চোখের জলে টেলিসামাদকে বিদায়

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
বিএফডিসিতে গতকাল দুপুরে টেলিসামাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়
সহকর্মীদের কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন 'হাসির ফেরিওয়ালা' খ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা টেলিসামাদ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রোববার বেলা ১১টায় চলচ্চিত্রের শক্তিশালী ও জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলিসামাদের মরদেহ আনা হয় এফডিসিতে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই মরদেহ বহনকারী গাড়ি এসে পৌঁছায়। দীর্ঘদিনের সহকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ এসেছিলেন তাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে। তবে টেলিসামাদের শেষযাত্রায় চলচ্চিত্রের নতুন প্রজন্মের কাউকে দেখা যায়নি। টেলিসামাদের জানাজায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এসে পৌঁছান দুপুর সোয়া ১২টায়। মন্ত্রী আসার পরই শুরু হয় জানাজা। এরপর টেলিসামাদের মরদেহ নিয়ে পরিবার রওনা করে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে। টেলিসামাদের জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক ফারুক, চিত্রনায়ক আলমগীর, আলী রাজ, অমিত হাসান, সম্রাট, চিত্রনায়িকা অঞ্জনা, অভিনেত্রী নাসরিন, সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর, রফিকুল আলম, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানসহ কয়েকজন পরিচালক ও প্রযোজক। তবে এফডিসিতে টেলিসামাদের জানাজায় এ প্রজন্মের কোনো নায়ক-নায়িকা কিংবা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দেখা যায়নি। জানাজা শেষে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, 'টেলিসামাদ চার দশক ধরে অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্রকে আলোকিত করেছেন। তার মতো শিল্পীর মৃতু্যতে চলচ্চিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।' জানাজা শেষে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। টেলিসামাদকে স্মরণ করে নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, 'টেলি ভাই যেমন বড় মাপের শিল্পী ছিল ঠিক তেমনি বড় মনের মানুষ ছিল। কখনো তাকে রাগ করে কথা বলতে দেখিনি। আলস্নাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুক।' চলচ্চিত্র অভিনেতা আলী রাজ স্মৃতিচারণ করেন টেলিসামাদকে নিয়ে। তিনি বলেন, 'আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অত্যন্ত উঁচু মানের একজন শিল্পী ছিলেন টেলিসামাদ। কমেডিয়ান টেলি ভাই ছিলেন একজন জাত শিল্পী।' টেলিসামাদকে নিয়ে বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী নাসরিন। তিনি বলেন, 'আমার প্রথম চলচ্চিত্র টেলি ভাইয়ের সাথে। সবসময় খবর রাখতেন আমাদের। তিনি আমার সম্পর্কে বিয়াইন হন। তার এই চলে যাওয়া সত্যি অনেক কষ্টের। আমরা একে একে আমাদের বট বৃক্ষদের হারাচ্ছি।' আবার জানাজায় তরুণ প্রজন্মের তারকারা উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেউ কেউ। আক্ষেপের স্বরে চিত্রনায়ক ফারুক বলেন, 'চলচ্চিত্রে প্রত্যেক কলাকুশলী একে অপরের পরিপূরক। প্রত্যেক শিল্পীর জন্য প্রত্যেকের প্রতি একটা অনুভূতি থাকা প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যেকের সাথে সমন্বয় থাকলে এই চলচ্চিত্রকে একসাথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব কিন্তু যেখানে একজন মানুষের মৃতু্য হলে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন না, তারা কীভাবে চলচ্চিত্রের হাল ধরবেন!' জানা গেছে, এফডিসিতে আনার আগে তিন দফায় টেলিসামাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গুণী এই অভিনেতার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাকে মুন্সীগঞ্জের পারিবারিক গোরস্তানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে। উলেস্নখ্য, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে হৃদরোগসহ নানা জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন টেলিসামাদ। তাকে প্রায়ই হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রম্নত তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন অবস্থা আরও খারাপ হলে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই কৌতুক অভিনেতাকে লাইফ সাপোর্টে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। গত শনিবার দুপুর দেড়টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলেসহ অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। দুই মেয়ে সোহেলা সামাদ ও সায়মা সামাদ ঢাকায় এবং ছেলে সুমন সামাদ যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।