ভাবমূর্তি সংকটে চিত্র তারকারা

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
এমনিতেই দেশীয় চলচ্চিত্রের নাকাল অবস্থা; দিন দিন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ঠেকেছে ইন্ডাস্ট্রি। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও কিছু তারকার কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে পুরো চলচ্চিত্রের। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত নানা ইসু্যতে নিজেদের ক্যারিয়ারে বড় বিপর্যয় ডেকে আনছেন তারকারা। সময়ের চাহিদা, নাম, যশ-খ্যাতি থাকলেও ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছেন চলচ্চিত্রের কয়েকজন শীর্ষ তারকা। পাশাপাশি সমালোচনার মুখেও পড়তে হচ্ছে কদিন পর পরই। তাদের এমন আচরণে মর্মাহত চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরাও। ক'দিন ধরেই সিনেপাড়ায় বিরাজ করছে অভিযোগ-মামলা-গ্রেপ্তার ইসু্যতে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে দেশ জুড়ে। ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক প্রযোজকের অভিযোগ যখন শীর্ষ খবরে, তখনই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়ে চমকে দিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী। অবশ্য কয়েক ঘণ্টা কারাবাসের পর ছাড়া পান এই অভিনেত্রী। শনিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের করা মামলায় এই চিত্রনায়িকাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। দুপুরে গাজীপুর আদালতে নিয়ে মাহিয়া মাহীর সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালতের বিচারক রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে মাহিয়া মাহীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফেসবুক লাইভে গিয়ে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী সরকার ও তার স্বামী রকিব সরকার মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেছেন, এমন অভিযোগে পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। পুলিশ বাদী হয়ে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে মামলাটি করে। একইদিনে তাদের আসামি করে গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী আরেকটি মামলা করেছেন। এর আগে একাধিক বিয়ে ও স্কেন্ডেল নিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় আসেন মাহী। এদিকে সাবেক দুই স্ত্রী চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলীর অভিযোগ, পুজা চেরীর প্রেমের গুঞ্জনের রেশ কাটতে না কাটতেই সম্প্রতি শাকিব খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রহমত উলস্ন্যাহ নামের এক এক প্রযোজক; যিনি বহুল আলোচিত 'অপারেশন অগ্নিপথ' সিনেমার অন্যতম নির্মাতা। বুধবার বিকালে সশরীরে এফডিসিতে উপস্থিত হয়ে শাকিব খানের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন রহমত উলস্ন্যাহ। সেখানে তিনি অপেশাদার আচরণ, চুক্তিভঙ্গ, দায়িত্বে অবহেলার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির ক্ষতি সাধন ও এক সহপ্রযোজককে ধর্ষণের মতো বিস্ফোরক সব অভিযোগ তুলেছেন। তিন পাতার অভিযোগ জমা দেন রহমত উলস্ন্যাহ। সেই অভিযোগপত্রে তিনি এ-ও জানান, ২০১৮ সালে নাকি অস্ট্রেলিয়া পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শাকিব। ঘটনার পাঁচ বছর হয়ে গেলেও এ বিষয়ে এতদিন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে সাম্প্রতিক অভিযোগ ইসু্যতে বিষয়টি টক অব দ্য ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় প্রযোজকের সঙ্গে বসেছিলেন এ চিত্রনায়ক, মধ্যস্থতায় ছিলেন প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। সমঝোতার চেষ্টা করে তাতে কোনো ফল হয়নি। এরপর ঘনটা মোড় নেয় অন্যদিকে। পাল্টা অভিযোগ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হন শাকিব খান। হঠাৎ করেই শনিবার মধ্যরাতে পুলিশের কাছে যান শাকিব খান। মধ্যরাতে গুলশান থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলাটি নেয়নি। ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। শনিবার রাতে শাকিব খান মামলার উদ্দেশ্যে গুলশান থানায় যান। দেড় ঘণ্টার মতো থানার ভেতরে বসেছিলেন তিনি। এরপর সেখান থেকে বেরিয়েই শাকিব জানান, তাকে থানা থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি আদালতে মামলা করবেন। তার বিরুদ্ধে একটি ভুয়া অভিযোগ আনা হয়েছে বলে শাকিব খানের দাবি। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরমান আলী শরিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, 'শাকিব খান যে ধরনের অভিযোগ করতে এসেছেন তা থানায় নয় আদালতে করতে হবে। এ ধরনের অভিযোগ থানায় নেওয়া সম্ভব না।' শাকিব খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খায়রুল হাসান বলেন, 'যেহেতু এটা কগনিজেবল অপরাধ ছিল, তিনি ইচ্ছা করলে মামলা নিতে পারতেন। কারণ এই ধরনের অভিযোগ সাধারণত থানায় রুজু করা হয়।' এর আগে ২০২১ সালের ৪ আগস্ট প্রায় চার ঘণ্টার অভিযান শেষে বনানীর বাসা থেকে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও তার সহযোগী দীপুকে আটক করের্ যাব। এ সময় পরীমনির বাসা থেকে বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়। ৫ আগস্টর্ যাব-১ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য আইনে পরীমনি ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে। এরপর তৃতীয় দফায় রিমান্ড শেষে শনিবার (২১ আগস্ট) পরীমনিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরী বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন এবং আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন।