শুভ জন্মদিন

জীবনযুদ্ধে লড়ছেন দুই নক্ষত্র

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম জাহাঙ্গীর বিপস্নব
প্রবীর মিত্র ও আকবর হোসেন পাঠান দুলু ওরফে ফারুক- ঢাকাই চলচ্চিত্রের জীবন্ত দুই কিংবদন্তি। একজন চলচ্চিত্রের 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা' বলে খ্যাত, আরেকজন 'মিয়াভাই' বলে পরিচিত। উজ্জ্বল এই দুই নক্ষত্রের আজ জন্মদিন। কিন্তু জীবনের বিশেষ এই দিনে বাস্তবের কঠিন কণ্টকের লড়াই করে ক্ষয়ে জীবন কাটাচ্ছেন তারা। জন্মদিন নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের বদলে বিছানায় শুয়ে নির্বাক তাকিয়ে রয়েছেন চলচ্চিত্রের এই দুই বাতিঘর। ১৯৪১ সালের এই দিনে চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া প্রবীর মিত্র আজ পা রাখলেন ৮২ বছরে। অন্যদিকে ১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া চিত্রনায়ক ফারুক পদার্পণ করলেন জীবনের ৭৫তম বসন্তে। বর্তমানে দুজনেই ভীষণ অসুস্থতায় ভুগছেন। এমনকি মাঝে-মধ্যে মৃতু্যর গুজবের মতো কঠোর শব্দও শুনতে হচ্ছে দু'জনকে। কয়েক বছর ধরে অসুস্থ চলচ্চিত্রের অন্যতম দিকপাল প্রবীর মিত্র। চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে চিকিৎসার জন্য ভারতের দিলিস্নতে নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতাকে। সেখানে তিনি তার বোনের বাড়িতে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার তিন সন্তানও। প্রবীর মিত্র দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। হাঁটুর ব্যথায় ঘর থেকে যেমন বের হতে পারেন না, তেমনি ভালোভাবে কথাও বলতে পারেন না অসংখ্য হিট সিনেমার এই অভিনেতা। মাঝখানে ২০২০ সালের জুলাই মাসে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। অসুস্থ থাকলেও এখনও মনোবল হারাননি এই অভিনেতা। আবারও লাইট-ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আকুলতা কাজ করে তার মনে। আবারও প্রিয় প্রাঙ্গণ এফডিসিতে যেতে চান বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। পর্দায় নায়ক চরিত্রে যেমন সফল হয়েছেন, তেমনি চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও সমানভাবে আলো ছড়িয়েছেন প্রবীর মিত্র। এরপর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেতা। প্রবীর মিত্রর পৈতৃক নিবাস কেরানীগঞ্জের শাক্তায়। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া এই অভিনেতা স্কুল জীবন থেকেই নাট্যচর্চায় যুক্ত হন। স্কুল জীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ডাকঘর' নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের 'জলছবি' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। পরে ওই পরিচালকের জলছবি সিনেমার মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় তার অভিষেক হয়। 'তিতাস একটি নদীর নাম', 'চাবুক'-এর মতো সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় দেখা গেছে প্রবীর মিত্রকে। এছাড়া 'রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা' চলচ্চিত্রে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। তার অভিনীত অন্যান্য উলেস্নখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে 'জীবন তৃষ্ণা', 'সীমার', 'তীর ভাঙা ঢেউ', 'প্রতিজ্ঞা', 'অঙ্গার', 'পুত্রবধূ', 'নয়নের আলো', 'চাষীর মেয়ে', 'দুই পয়সার আলতা', 'আবদার', 'নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ' ইত্যাদি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত 'বড় ভালো লোক ছিল' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র। ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। নায়ক চরিত্রে যেমন সফল হয়েছেন, তেমনি সিনিয়র চরিত্রে এসেও তিনি আলো ছড়িয়েছেন সমানভাবে। অভিনয় নৈপুণ্যে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। তার সাবলীল অভিনয়, ভরাট কণ্ঠের সংলাপ দর্শকদের হৃদয়ে নিখাদ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। চলচ্চিত্রের আরেক প্রভাবশালী তারকা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন 'সারেং বউ'-এর নায়ক। বর্তমানে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই সংসদ সদস্য। এই অভিনেতার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে তার স্ত্রী ফারহানা পাঠান বলেন, তিনি আগের চেয়ে এখন তুলনামূলক বেশ ভালো আছেন। শারীরিক জটিলতাও অনেক কমেছে। এখন চিকিৎসায় পুরোপুরি সাড়া দিচ্ছেন। ভালোভাবে কথা বলছেন, হাঁটছেন, সব ধরনের খাবারও খাচ্ছেন।' গত বছরের ৮ মার্চ থেকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন নায়ক ও সংসদ সদস্য ফারুক। এই পুরোটা সময়জুড়ে অভিনেতার সর্বক্ষণের সঙ্গী তার স্ত্রী ফারহানা পাঠান। এই দীর্ঘ সময়ে ফারুকের চিকিৎসা বাবদ অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। ফারুকের ছেলে রওশন হোসেন পাঠান শরৎ দেশেই থাকেন। শরৎ বলেন, 'আব্বুর চিকিৎসার জন্য আমাদের বারিধারার দুটি ফ্ল্যাট গত জানুয়ারিতে বিক্রি করতে হয়েছে। যেখানে আমরা থাকিনি। এছাড়া আব্বুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টও শূন্য হয়ে গেছে। আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা পর্যন্ত করতে হয়েছে।' এরপরও তার বাবার চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান শরৎ। তিনি বলেন, 'আব্বু বেশি দিন থাকলে আরও ধার-দেনা করা লাগতে পারে। তার সুস্থতার জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করব।' আর কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে ফারুককে? জবাবে ছেলে শরৎ বলেন, 'সেটা আব্বুর সুস্থতার ওপর নির্ভর করছে। তবে এখন যেভাবে তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে, তাতে এ বছরই আব্বুকে দেশে ফেরানো সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে।' শরৎ জানান, তার বাবার চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা মিললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তবুও যেটুকু সহযোগিতা পেয়েছেন তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান নায়কপুত্র শরৎ।