এফডিসিতে শুটিং ব্যয় কমানোর উদ্যোগ

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
মাসের পর মাস খালি পড়ে থাকে বিএফডিসি বা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন- যাকে সংক্ষিপ্ত আকারে বলা হয় এফডিসি। সেখানে হয় না সিনেমার শুটিং। এক সময় যার শুটিং ফ্লোরের শিডিউল পেতে হিমশিম খেতেন পরিচালক-প্রযোজকরা। শুটিংয়ের লাইট-ক্যামেরায় আলোকিত থাকত। এমনও দিন গেছে, অর্ধডজন সিনেমার শুটিং একসঙ্গে চলেছে। সেই ফ্লোরগুলো এখন বেকার। মাঝে মাঝে সেখানে টিভি চ্যানেলগুলোর নানা আয়োজনের শুটিং হয় কিন্তু সিনেমার শুটিং হয় কালেভদ্রে। ঝরনা স্পট, ক্যান্টিন চত্বর, গার্ডেন, মান্না ডিজিটাল কমপেস্নক্স চত্বর কিংবা কড়ইতলা- এক সময়ে এ জায়গাগুলো শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক আর কলাকুশলীদের পদচারণায় গমগম করত। এখানে আবার প্রিয় তারকার শুটিং দেখতে আসা উৎসুক মানুষের ভিড় সামলাতে মূল ফটকে নিরাপত্তাকর্মীরা হিমশিম খেতেন- যা এখন কেবলই অতীত। সারা বছর না হোক আগামী কয়েক মাস পরই ঈদ। ঈদের আগের এ সময়টাতেও উৎসবের সিনেমার শুটিংয়ে এফডিসি সরগরম থাকার কথা। কই! যে ছবিগুলো ঈদে মুক্তির ঘোষণা দিয়ে শুটিংয়ে নেমেছে সে ছবিগুলোর শুটিং এফডিসিতে যেন ছিটেফোঁটাও নেই! কেন এফডিসি থেকে শুটিং বিমুখতা? প্রশ্ন রাখলে চলচ্চিত্রের লোকজনের মুখ থেকে একবাক্যে উত্তর এসেছে এফডিসিতে শুটিং করাটা ব্যয়বহুল। ফ্লোর ভাড়া থেকে শুরু করে ক্যামেরা, লাইট, সম্পাদনা, কালার গ্রেডিংয়ে যে খরচ, বাইরে তা অনেক কম, সুযোগ-সুবিধাও অনেক বেশি। তাই এফডিসির বাইরে কাজ করতে আগ্রহ বেশি তাদের। এদিকটা বিবেচনা করে চলচ্চিত্রের এ আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত এফডিসিতে কোলাহল ফেরাতে শুটিংয়ের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে, চলচ্চিত্র নির্মাণে শুটিংয়ের যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা ভাড়ার হার পরীক্ষমূলকভাবে ৬ মাসের জন্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। বছরের শুরুতেই এফডিসির পরিচালক (প্রকল্প) মো. রেজাউল হকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে জানানো হয় বিষয়টি। প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১ ও ৬ নম্বর ফ্লোর সেট নির্মাণ ও শুটিংকালীন ভাড়া ছিল যথাক্রমে ২৫৫০ ও ৬৫০০ টাকা। নতুন বিজ্ঞপ্তির ফলে এ ভাড়া কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২০০০ ও ৫০০০ টাকা। ২ নম্বর ফ্লোর (এসি ছাড়া) সেট নির্মাণ ও শুটিংকালীন ভাড়া ছিল যথাক্রমে ৫১০০ ও ১৩০০ টাকা। নতুন বিজ্ঞপ্তির ফলে এটি কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৪০০০ ও ৯০০০ টাকা। ২ নম্বর ফ্লোর (এসিসহ) সেট নির্মাণ ও শুটিংকালীন ভাড়া ছিল যথাক্রমে ৫১০০ ও ১৮৫৪০ টাকা। নতুন বিজ্ঞপ্তির ফলে এটি দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৪০০০ ও ১১৫০০ টাকা। তথ্য অনুযায়ী, সেট নির্মাণের সময়ে এফডিসির খালি জায়গা, ছাদ ও সুইমিংপুলের ভাড়া ছিল ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা- যা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ইনডোরে রেড ড্রাগন ক্যামেরার শুটিং ভাড়া ছিল প্রতি শিফট ৬,১২০ টাকা। এখন সেটি করা হয়েছে ৩০০০ টাকা। একই ক্যামেরায় আউটডোরে শুটিংয়ে আগে ছিল ৬৬৩০ টাকা। এখন সেটি করা হয়েছে ৩৫০০ টাকা। একই ক্যামেরায় দেশের বাইরে শুটিং করতে আগে লাগত ১৯,৫০০ টাকা, এখন সেটি কমিয়ে ১০০০০ টাকা করা হয়েছে। সনি ক্যামেরায় ইনডোরে আগের শুটিং ভাড়া ছিল ৫,১০০ টাকা, এখন ২,০০০। একই ক্যামেরায় আউটডোরে শুটিং ভাড়া ছিল ৫,৬১০ টাকা; এখন ২,৫০০ টাকা। এ ছাড়াও দেশের বাইরে এ ক্যামেরায় শুটিং প্রতিদিন গুনতে হতো ১৬,৫০০ টাকা। এখন ১০ হাজার টাকা। সনি ক্যামেরায় ইনডোরে আগের শুটিং ভাড়া ছিল ৫,১০০ টাকা এখন সেটা করা হয়েছে ২,০০০ টাকা। একই ক্যামেরায় আউটডোরে শুটিং ভাড়া ছিল ৫,৬১০ টাকা। এখনে সেটা করা হয়েছে ২,৫০০টা। এছাড়াও দেশের বাইরে এই ক্যামেরায় শুটিং প্রতিদিন গুনতে হতো ১৬,৫০০ টাকা। এখন সেটা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ডিজিটাল সম্পাদনা মেশিন চার্জ (প্রতি শিফট) আগে ছিল ২১০০ টাকা। এখন সেটা ১৫০০ টাকা। ডিজিটাল কালার গ্রেডিং (প্রতিশিফট) আগে ছিল ৩১৫০ টাকা। এখন সেটা কমিয়ে হয়েছে ২৫০০ টাকা। এই ছাড়াও শুটিংয়ের নানা যন্ত্রাংশের ভাড়া কমানোর পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের শুটিংয়ে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ভাড়া ছাড় দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও কিছু শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে * কোনো যন্ত্রপাতি এফডিসি ব্যতিত অন্য কোনো উৎস থেকে এনে ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে শিফটভিত্তিক বিদু্যৎ বিল প্রযোজ্য হবে। * সুটিং স্পটে বা সুটিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো ল্যাম্প বা বাল্ব ফেটে গেলে/হারানো গেলে/খোঁয়া গেলে সংশ্লিষ্ট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে আদায় যোগ্য তবে ফিউজ হলে যৌক্তিকতা নির্ণয় সাপেক্ষে বিলের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। * সব ধরনের ভাড়া/বরাদ্দ শিডিউলের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। * প্রচলিত অন্যান্য নিয়ম কানুন অপরিবর্তিত থাকবে। * সুটিং ও পিকনিক ব্যতিত পর্যটকরা কক্ষ ব্যবহার করলে সুটিংয়ের নির্ধারিত রেট প্রযোজ্য হবে। * যে সব যন্ত্রপাতি/যন্ত্রাংশের সেবার হার এ রেট কার্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়নি তা পূর্বের ন্যায় বহাল থাকবে। * বিএফডিসির বাহিরে নির্মিত চলচ্চিত্রের অনাপত্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে বিএফডিসি বরাবর ২০,০০০/- টাকা অনাপত্তি ফি জমা দিতে হবে। * করপোরেশনের ফ্লোর, চত্ব্বর, বিভিন্ন কক্ষ, স্টোর রুম, মেকাপ রুমসহ স্থাবর স্থানে বা কোনো সুটিং স্পটে সুটিং ও সেট নির্মাণ করলে ওই স্পটের ভাড়া সার্ভিস চার্জের আওতায় থাকবে। ক্যামেরা এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, গ্যাস, বিদু্যৎ, পানি সার্ভিস চার্জের আওতার বহির্ভূত থাকবে * রকমারি বিধিমালা মোতাবেক ভ্যাটসহ অন্যান্য কর্তন প্রযোজ্য হবে। * সেবার হার পুনর্নির্ধারণ, পুনঃমূল্যায়ন, সংযোজন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করেন।