আগামী শুক্রবার থেকেই দেশের প্রেক্ষাগৃহে ভিনদেশি সিনেমা

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০১৯, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
'কিডন্যাপ' ছবির দৃশ্যে দেব-রুক্মিনী
দেশীয় চলচ্চিত্র নিয়ে ক্রমেই হতাশা বাড়ছে দর্শক এবং সিনেমাহল মালিকদের মনে। নকল গল্প, সস্তা-নাচ ও অভিনয় এবং নামমাত্র শিল্পীদের নিয়ে নির্মিত বেশির ভাগ সিনেমাই মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, সময়ের শীর্ষ চাহিদাসম্পন্ন তারকাদের ছবিও প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারছে না। ফলে, মাসের পর মাস লোকসান গুনতে হচ্ছে লগ্নিকারক এবং প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের। লোকসানের ভয়ে কোনো ছবি মুক্তি দিতে সাহস পাচ্ছেন না প্রযোজকরা। ফলে, বাধ্য হয়েই বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছেন তারা। চলতি মাস থেকেই নিয়মিত বিদেশি তথা ভারতীয় ছবি প্রদর্শন করছেন হলমালিকরা। দেশের চলচ্চিত্রশিল্প বাঁচাতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদর্শক সমিতির নেতারা। চলতি বছরে বেশ কয়েকটি তারকাবহুল ছবি মুক্তি পেলেও এখন পর্যন্ত আহামরি লাভের মুখ দেখেনি কোনো ছবি। চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্যরা আশা করেছিলেন, এবার ঈদে হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে চলচ্চিত্রশিল্প। কিন্তু ঈদের ছবিও সাড়া জাগাতে পারছে না দর্শকমহলে। এবারের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে 'পাসওয়ার্ড', 'নোলক' ও 'আবার বসন্ত'। প্রথম দুটি ছবি নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন প্রযোজক ও পরিচালকরা। যদিও নকলের অভিযোগে তোপের মুখে পড়েছে 'পাসওয়ার্ড'। দ্বিতীয় সপ্তাহের পর তৃতীয় সপ্তাহেও চলবে ঈদের ছবিগুলোই। কিন্তু এর পর দেশের প্রেক্ষাগৃহে নেই নতুন কোনো ছবি। ঈদুল আজহার আগে দেশি ছবির মুক্তি অনিশ্চিত। তবে মাহি অভিনীত 'অবতার' ছবিটি ১৯ জুলাই মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া নতুন কোনো ছবি মুক্তির খবর নেই। ফলে সংকট দেখা দিয়েছে নতুন ছবির। ছবি সংকটের কারণে ঈদুল আজহার আগেই দেশের প্রেক্ষাগৃহে কয়েকটি ভারতীয় ছবির মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে আগামী সপ্তাহ (শুক্রবার) থেকেই মুক্তি পেতে যাচ্ছে ভারতীয় ছবি 'ভোকাট্টা'। আমদানিতে (সাফটা চুক্তি) বাংলাদেশে 'ভোকাট্টা' মুক্তি দিচ্ছে শাপলা মিডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সেলিম খান বলেন, দেশের সিনেমার সংকটের কারণে বাইরের আমদানির জন্য সিনেমা হল বন্ধের আল্টিমেটাম দিয়েছিল প্রদর্শক সমিতি। আমার প্রযোজিত 'বয়ফ্রেন্ড' মুক্তির মাধ্যমে ওই ঘোষণা তুলে নেয়া হয়। ঈদের পর নতুন ছবির সংকট। সেজন্য কলকাতা থেকে ছবি আমদানি করছি। সেলিম খান আরও বলেন, ৩ জুন তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে 'ভোকাট্টা' বাংলাদেশে মুক্তির অনুমতি পেয়েছি। আগামী রোববার সেন্সর বোর্ডে জমা দেব। সবকিছু ঠিক থাকলে ২১ জুন বাংলাদেশে মুক্তি পাবে 'ভোকাট্টা'। কলকাতার এই ছবির বিনিময়ে শাপলা মিডিয়ার 'বয়ফ্রেন্ড' কলকাতায় যাচ্ছে। সেখানে ছবিটি নিচ্ছে এসকে মুভিজ। প্রায় ৫ মাস পর আবারও ঢাকা-কলকাতার সিনেমা বিনিময় শুরু হচ্ছে। গেল ৪ জানুয়ারি সর্বশেষ জয়া আহসান অভিনীত কৌশিক গাঙ্গুলীর বহুল প্রশংসিত ছবি 'বিসর্জন' আমদানিতে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছিল। জানা যায়, অশোক ধানুকা প্রযোজিত কলকাতায় 'ভোকাট্টা' মুক্তি পাবে ২৮ জুন। ছবিটি পরিচালনা করেছেন উড়িষ্যার পরিচালক রমেশ রাট। প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওম এবং এলিনা। অন্যদিকে, উত্তম আকাশ পরিচালিত ছবি 'বয়ফ্রেন্ড'-এ অভিনয় করেছেন তাসকিন রহমান ও সৌমি। বাংলাদেশের পাশাপাশি এ ছবিতে কলকাতার কয়েকজন শিল্পী অভিনয় করেছেন। 'ভোকাট্টা' ছাড়াও বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির অপেক্ষায় আছে একাধিক ভারতীয় ছবি। এরই মধ্যে ইন উইন এন্টারপ্রাইজ আমদানি করেছে 'বচ্চন' নামের একটি কলকাতার ছবি। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন জিৎ ও ঐন্দ্রিতা রায়। ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে ছবিটি মুক্তি পায়। শোনা যাচ্ছে, ঈদুল আজহার আগে মুক্তি দেয়া হবে জিৎ-কোয়েল অভিনীত 'শেষ থেকে শুরু' ও দেব-রুক্মিনী জুটির 'কিডন্যাপ'। দেশি ছবির সংকটের কারণে বিদেশি ছবি আমাদানি ও প্রদর্শনের জন্য গত ১৩ মার্চ আল্টিমেটাম দিয়েছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। সরকার উদ্যোগ না নিলে ১২ এপ্রিল থেকে দেশের সব সিনেমা হল বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছিল সংগঠনটি। পরে ২ এপ্রিল তথ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে সিনেমা হল বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। ঈদের পর ছবির সংকট নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, 'এটা হতাশার খবর এবং চিন্তার বিষয়। কুরবানির ঈদের আগ পর্যন্ত নতুন কোনো ছবি মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে না। ৮ সপ্তাহের এই সময়ে হয়তো দেশের দু-একটা ছবি মুক্তি পেতে পারে। এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। ধীরে ধীরে আমাদের চলচ্চিত্রের অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে। দেশীয় ছবির সংকটের কারণে বিদেশি ছবি আমদানি করা হচ্ছে। সিনেমা হল টিকিয়ে রাখতে বিদেশি ছবির বিকল্প কিছু নেই। তবে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে সুনজর দিতে হবে চলচ্চিত্রের প্রতি। এখন প্রযোজকরা ছবি নির্মাণে সাহস করছে না। ২০০০ সালের শুরু থেকে চলচ্চিত্র ব্যবসায় ধস নামলে প্রসিদ্ধ প্রযোজনা সংস্থাগুলো বন্ধ হতে থাকে। গত এপ্রিল মাসে বন্ধ হলো হিমেল খানের 'মিনা ফিল্মস'। যারা আগ্রহী হয়ে ছবি নির্মাণ করতে আসছেন তারাও নানা সহযোগিতার অভাবে হতাশ হয়ে পড়ছেন।'