নির্মাতা আদনান আল রাজীবের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই প্রেম করছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। শোবিজাঙ্গনে সেই খবর কারোই অজানা নয়। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য দুজনের কেউই কথা বলতে চাননি। সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে দুজনেই মুখে কুলুপ আঁটেন। এড়িয়ে যেতেন প্রেমের বিষয়টি। এবার সব গুঞ্জনকে সত্যি করে সেই সম্পর্ককেই বিয়েতে রূপ দিচ্ছেন এই জুটি। চলতি মাসেই রাজীবের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছেন মেহজাবীন। অভিনেত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকেই জানা
গেছে সেই তথ্য।
সবকিছু ঠিক থাকলে, আগামী ২৪ ফেব্রম্নয়ারি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারবেন মেহজাবীন-রাজীব। এর একদিন আগে ২৩ ফেব্রম্নয়ারি সম্পন্ন হবে গায়ে হলুদ। ঢাকার অদূরের এক রিসোর্টে নাকি চলছে বিয়ের আয়োজন।
রাজীবের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে শুরু থেকেই নীরব ছিলেন মেহজাবীন। বিয়ের খবরেও একইরকম নিশ্চুপ। তবে দেশের একটি শীর্ষ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। ২০১৯ সালে রাজীবের সঙ্গে ঢাকার একটি বিপণিবিতানে মেহজাবীনের হাত ধরাধরি করে হাঁটার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরই তাদের সম্পর্কের গুঞ্জন ছড়ায়। পরবর্তী সময়ে এই জুটিকে কখনো কক্সবাজার আবার কখনো দেশের বাইরেও ঘুরতে দেখা গেছে।
২০০৯ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় সেরা সুন্দরী নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে বিনোদন জগতে যাত্রা শুরু করেন মেহজাবীন চৌধুরী। এরপর থেকেই নাটকে নিয়মিত অভিনয় করে আসছেন এই লাস্যময়ী। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো বড়পর্দায় মুক্তি পেয়েছে মেহজাবীনের সিনেমা 'প্রিয় মালতী।' এতে দারুণ অভিনয় করে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। গত ১৯ জানুয়ারিতে শেষ হওয়া ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বেস্ট ফুল লেন্থ অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে শঙ্খ দাসগুপ্ত পরিচালিত সিনেমাটি। খুব শিগগিরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে মেহজবীন অভিনীত প্রথম সিনেমা 'সাবা'। এছাড়া, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে তার নতুন ওয়েব ফিল্ম 'নীল সুখ'।
বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় মেহজাবীন। 'বাংলালিংক', 'সেভেনআপ', 'ভাটিকা', 'ম্যাগি', 'ওমেরা এলপিজি গ্যাস', 'ড্যানিস টি', 'প্রাণ চুইংগাম', 'গস্ন্যাক্সোজ-ডি', 'উজালা পেইন্টস' ও 'আয়ুস'র বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন তিনি। এছাড়া, নাচেও বেশ দক্ষতা রয়েছে মেহজাবীনের। বিভিন্ন টেলিভিশন ও করপোরেট অনুষ্ঠানে নাচ করেন তিনি। এক কথায় বলতে গেলে মেহজাবীন সর্বগুণে গুণান্বিত।
অন্যদিকে, আদনান আল রাজীব দেশের জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮৭ সালের ১১ মে জন্মগ্রহণ করেন আদনান আল রাজীব। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের একটি স্কুলে পড়াশোনা করেন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশে ফিরেন রাজীব। দেশে ফেরার পর মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত 'ব্যাচেলর' সিনেমা দেখে মুগ্ধ হন তিনি। তখন বিজ্ঞাপন-নাটক-সিনেমা নির্মাণের বিষয়ে কোনো ধারণাই ছিল নাু তার। তবে কাজ করার সুযোগ খুঁজছিলেন। রাজীবের বোন ফারুকীর সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেন। কেবল তাই নয়, তার বোন এক বন্ধুর সহযোগিতায় পরিচালক ফারুকীর সঙ্গে সাক্ষাতের
ব্যবস্থা করে দেন।
এরপর নির্মাতা হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু হয় আদনান আল রাজীবের। জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিক '৬৯'-এ ফারুকীর সহকারী পরিচালক হিসেবে রাজীবের প্রথম কাজ। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর ফারুকীর সঙ্গে আঠারমতো লেগে থেকে সরাসরি কাজ করেন। সেই অভিজ্ঞতা জানিয়ে রাজীব বলেন, 'এটি ছিল অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই পাঁচ বছরে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, ফিকশন প্রযোজনার জন্য পরিচালক হতে চাই, নাকি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের জন্য।'
২০০৯ সালে আদনান আল রাজীব নির্মাণ করেন 'উচ্চতর পদার্থ বিজ্ঞান'। এটি তার নির্মিত প্রথম নাটক। দেশ টিভিতে নাটকটি প্রচারের পর দারুণ সাড়া পান তিনি। একই বছর বিজ্ঞাপন নির্মাতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেন রাজীব। এটি ছিল 'ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফার'
-এর বিজ্ঞাপন।
আদনান আল রাজীবের পরের গল্প কেবলই সাফল্যে ভরা। তার নির্মিত উলেস্নখযোগ্য বিজ্ঞাপনের তালিকায় রয়েছে- বাংলালিংক, গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল (বেশ কয়েকটি), ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, গস্ন্যাক্সোজ ডি, প্রাণ ওয়াটার, স্যামসাং, সেন্টার ফ্রেশ, মোজো প্রভৃতি। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারতে ছড়িয়েছে রাজীবের সুখ্যাতি। এক্সপ্রেস মানি ট্রান্সফারের বিজ্ঞাপন যেমন বানিয়েছেন, তেমনি আইসিআইসিআই ব্যাংকের বিজ্ঞাপনও তার হাতে নির্মিত হয়েছে। দেশের জন্য নির্মিত বিজ্ঞাপনে ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান যেমন অভিনয় করেছেন, ভারতের বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে রোহিত তিওয়ারি, সালিনা প্রকাশের মতো তারকাদের।
আদনান আল রাজীবের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। তার প্রযোজিত সিনেমা 'মালতী'। এ সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহজাবীন চৌধুরী। এর মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হয় তার। বিশ্বের বিভিন্ন উৎসবে পুরস্কার জয়ের পর চলতি বছরে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় সিনেমাটি।