নাটকে আগ্রহ হারাচ্ছেন নির্মাতারা

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
অভিনেতা ও নির্মাতা শামীম জামান
টেলিভিশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান নাটক। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে একটি নাটককে সুন্দর করে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করে নির্মাতা। কিন্তু বাজেট স্বল্পতা, সময় সল্পতা, কাজের স্বাধীনতা না থাকাসহ প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে নির্মাতাদের। কার্যতই নাটকে আগ্রহও হারাচ্ছেন তারা। তরুণ নির্মাতারা তো বটেই সিনিয়র নির্মাতারাও আগ্রহ হারাচ্ছেন নাটক নির্মাণে। টেলিভিশন নাটকের গুণী অভিনেতা আবুল হায়াত। অভিনয়ের বাইরে আবুল হায়াত নাটক-টেলিছবিও নির্মাণ করেন। এবার ঈদে চ্যানেল আইয়ের জন্য একটা নাটক নির্মাণ করবেন। তিনি বলেন, 'সত্যি বলতে, এখন নাটক নির্মাণের জন্য সাহস পাই না। একটা সময় নাটকে যে বাজেট ছিল তা দিয়ে ভালোভাবে কাজ করা যেত। কিন্তু এখন সবকিছুর দাম বেড়েছে, কমেছে নাটকের বাজেট। এছাড়া অনেক সময় চ্যানেল থেকে শিল্পী নির্বাচন করে দেয়। যার কারণে মূল গল্প ঠিক রেখে কাজ করা কষ্ট হয়ে পড়ে। কাজের সময় নির্মাতার স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। আবুল হায়াত বলেন, নাটক যখন থেকে এজেন্সির কাছে চলে গেছে তখন থেকেই এই অবস্থা শুরু হয়েছে। এজেন্সিগুলোর কারণে নির্দিষ্ট ক'জন শিল্পীর বাইরে আর কাউকে দেখা যায় না। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমেই এজেন্সিগুলোর হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। এজেন্সিগুলো চ্যানেল নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক ভালো সেসব শিল্পীকে নিয়ে এখন বেশি কাজ হচ্ছে। এছাড়া এজেন্সিগুলো অল্প বাজেটের কাজ বেশি চায়। দীপু হাজরা বলেন, 'নাটক এখন এজন্সিনির্ভর হয়ে গেছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম বাধিয়ে দেন নির্মাতাদের উপর। এর মধ্যে নির্দিষ্ট সময়, তাদের পছন্দের অভিনয়শিল্পী এমনকি গল্পও বলে দেন। সবকিছু মিলিয়ে তারা চান সুন্দর একটি নাটক। কিন্তু একটি নাটক নির্মাণ করতে গিয়ে নির্মাতাকে কতটা ঝামেলা পোহাতে হয় তারা বুঝেন না। দেখা গেল একটি নাটকের জন্য আমি অভিনয়ের জন্য যাকে চাইছি কিন্তু তাকে পাচ্ছি না। ফলে আর্টিস্টের কাছ থেকে আমি মনের মতো কিছু পাচ্ছি না। আগে নাটক নির্মাণের জন্য সময় পেতাম, ভেবে-চিন্তে ভালো একটি কাজ করা সম্ভব হতো। কিন্তু এখন স্বল্প সময়ে নাটক নিয়ে চিন্তা করা যায় না। অন্যদিকে এখন নাটকে চলছে ইউটিউব টক্কর। ইউটিউব চ্যানেলে নির্ধারিত কিছু আর্টিস্টের চাহিদা আছে। কিছু আর্টিস্ট আছে যাদের দিয়ে আমি টেলিভিশন নাটক বানাব কিন্তু ইউটিউবের জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে নাটকে বাজেটের যে অবস্থা তাতে ভালো নাটক নির্মাণ করা কঠিন হয়ে যায়। স্বল্প বাজেটে ভালো মানের নাটক করা কীভাবে সম্ভব বলুন? এসব নানা সমস্যার কারণে কখনো কখনো নাটক নির্মাণে বিরক্ত চলে আসে। মনে হয় সব ছেড়ে দেই। কিন্তু তা সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে আমাদের নাটকের অবস্থা অনুকূলে নয়। এসব নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সঠিক পরিকল্পনা করলে সমস্যাগুলো থাকবে না। ভালো নাটক নির্মাণ হবে। পেশাদারিত্ব বাড়বে।' অভিনেতা ও নির্মাতা শামীম জামান বলেন, 'এটা ঠিক যে নির্মাতারা নাটকে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এর প্রথম কারণ হলো বাজেট কম। কম বাজেটে ভালো নাটক নির্মাণ করা যায় না। নির্মাতা যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবে চ্যানেল সাপোর্ট দিচ্ছে না। নির্মাতা চাচ্ছেন তার নাটকে পাঁচজন অভিনয় শিল্পী লাগবে, চ্যানেল বলে দিচ্ছে তিনজনে করতে হবে। নির্মাতা যাদের চাচ্ছেন চ্যানেল বলে দিচ্ছে তাদের ছেড়ে অন্যদেরকে নিতে। গল্প হিসেবে আমি যাকে চাচ্ছি তাকে পাচ্ছি না। আবার টাকার অভাবে ভালো মানের শিল্পীকে নাটকটি করার প্রস্তাব দিতে পারছি না। তারপরও একটি নাটক শেষ করে দেখা যায় নির্মাতার পকেটে টাকা নেই। সব খরচের পর যখন নির্মাতার হাতে টাকা থাকে না তখন কি অবস্থা হতে পারে? চ্যানেল একটি নাটক নির্দিষ্ট সময়ে প্রচার করে লাভবান হচ্ছে আবার প্রচারিত নাটকটি ইউটিউবে প্রচার করেও বাড়তি আয় করছে। অথচ নাটকের পরিচালক টাকা পাচ্ছে না। ফলে নাটক নির্মাণে আগ্রহ হারাচ্ছে নির্মাতা। মোটামুটি যারা পরিচিত নির্মাতা তাদের জন্য নাটক নির্মাণ কিছুটা সম্ভব হলেও নতুনদের দশা খুব খারাপ। স্বপ্ন নিয়ে নির্মাণে হাত দিলেও তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুনরা যদি নির্মাণে এগিয়ে না আসে তাহলে নাটকের ভবিষ্যৎ কতটা খারাপ হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।