নীরব চলচ্চিত্রাঙ্গনে সরব সমিতি

প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিনোদন রিপোর্ট দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্রে মন্দা অবস্থা বিরাজ করলেও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সমিতিগুলো নানা কর্মতৎপরতায় সরব রয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রধান সংস্থা এফডিসিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি সমিতির অফিস। এর মধ্যে প্রযোজক, পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও শিল্পী সমিতির অফিস উলেস্নখযোগ্য। এসব অফিস নিয়মিতই খোলা থাকে। কম-বেশি লোকজনের আসা-যাওয়াও চলে প্রতিনিয়ত। সারা বছর চলচ্চিত্র নিয়ে তেমন কাজ না হলেও সমিতিগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। ইফতার মাহফিল, পিকনিক, বিশেষ দিবস, তারকাদের জন্ম-মৃতু্যবার্ষিকী পালন ও নির্বাচন নিয়ে সচল থাকে সমিতিগুলো। এসব অনুষ্ঠান ও নির্বাচন ঘিরে চলচ্চিত্রকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে এফডিসি প্রাঙ্গণ। কারণ চলচ্চিত্রের কাজ কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটিতে চলচ্চিত্রের লোকজনের যাতায়াত একেবারেই কমে গেছে। কোনো উপলক্ষ ছাড়া তারকারা আসেন না এফডিসিতে। এক কথায় সমিতিগুলোর কারণেই যেন এখনো বেঁচে আছে এ অঙ্গন। নইলে সুনসান নীরবতায় বিরাণভূমিতে পরিণত হতো এফডিসি। তবে চলতি বছরটা নির্বাচনী আমেজেই বেশি সময় পার হচ্ছে। বছরের প্রথমদিকে ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচন। সভাপতি পদে মুশফিকুর রহমান গুলজার ও মহাসচিব পদে নির্বাচিত হন বদিউল আলম খোকন। বছরের ছয় মাস পেরিয়ে জুলাই মাসের ২৭ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নির্বাচন। দীর্ঘ ৮ বছর পর এ নির্বাচনে সভাপতি পদে বিজয়ী হন খোরশেদ আলম খসরু ও সাধারণ সম্পাদক সামছুল আলম। আগামী ২৫ অক্টোবর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে মুখরিত হয়ে উঠেছে এফডিসি। নির্বাচন নিয়ে নানা ঘটনা-রটনা, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থাকলেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এফডিসি থাকে লোকে লোকারণ্য। প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটার শিল্পীরাও এফডিসিতে আসা-যাওয়া করছেন। নির্বাচনে প্যানেল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ২১ পদের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় আছেন সভাপতি পদে মিশা সওদাগর ও মৌসুমী। সাধারণ সম্পাদক পদে ইলিয়াস কোবরা ও জায়েদ খান। দুটি সহ-সভাপতি পদে ডিপজল, রুবেল ও নানা শাহ। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এদিকে ২ অক্টোবরের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করায় তা স্থগিত রয়েছে। নব্বই দশকের শেষ ভাগে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার জোয়ার ও মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় চলচ্চিত্র শিল্প মূলত স্থবির হয়ে পড়ে। এক সময় বছরে শতাধিক ছবি মুক্তি পেলেও এখন সারা বছরে অর্ধশত ছবি মুক্তি পায়। মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোও বরাবরই দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়। চলতি বছরের এ পর্যন্ত 'পাসওয়ার্ড' ছাড়া কোনো ছবিই ব্যবসা করতে পারেনি। প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, 'সিনেমা হল ও ভালো ছবি নির্মাণ বাড়াতে কাজ করতে চাই। পাশাপাশি প্রখ্যাত যে প্রযোজকরা এখন আর কাজ করছেন না, তাদের পুঁজির নিশ্চয়তা দিয়ে ছবি প্রযোজনায় ফিরিয়ে আনতে চাই। একই সঙ্গে সিনেমা হলের প্রজেক্টরের ভাড়া যেন প্রযোজককে বহন করতে না হয় সে উদ্যোগ নিচ্ছি।' চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, 'দিনশেষে ছবি নির্মাণ করতে হবে, এটাই একমাত্র সত্যি। তবে এটা মানতে হবে, সমিতিগুলো কিন্তু নিজেদের বিভিন্ন স্বার্থ রক্ষার জন্য তৈরি হয়েছে। চলচ্চিত্রের সংকট দূর করতে সমিতিগুলোর নিজ নিজ জায়গা থেকে চেষ্টা করতে হবে। সমিতির সদস্যরাই তো চলচ্চিত্রের অংশ।' চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, 'সমিতির কাজ ছবি নির্মাণ করা নয়। সংগঠনের সদস্যদের স্বার্থরক্ষা করা ও সেবা দেওয়া। এরপরও শিল্পী সমিতি চলচ্চিত্রকে ঘুরে দাঁড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। সব সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে শিল্পী সমিতি ও পরিচালক সমিতি বাংলা ছবিকে বাঁচাতে কাজ করছে।' \হবাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, 'সর্বত্র চেষ্টা ভালো। এজন্যই সংগঠন বা সমিতি। কথায় বলে দশের লাঠি একের বোঝা। একক চেষ্টায় সফল খুব কমই হয়। কিন্তু সবাই মিলে চেষ্টা করলে অনেক কঠিন কাজও সফল হয়। তাই সংগঠনের গুরুত্ব আছে। যে জন্যই চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সমিতি রয়েছে। এগুলো চেষ্টা করছে চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনতে কিন্তু নানা কারণে হয়ে উঠছে না।'