইনেও সারা দেশের দর্শককে দেখানোর ব্যবস্থা ছিল উলেস্নখযোগ্য।

প্রতিযোগিতায় প্রথমে প্রায় শতাধিক দেশের ৭০০টি চলচ্চিত্র জমা পড়লেও করোনা পরিস্থিতিসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এই সংখ্যা ২২৫টিতে নামিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ১২৯টি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও শর্টফিল্ম ৯৬টি। যেসব দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় তাতে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, বেলারুস, বসনিয়া-হার্জেগোভেনিয়া, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিন, ?োয়েসিয়া, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক রিপাবলিক, কঙ্গো, মিসর, ইস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, প্যালেস্টাইন, জার্মানি, গ্রিস, গুয়েতেমালা, হাঙ্গেরি, ভারত, ইরান, ইরাক, ইটালি, জাপান, কাজাকস্তান, কসোভো, কিরগিস্তান, লেবানন, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, নেপাল, নেদারল্যন্ডস, নরওয়ে, পাকিস্তান, পেরু, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল রোমানিয়া, রাশিয়া, রুয়ান্ডা, সার্বিয়া, সিঙ্গাপুর, স্স্নোভাকিয়া, স্স্নোভেনিয়া, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, তাইওয়ান, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, ইয়াকুতিয়া ছিল উলেস্নখযোগ্য।

এবারের প্রতিযোগিতায় নতুন একটি ক্যাটাগরিসহ দশটি ক্যাটাগরি রাখা হয়। এগুলো হলো এশিয়ান কমপিটিশন, সিনেমা অব ওয়ার্ল্ড, উইমেন ফিল্ম মেকার, স্পিরিচু্যয়াল, চিলড্রেন, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট, প্যানোরোমা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল (নতুন সংযোজিত শাখা), 'রেট্রোস্পেকটিভ', 'ট্রিবিউট'।

উৎসবের সিনেমাগুলো জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন, মধুমিতা সিনেমা হল এবং বসুন্ধরা সিটি ও সীমান্ত স্কয়ারের স্টার সিনেপেস্নক্স প্রদর্শিত হয়। এসব প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের বেশ কিছু চলচ্চিত্র একেবারেই অনালোচিত অবস্থায় ঠাঁই করে নেয়। অনেকটা সাদ মোহাম্মাদের 'রেহানা মরিয়ম নূরে'র মতো। কান চলচ্চিত্রে ঠাঁই করে নেওয়ার আগে যেমন এই সিনেমাটি মিডিয়ায় বা দর্শকের মাঝে একেবারেই অনালোচিত ছিল।

সে রকমই নাম করা যায় এশিয়ান কমপিটিশানে অংশ নেওয়া সিনেমা ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীর 'মায়ার জঞ্জাল'। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে আরও কয়টি সিনেমা অন্যান্য শাখায় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। যেমন- গোলাম মুস্তাফার 'আ ফাদাস ডায়েরি', আবিদ হুসাইন খানের 'ডিজেপিয়ারিং প্রফেশন' (সিনেমা অব ওয়ার্ল্ড শাখা)। প্যানোরোমা শাখায় সাইদুল আনাম টুটুলের 'কালবেলা' এবং নুরুল আলম আতিকের 'লাল মোরগের ঝুঁটি'। শাহিন দিল রিয়াজের ৬টি সিনেমা নতুন ক্যাটাগরি ওয়াইড অ্যাঙ্গেল-এ প্রদর্শিত হয়। এই সিনেমাগুলোও এই প্রদর্শনীতে যুক্ত হওয়ার আগে একেবারে অনালোচিত ছিল। এখন পুরস্কার ঘোষণার পর দেখা যাবে এই অনালোচিত সিনেমার কোনটি আলোচিত হয়ে আসছে।

এবারের উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল বিশ্ব চলচ্চিত্রের দুই মহারথীর সিনেমা। এর একজন হচ্ছেন জাপানি চলচ্চিত্রকার ইয়াসুজিরো ওজু এবং অন্যজন ফরাসি পরিচালক জঁ্য লুক গদার। 'রেট্রোস্পেকটিভ' শাখায় জাপানি চলচ্চিত্রকার ইয়াসুজিরো ওজুর পাঁচটি ছবি 'টোকিও স্টোরি', 'টোকিও টোয়াইলাইট', 'ইকুইনক্স ফ্লাওয়ার', 'লেট অটাম' ও 'অ্যান অটাম আফটারনুন' প্রদর্শিত হয়। অন্যদিকে 'ট্রিবিউট' শাখায় প্রদর্শিত হয় ফরাসি চলচ্চিত্রকার জঁ্য লুক গদারের 'পিয়েরে লে ফু' ও 'ব্রেথলেস' ছবি দুটি। ফরাসি রেনেসাঁস আন্দোলনের অন্যতম অভিনেতা জঁ পল বেলমন্দো। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ফরাসি চলচ্চিত্রে রেনেসাঁস আন্দোলনে তার নামটি বিশেষ উলেস্নখযোগ্য। গত বছর ২০২১ সালে মারা যান এই বিখ্যাত অভিনেতা। মূলত তাকে শ্রদ্ধা জানাতেই এই দুটি ছবি প্রদর্শিত হয়। উৎসবের আগের আসরটি করোনার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়। ৯ দিনব্যাপী সেই উৎসবে বাংলাদেশসহ ৭৩টি দেশের ২২৭টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। গত বছর সেরা সিনেমা হয় কাজাখাস্তানের 'দ্য রোড টু দ্য ইডেন'। এবার কোন দেশের কোন সিনেমাটি সেরা হয় তা জানা যাবে আজ উৎসবের সমাপনী দিনে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে