বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফের নক্ষত্রপতন চলেই গেলেন তরুণ মজুমদার

বিনোদন ডেস্ক
  ০৫ জুলাই ২০২২, ০০:০০

পশ্চিমবঙ্গের বিনোদন জগতে ফের নক্ষত্রের পতন। বেশ কিছুদিন হাসপাতালে মৃতু্যর সঙ্গে লড়াই করে শেষমেশ হার মানলেন টলিউডের কিংবদন্তি পরিচালক তরুণ মজুমদার। 'দাদার কীর্তি' সিনেমাখ্যাত এই পরিচালক সোমবার বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে মৃতু্যবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। গত ২২ বছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তরুণ মজুমদার। গত ৬ জুন শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা গেছে, রোববার মধ্যরাত থেকে তার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন অবস্থায় রাখা হয়েছিল তাকে। ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন থাকলেও ডায়ালাইসিস দেওয়ার অবস্থায় তিনি ছিলেন না। ১০০ শতাংশ ভেন্টিলেটরি সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। কিডনির সমস্যা নিয়েই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পরে ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে তার। এই পরিচালকের চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন চেস্ট মেডিসিনের চিকিৎসক সোমনাথ কুন্ডু, মেডিসিনের চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ, নেফ্রলজিস্ট অর্পিতা রায়চৌধুরী, কার্ডিওলজিস্ট সরোজ মন্ডল, নিউরো মেডিসিনের চিকিৎসক বিমান রায়ের মতো অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে গিয়েছিলেন তারা। তরুণ মজুমদারের স্বাস্থ্যের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ মেডিকেল বোর্ডের মিটিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সাড়ে ৯টা নাগাদই বৈঠক করা হয়। তারপরই তরুণ মজুমদারের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। পরিবারের সম্মতিতে বেলা সোয়া ১১টা নাগাত তরুণ মজুমদারের সব মেডিকেল সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ভারতের একাধিক গণমাধ্যম।

১৯৩১ সালের ৮ জানুয়ারি অধুনা বাংলাদেশের বগুড়ায় জন্ম তরুণ মজুমদারের। প্রায় ষাট বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ার তার। ১৯৫৯ সালে ছবির জগতে পা রাখেন বর্ষীয়ান এই নির্মাতা। কাজ করেছেন ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৯০ সালে 'পদ্মশ্রী' সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। তার বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। কেমিস্ট্রির ছাত্র হলেও সিনেমা তৈরির ঝোঁক ছিল বরাবরই।

১৯৫৯ সালে উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেনের সঙ্গে 'চাওয়া পাওয়া' সিনেমাটি বানিয়েছিলেন তরুণ মজুমদার। ১৯৬০ সালে নির্মাণ করেন 'স্মৃতিটুকু থাক'। ১৯৬২ সালে 'কাচের স্বর্গ' বানিয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম এই পরিচালক। এই সিনেমার জন্যই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। সিনেমাপাড়ায় তরুণের হাঁটা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। যোগাযোগ হয়েছিল 'থিরবিজুরি' কাননদেবীর সঙ্গে। এই কাননদেবীর প্রোডাকশনেই আলাপ শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ১৯৫৯ সালে ততদিনে বন্ধু শচীন এবং দিলীপকে সঙ্গে নিয়েই তরুণ গড়লেন 'যাত্রিক'। এই প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে প্রথম সিনেমাই বস্নকবস্নাস্টার উত্তম-সুচিত্রার 'চাওয়া পাওয়া'। পরে 'কাচের স্বর্গ'ও সাড়া ফেলে দেয়। ১৯৬২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির জন্য জুটেছিল জাতীয় পুরস্কার। ঘটনাচক্রে তরুণের জীবনে সেটিই প্রথম জাতীয় পুরস্কার। এরপর তার হাত থেকে একে একে বেরিয়ে এলো কত না মণিমুক্তো- বালিকা বধূ (১৯৬৭), নিমন্ত্রণ (১৯৭১), কুহেলি (১৯৭১), শ্রীমান পৃথ্বীরাজ (১৯৭৩), ফুলেশ্বরী (১৯৭৪), সংসার সীমান্তে (১৯৭৫), গণদেবতা (১৯৭৮)। নিমন্ত্রণ ও গণদেবতা। 'গণদেবতা' শ্রেষ্ঠ বিনোদনমূলক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতে নিয়েছিল, আর 'নিমন্ত্রণ' পেয়েছিল শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে জাতীয় পুরস্কার।

এর পরে যে ছবিগুলো তার হাত থেকে এলো সেগুলোও জনপ্রিয় বাংলা ছবির ইতিহাসে দীর্ঘ ছায়া ফেলে রেখে গেছে। এরমধ্যে আছে, দাদার কীর্তি (১৯৮০), ভালোবাসা ভালোবাসা (১৯৮৫), পথভোলা (১৯৮৬), আপন আমার আপন (১৯৯০)। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অনেক রকম ছবি বানালেও শোনা যায়, নিজের তৈরি ছবিগুলোর মধ্যে তরুণ মজুমদার নাকি সবচেয়ে পছন্দ করতেন 'ফুলেশ্বরী'। তার হাতেই ক্যারিয়ার শুরু মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, তাপস পাল, মহুয়া রায়চৌধুরী, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাপস পাল তার আটটি ছবিতে কাজ করেছেন। টানা কয়েক দশক ধরে সিনেমাপাড়া দিয়ে যেতে যেতে তিনি রুচিশীল কিন্তু বিনোদনোজ্জ্বল ছবি-নির্মাণের যে অপূর্ব তারুণ্যময় কলা ও কৌশলের উত্তরাধিকার রেখে গেলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে