বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সৌরভ ছড়াল 'রক্তকরবী'র নন্দিনী

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ০৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
'রক্তকরবী' নাটকে রমিজ রাজুর সঙ্গে নূনা আফরোজ

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প, কবিতা, উপন্যাসে অনেক নারী চরিত্র অমর হয়ে রয়েছে সাহিত্য ও নাটকপ্রেমী বাঙালির মানসপটে। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, কবিগুরুর সেরা ও আলোচিত নারী চরিত্র কোনটি? কোনোরকম চিন্তা-ভাবনা না করে সবার আগে রবীন্দ্র সাহিত্যপ্রেমীদের মুখ ফসকে বেরিয়ে আসবে একটি নাম। সেটি হলো, রক্তকরবী নাটকে 'নন্দিনী'। মঞ্চ ও টিভি নাটকে যুগে যুগে এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুই বাংলার খ্যাতিমান অভিনেত্রীরা। সব অভিনেত্রীর জন্যই চরিত্রটি যেন এক স্বপ্নের চরিত্র। 'রক্তকরবী' নাটকের নন্দিনী হচ্ছে প্রেমের প্রতীক। এবার সেই চরিত্রে অভিনয় করে আবারও দর্শকের অন্তর একইসঙ্গে শীতল ও চঞ্চল করে তুললেন খ্যাতিমান অভিনেত্রী নূনা আফরোজ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রক্তকরবী' নাটক লেখার ১০০ বছর পূর্তি হবে আগামী বছর ২৬ এপ্রিল ২০২৩। এটি উদযাপনের জন্য এক বছরব্যাপী পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশের প্রথম সারির নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর। এরই ধারাবাহিকতায় তিন বছরের বিরতির পর রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় জমকালো আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো বহুল চর্চিত 'রক্তকরবী' নাটকটি। নির্দেশনার পাশাপাশি নন্দিনী চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে উপস্থিত দর্শকের মনে আরেকবার সৌরভ ছড়িয়ে দিলেন নূনা আফরোজ।

কানায় কানায় পরিপূর্ণ না হলেও দর্শকের উপস্থিতি মোটেও কমতি মনে হয়নি। মুহুর্মুহু করতালি আর উচ্ছ্বাসই প্রমাণ করেছিল হলভর্তি দর্শকের আবহ। এরই মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা ছিল দর্শক আসনে শিক্ষামন্ত্রী ডক্টর দীপু মনির হঠাৎ উপস্থিতি। দর্শকের সঙ্গে বসে দীপু মনি নাটকটি উপভোগ করছেন- এটাও যেন অন্যরকম উদ্দীপনা জোগায় সবার মনে। আর নাটকের প্রদর্শনী শেষে দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় কেবলই যেন প্রশংসায় ভাসছিলেন নূনা আফরোজের নিদের্শনা আর 'নন্দিনী' চরিত্রের সাবলীল অভিনয়। এক দর্শক তো বলেই ফেললেন, নূনা আফরোজ হচ্ছেন মঞ্চের রাজকন্যা।'

নাটকটি নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নূনা আফরোজ লিখেছেন, 'একটি নাটক হবে, তার জন্য কত আয়োজন, নাটকের প্রদর্শনী মানে মাটি কাটার চেয়েও বেশি পরিশ্রম আর নানা সীমাবদ্ধতা। জটিলতা তো রয়েছেই, তারপরও দর্শক উপস্থিতি দেখলে দর্শক ভরে যায়। আর যদি দর্শক আসনে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে চমকে দেন ডক্টর দীপু মনি আপার মতো একজন।'

কেবল নূনা আফরোজই নন, প্রাঙ্গণেমোরের রক্তকরবী নাটকের সব কলাকুশলীরই অভিনয় মনে গেঁথে থাকবে অনেক দিন- এমন মন্তব্যও করেছেন অনেকে। পাশাপাশি এর শিল্প নির্দেশনা, মঞ্চ পরিকল্পনা, পোশাক, লাইটিং- সবকিছুতেই মুগ্ধতার কথা জানালেন দর্শকের বড় একটা অংশ। নাটকটিতে নূনা আফরোজ ছাড়াও আরও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনন্ত হিরা, রমিজ রাজু, আউয়াল রেজা, সরোয়ার সৈকত, ঝুমুর আসমা জুঁই, সাগর রায়, নিজাম লিটন, সবুক্তগীন শুভ, জুয়েল রানা, সুজয়, ঝুমুর, সুমন, বাঁধন সরকার, মাছুম, পার্থ ও রুমা।

'রক্তকরবী' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাংকেতিক নাটক। নাটকটি বাংলা ১৩৩০ সালের শিলং-এর শৈলবাসে রচিত। তখন এর নামকরণ হয়েছিল যক্ষপুরী। ১৩৩১ সালের আশ্বিন মাসে যখন প্রবাসীতে প্রকাশিত হয় তখন এর নাম হয় 'রক্তকরবী'। মানুষের অসীম লোভ কীভাবে জীবনের সব সৌন্দর্য ও স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করে মানুষকে নিছক যন্ত্র ও উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণে পরিণত করেছে এবং এর ফলে তার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ কী রূপ ধারণ করেছে- তারই প্রতিফলন ঘটেছে এ নাটকটিতে। শোষণ ও বন্ধন থেকে মানুষের মুক্তির ব্যাকুলতা এবং সংগ্রামকে ভিত্তি করে প্রায় ৪৫ বছর আগে লেখা রবীন্দ্রনাথের এই নাটকটির অভিনয় দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আমাদের বিশেষ সমসাময়িক জীবনের পটভূমিতে 'রক্তকরবী' যেন আগের চেয়েও বেশি অর্থময় হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছিল, সংগ্রামী সাধারণ মানুষ এই নাটকের মর্মোদ্ধার যতখানি করতে পারে, আর কেউ ততখানি পারে না। পাক-ভারত স্বাধীনতাসংগ্রামের একপর্যায়ে বিরাট গণঅভু্যদয় ঘটে যাওয়ার পরে নতুনতর প্রস্তুতির মুখে এই নাটকটি রচিত হয়েছিল। এই সংগ্রামী উপাদানটিকে বাদ দিয়ে একে আলগাভাবে বিশ্লেষণ করতে গিয়েই তাত্ত্বিকরা একে মরমিবাদী রহস্যময়তায় নিয়ে ফেলেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে