সাক্ষাৎকার

তোমার স্থানে তুমিই থাকবে বরণীয় হয়ে

না ফেরার দেশে চলে গেলেন বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার চলে যাওয়ায় বাকরুদ্ধ গোটা সংস্কৃতি অঙ্গন। বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। তেমনই একজন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গুণী সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যুর খবর প্রকাশ হওয়ার পর কথা হয় তার সঙ্গে ...

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সুজেয় শ্যাম
মৃত্যুর খবর ... যে কিনা আমাকে সবচেয়ে বেশি অভয় দিত, আজ (গতকাল) সকালে সে আমাকে ছেড়ে, সবাইকে কঁাদিয়ে চলে গেল। কেউ এভাবে চলে যেতে পারে। সকাল থেকে তাই মনটা খুব খারাপ। কী ভাষায় কষ্টটা প্রকাশ করব ভেবে পাচ্ছি না। সকালে যখন উঠে ডাক্তারের কাছে যাব তখন খবরটা পেলাম। ভাইয়ের মতো সম্পকর্ ... ও তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো ছিল। আমার যখন ক্যান্সার হলো মাঝে মাঝে ইন্ডিয়া যেতাম চিকিৎসার জন্য। তখন প্রতিদিন বুলবুলের সাথে দেখা হতো, কথা হতো। বুলবুল আমায় বলত, দাদা আপনি কেন ভয় পাচ্ছেন? ক্যান্সার অনেকেরই হয়। আবার চিকিৎসা করলে ভালোও হয়ে যায়। আমাকে সবসময় অভয় দিত। যাতে আমি কোনো দুশ্চিন্তা না করি। এখন আমায় কে অভয় দেবে। কে বলবে দাদা আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন। আমার ভরসার জায়গা ছিল বুলবুল। অনন্য বুলবুল ... বুলবুল ছিলেন একজন মুত্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার সময় থেকেই আমরা একসাথে ছিলাম। যুদ্ধের পর ও প্রখ্যাত শিল্পী বশির আহমেদের গানে গিটার বাজাত। আমিও থাকতাম সে অনুষ্ঠানে। সে সময় বুলবুল ছবিতেও গিটার বাজাত। চলচ্চিত্র নিমার্তা সত্যজিৎ দাদার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে যুক্ত ছিল। আমাদের পর দেশীয় সংগীতে নতুন মাত্রা যোগ করেন বুলবুল। বিশেষ করে ছবির গানে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। একাধারে ছিল গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। সে সময় তার সুরে সাবিনা, রুনা লায়লার মতো শিল্পীরা ছবিতে গান গেয়ে আলোচিত হন। ও ছিল একজন সুপার ট্যালেন্ট। স্মৃতিতে অমলিন ... প্রথমে ওর বাসা মগবাজারে ছিল। পরে বাসা মিরপুরে নেয়। সে সময় প্রথম ও গাড়ি কিনে। ওই দিনই গাড়ি নিয়ে আমাকে সারা ঢাকা ঘোরায়। এছাড়া বিভিন্ন সময় আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেত। ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতাম। আমাকে বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করত। বন্দিজীবন ... বুলবুল তার বন্দিজীবন নিয়ে সুখী ছিল না। আমাকে বলত, দাদা আপনারা রাস্তাঘাটে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ান। এখানে-ওখানে যান। আমি তো যেতে পারি না। আমার মনে হয় আমি বন্দি। কোথাও যেতে হলে পুলিশ নিয়ে যেতে হয়। কবে স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারব। অমর হয়ে থাকুক ... আমরা সবসময় গুণী মানুষদের মৃত্যুর পর মূল্যায়ন করি। শেষ সময়ে বুলবুলের অনেকেই খবর নেয়নি। এটা নিয়ে অবশ্য ওর আফসোস ছিল না। অভিমানও ছিল না। শুধু বলব, বুলবুল তুমি ভালো থেক ওপারে। আমাদের কাছে তুমি সবসময় স্মরণে থাকবে। তোমার স্থানে তুমিই থাকবে বরণীয় হয়ে।