নিভে গেল আরও একটি প্রদীপ

শেষ পযর্ন্ত চলেই গেলেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নিমার্তা, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী এবং লেখক আমজাদ হোসেন। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্র পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতেও কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে-

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আমজাদ হোসেন
সুচন্দা আমার প্রাথর্না কাজে এলো না। যেদিন তার অসুস্থতার খবর পেয়েছিলাম, সেদিন থেকেই তার জন্য বিধাতার কাছে তার রোগমুক্তি কামনা করে আসছি। কিন্তু বিধাতা যার সময় যতদিন বেঁধে দিয়েছেন, তা খÐানোর ক্ষমতা যে কারও নেই। কিন্তু এভাবে চলে যাবেন এটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। তিনি আমাদের পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন বলা চলে। সেই ‘বেহুলা’ ছবির সময় থেকে আমাদের সম্পকর্। এরপর আরও অনেক ছবিতে এই যেমন ‘আনোয়ারা’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’, ‘মনের মতো মন’, ‘যোগ বিয়োগ’ ছবিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। কত অসাধারণ স্মৃতি আমাদের। সুখে-–দুঃখে, খেয়ে না–খেয়ে আমরা কত কাজ করেছি, তার হিসেব নেই। তার মতো এত গুণী মানুষ খুব কমই আছেন। তিনি এমন সময়ে চলে গেলেন, যখন তার মতো চলচ্চিত্র নিমার্তা আমাদের অনেক বেশি প্রয়োজন।’ ববিতা এই মুহ‚তের্ আমি কোনো কথা বলতে পারছি না। ভাষা খঁুজে পাচ্ছি না। তাকে যখন হাসপাতালে দেখতে যাই, আমার তখনই ধারণা হয়েছিল, তার সময় হয়তো বেশি নেই। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি এভাবে চলে যাবেন- এটা মেনে নিতে পারছি না। বাংলাদেশে আমজাদ হোসেন একজনই ছিলেন। অনেক ছবি করেছি। বিশ্বের অনেক বড় বড় উৎসবে অংশ নিয়েছে। তার অনেক ছবি মাইলস্টোন হয়ে আছে। গ্রামবাংলাকে তিনি ছবির মাধ্যমে চিনিয়েছেন। এখনো আমাকে ‘গোলাপী’ বলে ডাকেন মফস্বলের দশর্করা। আর এ গোলাপী চরিত্রটি তারই সৃষ্টি। আমার জীবনে যে কয়টি সিনেমা মাইলস্টোন হয়ে আছে তার মধ্যে একাধিক ছবির পরিচালক আমজাদ ভাই। কত সুখ-দুঃখের স্মৃতি আমাদের। তার মৃত্যুর খবরটি শুনে এখনও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। দেশের ও দেশের বাইরে সবার কাছে আমজাদ ভাইয়ের আত্মার মাগফিরাত কামনা করার জন্য অনুরোধ করছি।’ নূতন আমজাদ ভাই আমাদের বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের একজন প্রখ্যাত নিমার্তা ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে শুধু চলচ্চিত্রাঙ্গনই নয়, সারা দেশের সকল চলচ্চিত্র প্রেমীরা শোকে স্তব্ধ। তার এভাবে চলা যাওয়াটা সত্যিই কষ্টের। তিনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে চলে আসবেন এটাই সবাই চেয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হলো না। তিনি সবাইকে ছেড়ে, চলচ্চিত্রকে ছেগে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আমি আমজাদ ভাইয়ের আত্মার শান্তি কামনা করছি। মুশফিকুর রহমান গুলজার তিনি অসুস্থ হলে প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার ভার নেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরেও পাঠানো হয়। আমাদের সবার আশা ছিল তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু তার মৃত্যুর খবর পেলাম। তার মত এত বড়মাপের একজন নিমার্তা হয়তো আর হবে না। তিনি শুধু নিমার্তাই নন একজন খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তার ব্যবহারে সবাই সন্তুষ্ট ছিলেন। সবাই তাকে ভালোবাসতেন। আলাউদ্দীন আলী ‘একটা কথা ক গোলাপী একটা কথা ক? গোলাপীকে আর কেউ কোনদিন কথা বলাবে না... আর কেউ লিখবেনা, এমনওতো প্রেম হয়, কেউ কোনদিন আমারে তো কথা দিলনা, সময় হয়েছে ফিরে যাবার, কেন তারে আমি এতো ভালবাসলাম।’ প্রিয় এই মানুষটিকে হারানোর বেদনা নিয়ে আলা উদ্দিন আলী লিখেছেন, ‘আমজাদ ভাই ভালো থাকুন। ’কিংবদন্তি সুরকার আলাউদ্দিন আলী নিমার্তা আমজাদ হোসেনের মৃত্য সংবাদ শুনে স্মরণ করিয়ে দিলেন তেমনই কিছু প্রিয় গানের কথা। আনোয়ারা তিনি ছিলেন আমাদের পথ-প্রথশর্ক। আমি তার বেশ কিছু ছবিতে কাজ করছি। যতবারই কাজ করেছি, ততবারই অনেক কিছু শিখেছি তার কাছে। অভিনয়শিল্পী তৈরিরও কারিগর ছিলেন। হালের অপু বিশ্বাস থেকে শুরু করে অনেক নায়িকাই তার আবিষ্কার। কাজের সময় তিনি সবসময় একটা বিষয় খেয়াল করতেন। সেটা হলো চিত্রনাট্য থেকে যেন একচলি নড়চড় না হয়। এ কারণে তার ছবিতে অভিনয়ের সময় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই স্কুলে পড়া ছাত্র-ছাত্রীর মতো চিত্রনাট্য মুখস্থ করে ফেলতাম। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্র শিল্প কি পরমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হলো- তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। চম্পা তিনি আমাদের মাঝে এখন নেই-এটাই এখন কঠিন। কিন্তু এই সত্যটা মেনে নিতে কেন এত কষ্ট হচ্ছে! নিজের মন যেন নিজেকেই প্রশ্ন করে যাচ্ছে, আর বেদনায় সিক্ত হচ্ছে। এসব অনুভ‚তি কখনো বলে বোঝানো সম্ভব না। তার সঙ্গে আমি তেমন কোনো ছবিতে অভিনয় করিনি। আমজাদ ভাই ছিলেন আমাদের পরিবারের সদস্যের মতোই। আমার বড় দুই বোনের সঙ্গে যখন তিনি কাজ করতেন, তখন আমি ছোট। আমাকে বলতেন, বড় হলে তোমার সঙ্গেও কাজ করব। একটিমাত্র ছবিতে অভিনয় করেছি, অনেক অতৃপ্তি রয়ে রয়ে গেছে। তিনি এমন একজন পরিচালক যিনি শিল্পীর ভেতরের স্বত্তাকে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন অসাধারণভাবে। তার মধ্যে এমন কিছু গুণ আছে, যা অনেকেরই মধ্যে নেই। তার কোনো মৃত্যু নেই। অপু বিশ্বাস কী বলব বুঝতে পারছি না। আমি রীতিমত স্তম্ভিত অবাক এবং বাকরুদ্ধ। আমার আজকের এই অবস্থানে আসার জন্য এক কথায় আমাকে অপু বিশ্বাস বানিয়েছেন। তার হাত ধরেই আমার চলচ্চিত্রে আসা। আমি যখন মাকে নিয়ে ভাগ্যের সন্ধানে ঢাকা আসি, তখন তার সঙ্গে আমার প্রখম দেখা হয় এফডিসিতে। তখন তিনি ‘কাল সকালে’ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্র নিমাের্ণর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলেন তিনি। কিন্তু তখন ওই চলচ্চিত্রের নায়িকা আগে থেকেই চূড়ান্ত করা ছিল বলে, আমাকে নায়িকা হিসেবে নিতে পারেননি। তবে আমাকে বাদও দেননি। সেখানে আমাকে গুরুত্বপূণর্ একটি পাশ্বর্চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ দেন।