সাক্ষাৎকার

সবখানে যেন ভাষা বিকৃতির প্রতিযোগিতা চলছে

চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। একাধারে তিনি অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক। দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'ওরা ১১ জন'-এর প্রযোজক এই মুক্তিযোদ্ধা। আজ তার শুভ জন্মদিন। শহীদ দিবস, বর্তমান ব্যস্ততা ও সমসাময়িক নানা বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে ...

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা
একই সঙ্গে গবের্র ও বেদনারও বটে ... জন্ম আমার ধন্য। একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে আমার জন্ম হয়। একই দিন মহান ভাষা দিবস। একজন বাঙালি হিসেবে এটা একই সঙ্গে আমার জন্য গর্বের এবং বেদনাদায়কও। প্রতিবছর জন্মদিনটি যেভাবে পালন হয়, এবারও সেভাবেই হবে। এদিন অনেকেই আসেন আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে। জীবনের এই সময় এসেও সবার ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করে। তবে এই প্রথম ভেবেছিলাম, এবারের জন্মদিনটি সেভাবে পালন করব না। কারণ, দুদিন পর আমি সিঙ্গাপুর যাচ্ছি। কিন্তু ছেলে ও স্ত্রীর জন্য সেটা আর না করতে পালাম না। একুশ এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতা হয়ে গেছে ... আজ একুশে ফেব্রম্নয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো জাতি নেই যে, ভাষার জন্য আন্দোলন করে প্রাণ দিয়েছে। একমাত্র বাংলাদেশই সেটা পেরেছে। অথচ এখন লজ্জা লাগে। আবরণের মতো শুধুই আনুষ্ঠানিকতা হয়ে গেছে একুশ। ফেব্রম্নয়ারি এলে বাংলা ভাষার প্রতি দরদ দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু বছরের এই একটি মাত্র মাসেও বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নই। এখনো ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, দোকানের সাইনবোর্ডে এমনকি অফিস-আদালতেও শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে না। সর্বত্র ভাষা বিকৃতির প্রতিযোগিতায় শহীদ দিবসের তাৎপর্য নষ্ট হচ্ছে বলে আমি মনে করি। শহীদদের রক্তে কেনা এ দেশের ভাষা বাংলা হলেও উচ্চ আদালতে বিচার কাজ এখনো ইংরেজিতে হয়। অথচ সর্বস্তরের বাংলা ভাষা প্রচলনে ১৯৮৭ সালে একটি আইন করা হয়েছে। লজ্জা লাগে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে ... আমরা বাংলা ভাষা ব্যবহার না করে ইংরেজি প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। সঠিকভাবে বাংলা না বলতে পারলেও ইংলিশ বলার কারণে আমরা সন্তানদের নিয়ে গর্ব করি। প্রতিনিয়ত কথা-বার্তায় কিছু ইংলিশ, কিছু বাংলা ব্যবহার করে একদম জগাখিচুরি ভাষা ব্যবহার করি। আমি নিজেও এই অপরাধ থেকে মুক্ত নই। তবে, অন্তত দুঃখের বিষয় যে, আজকাল রেডিও-টিভিতে ভাষার বিকৃতি হচ্ছে। এই প্রজন্মের তরুণরা রেডিও-টেলিভিশনসহ সব মাধ্যমে দুর্বল বাংলা কিংবা ইংরেজি ভাষা মিশিয়ে কথা বলে এক বিকৃত বাংলিশ ভাষা চালু করেছে। নাটক-চলচ্চিত্রের সংলাপেও বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে আমাদের জীবন এমনভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যাতে লজ্জা করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে। নিজ ভূমিতে বাংলা আজ পরবাসী ... আমি মনে করি, নিজ ভূমিতে বাংলা আজ পরবাসী। তাই ভাষা বিকৃতি রোধ করার জন্যই দেশ, সরকার, বিদ্যায়তন এবং পরিবারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে মহান মাতৃভাষা চর্চা, প্রশিক্ষণ ও সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে, বিদ্যায়তনগুলোতে শুদ্ধ ভাষা প্রয়োগ ও বানান পদ্ধতি এবং উচ্চারণরীতি প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে তরুণ প্রজন্ম বাংলা ভাষার বিকৃতির চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে যাবে। কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে ... চলচ্চিত্রে অভিনয় করছি না অনেকদিন হলো। দুই বছর আগে 'মায়া মসনদ' নামের একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলাম। এতে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। কাজটি শুরুর আগে তারা আমার সঙ্গে ধারাবাহিকটি নিয়ে যে আগ্রহ ও প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছিলেন, এতে আমি রাজি হয়ে যাই। কিন্তু এই নাটকে আমি মাত্র ৫-৬ দিন কাজ করেছিলাম। এরপর তাদের আর কোনো খবর নেই। এক সময় দেখলাম, এটি টিভিতে প্রচার হচ্ছে। দেখলাম অভিনয়ে চিত্রনায়ক সোহেল রানা নামটিও ব্যবহার করছে। আমার সঙ্গে ফের যোগাযোগ না করলেও তারা নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে, এটা আমার কাছে ভালো লেগেছে।