চিত্রনাট্য ছাড়াই নাটক

কী বলছেন তারকারা!

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে টিভি নাটকের গল্প, লোকেশন ও পরিবেশ। বদলে গেছে নাটক নির্মাণের প্রচলিত ধারাও। বেশ কয়েক বছর ধরেই চিত্রনাট্য ছাড়া নাটক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু আগে এর সংখ্যা হাতেগোনা হলেও দিনকে দিন বাড়ছে চিত্রনাট্যহীন নাটক নির্মাণের হার। বলা চলে, এখনকার সিংহভাগ নাটকের শুটিং হচ্ছে চিত্রনাট্য ছাড়া। এতে নাটকের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারকাশিল্পী ও কলাকুশলীরা। বেশ কয়েকজন নির্মাতাও রয়েছেন এই তালিকায়। বিষয়টি নিয়ে যাযাদি'র সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন তারকা ও নির্মাতার। লিখেছেন- মাসুদুর রহমান

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শাহানাজ খুশি
রুনা খান (অভিনেত্রী) 'চিত্রনাট্য ছাড়া নাটক নির্মাণ নতুন নয়। ১০-১২ বছর কিংবা এরও একটু আগে থেকে এর প্রচলন শুরু হয়েছে। এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমার মনে হয়, কমবেশি প্রায় প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীরই চিত্রনাট্য ছাড়া অভিনয় করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমিও করেছি, তবে খুবই কম। হাতেগোনা দুই-একটি হবে। এখন করি না। নাটকে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর নির্মাতা নাটকের স্ক্রিপ্ট পাঠিয়ে দেন। লাইন আপ ঠিক রেখে শুটিং করি। সত্যি বলতে নাটকের চিত্রনাট্যের গুরুত্ব অনেক। এটা যারা বুঝেন, তারা চিত্রনাট্য ছাড়া শুটিং করেন না। শাহানাজ খুশি (অভিনেত্রী) আমি অভিনয়ে আসার আগে চিত্রনাট্য ছাড়া নাটক নির্মাণ কতটা হতো, তা বলতে পারব না। আমি অভিনয় আসার পর খন্ড নাটকের বেলায় দেখা যেত। তাও খুব কম। কিন্তু এখন প্রচুর নাটক নির্মাণ হচ্ছে চিত্রনাট্য ছাড়াই। ধারাবাহিকও অনেক হচ্ছে। খন্ড নাটকের চেয়ে ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে এর বেশি ব্যবহার হচ্ছে বলে আমি মনে করি। আগে চিত্রনাট্য ছাড়া নাটক কিছু করলেও এখন একদমই করি না। আমি ঈদের পর চিত্রনাট্য ছাড়া দুটি ধারাবাহিক নাটকের প্রস্তাব পেয়েছিলাম কিন্তু সসম্মানে ফিরিয়ে দিয়েছি। বসে থাকব, তাও এমন অগোছাল কাজ করতে চাই না। চিত্রনাট্য ছাড়া গুছিয়ে কাজ করা, অভিনয় করা প্রায় অসম্ভব। পেশাদার অভিনয়শিল্পীরা সাধারণত চিত্রনাট্য ছাড়া অভিনয় করতে চান না। হয়ত অনেকেই বাধ্য হয়ে করেন। কিন্তু তৃপ্তি পান না। অভিনয়টা আরও প্রাণবন্ত করতে পারেন না। মানহীন নাটকের অন্যতম কারণ চিত্রনাট্য না থাকা। আনিসুর রহমান মিলন (অভিনেতা) চিত্রনাট্য ছাড়া শুটিং করা সমস্যা হয়। অভিনয়ের গভীরে যেতে বেগ পেতে হয়। চিত্রনাট্য ছাড়া শুটিং করা ঠিক না। এটি নাটকের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন চিত্রনাট্য ছাড়া প্রচুর নাটক নির্মাণ হচ্ছে। চিত্রনাট্য ছাড়া লাইনআপের মাধ্যমে অভিনয় করা হয় অনেক সময়। সেই হিসেবে চরিত্র নিয়ে ব্রিফ করা হয় শুটিংয়ের আগে। আবার কখনো ইম্প্রোমাইজেশন বা তাৎক্ষণিকভাবেও অভিনও করতে হয়। আসলে একেক নির্মাতা একেকভাবে নির্মাণ করেন। তবে চিত্রনাট্য বা লাইনআপ ছাড়া ভালো কাজ হওয়া সম্ভব নয়। চিত্রনাট্য ছাড়া নাটকের শুটিং হলেও তা মানসম্মত হবে না। কিছু ত্রম্নটি থেকে যাবে। ফারজানা ছবি (অভিনেত্রী) আমি তিনটি মেগা ধারাবাহিক নাটকে কাজ করছি। সব কটিরই চিত্রনাট্য আছে। চিত্রনাট্য ছাড়া অভিনয় করা বেমানান। যদিও এখন অহরহ তা হচ্ছে। শিল্প মানে অগোছাল নয়, অগোছালোকে গোছানোই হচ্ছে শিল্প। নাটক হচ্ছে শিল্প। এতে গুছিয়ে কাজ করতে হয়। কাজেই চিত্রনাট্য ছাড়া নাটক নির্মাণ ঠিক নয়। আর অগোছালোর কারণেই নাটক মানহীন হয়ে পড়ছে। হয়ত কখনো প্রয়োজনে চিত্রনাট্য ছাড়া শুটিং হতে পারে, সেটা গল্প-চরিত্রের কারণে। কিন্তু পরিকল্পিকভাবে নয়। সাগর জাহান ( নির্মাতা) চিত্রনাট্য ছাড়া নাটক নির্মাণে কোনো সুবিধা আছে বলে আমার জানা নেই। অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমাদের নাটক বানাতে হয়। এতে যদি প্রি-প্রিপারেশন না থাকে, চিত্রনাট্যকে গুরুত্ব না দেয়া হয়, তা হলে সেই নাটক ভালো হবে কি করে। অভিনয়শিল্পী সেটে এসে সে কিভাবে তার চরিত্রে প্রবেশ করবে। কোন সংলাপের পর কোন সংলাপ বলবে? এতে করে প্রপার শট দিতে পারবে না। এখন হরহামেশায় চিত্রনাট্য ছাড়া নাটক নির্মাণ হচ্ছে। এটা কেন হচ্ছে, তা আমার বোধগম্য নয়। মীর সাব্বির (অভিনেতা) ১৫ বছরের অভিনয় জীবনের অভিজ্ঞতায় আমার মনে হয়, ১৫-২০ জন পরিচালকই নাটক নির্মাণের কৌশল জানে। মিডিয়াতে এত পরিচালক, অথচ তারা নাটক নিয়ে পড়াশোনা না করে, পুরোটা না জেনেই নাটক নির্মাণ করছেন। তাদের অনেকেই আবার কোনো চিত্রনাট্য ছাড়াই নাটকের শুটিং করছেন। যোগ্য পরিচালকের পাশাপাশি ভালো চিত্রনাট্যকারেরও অভাব রয়েছে। নাটকে চিত্রনাট্যের গুরুত্বই হয়ত তারা বুঝেন না। এখন এর মাত্রাটাও বেড়ে গেছে।