সাক্ষাৎকার

জিনাত অত্যন্ত মিশুক ছিলেন

ফেরদৌসী মজুমদার- মঞ্চ ও টিভি নাটকের খ্যাতিমান অভিনেত্রী। চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। মঞ্চে নাট্যদল থিয়েটার দিয়ে তার অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয়। বরাবরই ভারিক্কি, রাগী ও অভিমানী মেজাজের চরিত্রে অভিনয় করে এসেছেন। 'সংশপ্তক' নামের ধারাবাহিক নাটকে 'হুরমতি' চরিত্রের জন্য ব্যাপক আলোচিত তিনি। এই অভিনেত্রীর চলমান দিনযাপন, মঞ্চনাটক প্রভৃতি নিয়ে কথা বলেছেন মাতিয়ার রাফায়েল

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটা মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন- সেটার কী খবর? সিনেমাটি তো রিলিজ পায়নি- এ নিয়ে কী আর কথা বলব। তবে ছবিটার পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে এখন। আগে ছবিটা মুক্তি পাক তার পরেই বরং ছবিটি নিয়ে কথা বলি। তবে ছবিটি সম্পর্কে আগাম কথা বলার জন্যও নিষেধ আছে ডিরেক্টরের। বিটিভির জন্মলগ্ন থেকেই একসঙ্গে কাজ করেছেন জিনাত বরকত উলস্নাহর সঙ্গে। কেমন দেখেছেন তাকে? আমি তার সঙ্গে কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছি। সেই সুবাদে তাকে আমি যতটুকু বুঝেছি তিনি অত্যন্ত মিশুক মানুষ ছিলেন। খুব সহজেই সবার সঙ্গে আপনজনের মতো কথা বলতে পারতেন। তবে তার সঙ্গে যতটুকু যোগাযোগ ছিল সেটা অভিনয় করতে গিয়েই। অভিনয়ের বাইরে তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হতো না। সে কারণে তাকে নিয়ে আমার স্মৃতিচারণ করার মতো বলার কিছু নেইও আসলে। এর দু'দিন আগেই চলে গেলেন সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী! এটা খুবই খারাপ লাগার মতো। তাকে আমরা একজন ভালো চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেই জানতাম। যেমন ভালো কাহিনীকার ছিলেন তেমন ভালো পরিচালকও ছিলেন। বিটিভির মহাপরিচালক হিসেবেও যখন তাকে পাই তখনও তাকে অত্যন্ত সদালাপী ভালো মানুষ হিসেবে দেখেছি। বর্তমানে দেশের মঞ্চ নাটকের পরিস্থিতি কেমন মনে করেন? আমি তো এখন আর আগের মতো মঞ্চপাড়ায় যাই না। অনেক দিন ধরেই শিল্পকলা একাডেমিতে যাই না, মহিলা সমিতিতেও যাই না। সে কারণে আমি বলতেও পারব না ওখানটায় বর্তমান মঞ্চ নাটকের অবস্থা এখন কেমন হচ্ছে। যখন নিজেদের কোনো নাটক মঞ্চে ওঠে তখনই ওই এলাকায় যাওয়া হয়। এছাড়া অন্যান্য সময়ে সেদিকে যাওয়া হয় না। নতুন কোনো মঞ্চ নাটক আনছেন? এই মুহূর্তে নতুন কোনো মঞ্চনাটক আনার বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে 'লাভ লেটার' নিয়ে আবারও মঞ্চে আসছি। কারণ, এটাতে যে পাঠ্যাভিনয় করেছি তাতে দর্শকের বিপুল ভালোবাসা পেয়েছি। এখন নতুন কোনো নাটক আনার ইচ্ছে নেই। আপাতত আমরা এই নাটকটিই কন্টিনিউ করতে চাই। এই বয়সে এসেও যে শিল্পের সঙ্গে বসবাস করছি এটাই অনেক। এভাবেই বাকি দিনগুলো পার করতে চাই। এখনকার টিভি নাটক নিয়ে কিছু বলবেন? আমি তো বেশ কয়েক বছর ধরেই আর টিভি নাটকের সঙ্গে নেই। মাঝে মাঝে বিশেষ দিবস উপলক্ষ ছাড়া কোনো নাটকই করা হয় না। তাও নাটকটি পছন্দ হলেই করি। নয়তো একেবারেই না। সে কারণে এখনকার টিভি নাটক সম্পর্কেও আমার কোনো ধারণা নেই। এখনকার কারও নাটকও দেখা হয় না আমার। এর মধ্যে তো আপনার বইও প্রকাশ পেয়েছে! লেখা আমার কাছে নেশার মতো হলেও সে অর্থে আমি কিন্তু পেশাদার লেখক নই। মন যখন সাড়া দেয় তখনই আমার মনের ভাবনাগুলো লিখে রাখি। সম্প্রতি 'খুঁজে পেতে' নামের যে বইটা প্রকাশ পেয়েছে সেটা সে রকমই অনুভূতি নিয়ে লেখা। এ লেখাগুলোর মধ্যে যেমন আনন্দ আছে, তেমন বেদনাও আছে। এতে আমার স্কুলের কথা লিখেছি। এক কথায় অটোবায়োগ্রাফিক্যাল এই বইটির সঙ্গে আমার অনেক মিশ্র অনুভূতি জড়িয়ে আছে। জীবনে আর কোনো অপ্রাপ্তি আছে? আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার পাওয়ায় আমার প্রাপ্তির ভান্ডার তো এমনিতেই পূর্ণ। এতে আমি গর্বিত। তবে এই পুরস্কার তো এমনি এমনিতে পাইনি- মানুষ আমাকে ভালোবাসে বলেই এই পুরস্কার পেয়েছি। তাই সব পুরস্কার, সম্মাননার চেয়ে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষের ভালোবাসা। এই ভালোবাসাই হচ্ছে আমার জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার এবং এই ভালোবাসার শক্তিতেই আমি আমার প্রাপ্তির ভান্ডারকে স্বার্থক মনে করি। ফলে জীবন নিয়েও আমার কোনো আক্ষেপ নেই, আফসোস নেই। এ জীবনে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।