সাক্ষাৎকার

বাচ্চুর ফোন নাম্বারটা এখনো রয়েছে আমার মোবাইলে

আইয়ুব বাচ্চু। দেশের সব প্রজন্মের সংগীতপিপাসুদের কাছেই আলোচিত একটি নাম। দেশের ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম এই রকস্টারের প্রথম মৃতু্যবার্ষিকী আজ। গত বছরের এ দিনে সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান তিনি। সেই শোক এখনো যেন কাটিয়ে উঠতে পারেনি সংগীতাঙ্গন। সংগীতের যেকোনো আসরেই আইয়ুব বাচ্চুর প্রসঙ্গ তোলেন তার সহকর্মীরা। গুণী এ সংগীতশিল্পীর প্রয়াণ দিবসে কথা হলো তার কাছের বন্ধু কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে ...

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কুমার বিশ্বজিৎ
বন্ধুহীনা এক বছর ... আমার ফোনে বাচ্চুর ফোন নাম্বারটা এখনো রেখেছি, মুছিনি। এটা রাখছি কেন? ভাবছি হয়তো কোনো বড় আয়োজনে দেখা হবে। তখন সে বলবে, তোরা ফোন করিস। তখন মনে হয়, আসলে সে নেই। কেউ আগে কেউ পরে এভাবেই হয়তো যেতে হবে। এই বয়সটা তার যাওয়ার ছিল না। আমি বলব যে, আলস্নাহ কাকে, কখন, কীভাবে নিয়ে যান, সেটা তো কেউ বলতে পারে না। একটু অসময়ে চলে গেছেন বাচ্চু। সংগীতাঙ্গনে শূন্যতা ... দেখতে দেখতে বাচ্চু চলে যাওয়ার এক বছর হয়ে গেল। বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে তার শূন্যতা রয়ে গেছে। আমার মনে হয় না এ শূন্যতা কখনো পূরণ হবে। আধুনিক সংগীতাঙ্গনে তার অবদান ভোলার নয়। দেশের ব্যান্ডসঙ্গীতকে জনপ্রিয় করেছেন বাচ্চু। তিনি বাজাতেন, গাইতেন, লিখতেন আবার সুরও করতেন। তার প্রায় প্রতিটি গানই জনপ্রিয়। তার গানগুলো মানুষ শোনেন আর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। খুব সাধারণ ... আইয়ুব বাচ্চু শুধু একজন সঙ্গীতশিল্পীই নন, তিনি একজন ভালো মনের খুব সাধারণ মানুষ ছিলেন। তার সঙ্গে যাদের ওঠা-বসা ছিল তারাও আমার কথার সঙ্গে একমত প্রকাশ করবেন নিশ্চয়ই। তিনি খুব সহজেই একজনকে আপন করে নিতে পারতেন। গান দিয়ে যেমন শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছিলেন, ব্যবহারেও তেমনটি ছিলেন। সহজসূলভ আচরণ ছিল তার। গিটারের জাদুকর ... চট্টগ্রামের জুবিলি রোডে বাচ্চু আর আমি পাশাপাশি বাসায় থাকতাম। ঢাকায় আসার পর আমরা তিন-চার বছর একই বাসায় থেকেছি। বাচ্চু তখন প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে গিটার প্র্যাকটিস করত। গিটার কেনা ওর অভ্যাস ছিল। সংগ্রহে ছিল অনেক গিটার। মৃতু্যর কয়েকদিন আগেও একটি গিটার কিনেছিল। বাচ্চুর জীবনের অনেক অধ্যায়ের মধ্যে অন্যতম হলো গিটার। গিটারে যেভাবে সে দক্ষতা অর্জন করে তার সাক্ষী আমি। এমনও হয়েছে, দুজনের একসঙ্গে কোথাও দাওয়াত। আমি দাওয়াতে গেলেও সে গিটার নিয়ে পড়ে থাকত। ওর গিটারে জাদু ছিল। মঞ্চে উঠলেই দর্শক উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতেন। গানের সুরে গিটারে টান দিলেই দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ত। বন্ধুত্বের স্মৃতি... ৪০ বছরের সম্পর্কে আমাদের অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। বয়সে একটু বড় হলেও মিউজিকের কারণে বাচ্চুর সঙ্গে হৃদ্যতা হয়ে যায়। চট্টগ্রামের হাটে, মাঠে, ঘাটে, বিয়েবাড়ি থেকে শুরু করে এমন কোনো জায়গা নেই যে আমরা অনুষ্ঠান করিনি। চট্টগ্রামের অলিগলিতে আমাদের স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। রাত করে ঘরে ফিরতাম। মা রান্না করে আমাদের খাওয়াতেন। মা বলতেন, আমার দুই ছেলে। আমি ঢাকায় চলে আসি বাচ্চুর আগে। ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে ও ঢাকায় চলে এলে আমরা তখন একসঙ্গে থাকতাম। এক খাটেই ঘুমিয়েছি। শেষ দেখা ... মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে শেষবারের মতো আমাদের দেখা হয়। তখন বলল, 'দোস্ত, শেষ পর্যন্ত হয়তো আমাদের একজন আরেকজনকেই কাঁধে নিতে হবে। সেদিন বুঝিনি ও চলে যাবে।'