মাইলসের মাইলফলক

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯, ১১:৫০

বিনোদন রিপোর্ট
মাইলস পরিবার
চাঁদ তারা সূর্য, জ্বালা জ্বালা, ধ্বিকি ধ্বিকি, ফিরিয়ে দাও, আর কতকাল খুঁজব তোমায়, হ্যালো ঢাকা, পলাশীর প্রান্তর, তুমি নাই, পাহাড়ি মেয়ে- এ রকম অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে দেশের সঙ্গীতপিপাসুদের মনে শক্ত একটা গানের দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ব্যান্ডদল মাইলস। শুধু বাংলা গানই নয়, অনেক ইংরেজি গান দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও খ্যাতি অর্জন করেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এই ব্যান্ডটি। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ গানের দলটি দেখতে দেখতে পার করল ৪০টি বছর। প্রতিষ্ঠার চার দশক পূর্তি উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে মাইলস পরিবার। আজ (সোমবার) রাজধানীর তৌফিক আজিজ খান সেমিনার হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের এ পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির কথা জানানো হবে। মাইলসপ্রধান আহমেদ বলেন, 'প্রতিষ্ঠার ৪০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি আমরা। যার মধ্য দিয়ে তারা সংযুক্ত রাখবেন দেশ-বিদেশের দর্শক ও মিউজিশিয়ানদের। থাকছে শ্রোতাদের জন্য নতুন উপহারও। আমরা দেশ ও বিদেশে মাইলসের একটি ধারাবাহিক কনসার্টের পরিকল্পনা করছি। আমাদের এ জার্নিতে অংশ নেবেন অনেকেই। সেগুলো এখন বলতে চাই না। ১৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে একটি কনসার্টের মাধ্যমে আমাদের এ কার্যক্রম শুরু হবে। আর শেষটা হবে ডিসেম্বরে বড় একটি ওপেন এয়ার কনসার্টের মাধ্যমে। হতে পারে সেটা আর্মি স্টেডিয়ামে। তবে এখনো এসব বিষয় চূড়ান্ত নয়।' মাইলসকে বিবেচনা করা হয় দেশের সবচেয়ে পুরনো, পারফেক্ট ও সফল বাংলা ব্যান্ড হিসেবে। কারণ দলটির মধ্যে সদস্যদের স্থিরতা, অ্যালবাম সংখ্যা, গানের জনপ্রিয়তা এবং স্টেজ শোতে উপস্থিতি- অন্য যে কোনো ব্যান্ডকে ছাপিয়ে গেছে বারবার। যে ধারা অব্যাহত রয়েছে এখনো। মাঝে দলের অন্যতম সদস্য শাফিন আহমেদকে ঘিরে খানিক জটিলতা তৈরি হলেও, সেটি এখন স্থিরতা পেয়েছে। ১৯৭৯ সালে ঢাকায় জন্ম নেয় হামিন আহমেদ, ফরিদ রশিদ, শাফিন আহমেদ ও মানাম আহমেদের ঐতিহ্যবাহী এই গানের দলটি। মাইলসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফরিদ রশিদ ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলেও বাকি ৩ সদস্য এখনো অটুট রয়েছেন। সঙ্গে আছেন ইকবাল আসিফ জুয়েল ও সৈয়দ জিয়াউর রহমান তূর্য। এ চলিস্নশ বছরে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে দলটিকে। ভাঙনের মুখেও পড়তে হয়েছে বেশ কয়েকবার। এমনকি মাইলসের মালিকানা নিয়েও সদস্যদের মধ্যে অনেকবার দলাদলি আর বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আবার দলে ফিরেছেন তারা। মাইলসের শুরুটা হয় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (সাবেক হোটেল শেরাটন) ইংরেজি গান পরিবেশনার মাধ্যমে। ১৯৮২ সালে তাদের প্রথম অ্যালবাম বের হয় ইংরেজি ভাষায়। ওই সময় কিছু লোক বলেছিল যে, মাইলস বাংলা গান রচনা করতে পারে না! মূলত এমন কথার জবাব দিতে গিয়েই মাইলস তাদের প্রথম বাংলা অ্যালবাম প্রকাশ করে। অ্যালবামটির নাম 'প্রতিশ্রম্নতি'। 'চাঁদ তারা'সহ অ্যালবামটির প্রতিটি গান তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি দলটিকে। যে অ্যালবামই বের করেছেন, সেটিই সুপারহিট। শুধু বাংলাদেশেই নয়, গানগুলো সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গেও। মাইলসই প্রথম ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে সিডি অ্যালবাম প্রকাশ করে। ডিস্কো রেকর্ডিং নামে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্রকাশিত এই সিডির নাম 'বেস্ট অব মাইলস'। ১৯৯৬ সালে ভারতে পাঁচটি, আবুধাবি ও দুবাইয়ে দুটি কনসার্ট করে। চ্যানেল এম ও এমটিভি সরাসরি এ কনসার্ট রেকর্ড করে। ১৯৯৬ সালে তারাই প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড ছিল, যারা প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফরে যায়। মাইলসের ইতিহাসে একটি অন্যতম কনসার্ট হয়েছিল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে, যেখানে প্রায় ৬০ হাজার দর্শক হয়েছিল। এই কনসার্টটি আয়োজিত হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে। মাইলসের উলেস্নখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে মাইলস (ইংরেজি-১৯৮২), প্রতিশ্রম্নতি (১৯৯১), প্রত্যাশা (১৯৯৩), প্রত্যয় (১৯৯৬), প্রয়াস (১৯৯৭), প্রবাহ (২০০০), প্রতিধ্বনি (২০০৬), প্রতিচ্ছবি (২০১৫) ও প্রবর্তন (২০১৬)।