চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে হাস্যরস

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
'কমলারকেট' ছবির একটি দৃশ্যে মোশাররফ করিম ও জয়রাজ
বিনোদন রিপোর্ট চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হাস্যরস। গল্পের ধারাবাহিকতায় হাস্যরস চরিত্রের অভিনয় বরাবরই দর্শকদের মুগ্ধ করে। গল্পকেও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের চলচ্চিত্রে এক সময় হাস্যরস চরিত্রের কৌতুকশিল্পীদের কদর ছিল। নির্মাতারা তাদের নিয়ে ভাবতেন। হাস্যরসের জন্য অনেক ছবি ব্যবসা সফলও হয়েছে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চলচ্চিত্র থেকে কৌতুকশিল্পীর চরিত্র প্রায় হারিয়ে গেছে। এই সংকটের কারণে সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে কৌতুকশিল্পীদের নাম ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। হাস্যরসের নামে চলচ্চিত্রে এখন যা হচ্ছে তা ভাঁড়ামো বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। চলচ্চিত্রাভিনেতা আলিরাজ বলেন, 'আগে গল্পনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ হতো। সে সব সিনেমায় পরিবার ও সমাজের কথা থাকত। এর মধ্যে সব চরিত্রই গুরুত্ব পেত। কোনো চরিত্রকে অযথা দেখানো হতো না। সে সব গল্পের সিনেমায় দু-একটি চরিত্র থাকত যেমন- রাখাল, বাড়ির চাকর, গ্রামের বন্ধু, দোকানদার, দোকানের কর্মচারী। এ সব চরিত্রগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হতো। দর্শকরা মজা পেতেন। যেমন- 'নয়নমণি' সিনেমায় গ্রামের এক যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন টেলিসামাদ। 'সুজন সখী' ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন দোকানের কর্মচারীর চরিত্রে। গল্পের প্রয়োজনেই এ সব চরিত্রের গুরুত্ব ছিল। এখন আগের মতো গল্পনির্ভর সিনেমা হচ্ছে না। হাসি-কান্না-দুঃখ মিলেই একটি সিনেমা নির্মাণ হয়। এই তিনটির সমন্বয়ে ছবি এখন হয় না। এখনকার সিনেমাগুলো রোমান্টিক অ্যাকশান ঘরানার। এ জন্য এ সব ছবিতে হাস্যরস ততটা থাকে না। যা থাকে তা নায়কদের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়া হয়। এতে দর্শকরা আনন্দ পান না। চিত্রনায়িকা রোজিনা বলেন, 'পরিপূর্ণ একটি সুন্দর গল্পের সিনেমায় সব থাকে। সেখানে নায়ক-নায়িকা, বাবা-মা, ভিলেন চরিত্রের পাশাপাশি একটি কমেডি চরিত্রও থাকে। সিনেমায় গান যেমন দর্শক পছন্দ করে, তেমনই হাস্যরসও দর্শক চান। দুই/আড়াই ঘণ্টার সিনেমায় রিলাক্সের জন্য হাস্যরস থাকতে হবে। আগের সিনেমাগুলোতে সবই থাকত। তখনকার সিনেমা মানুষের জীবনের কথা বলত। শিক্ষণীয় বিষয় থাকত। এখনকার সিনেমা নিয়ে আমার খুব বেশি ধারণা নেই। খুব কম সিনেমা দেখি। তাতে যা বুঝি এবং অন্যদের থেকেও শুনে থাকি এখনকার সিনেমায় অনেক কিছুই নেই। ভালো গল্প, ভালো নির্মাণ, ভালো শিল্পী নেই। প্রযোজকেরও অভাব রয়েছে। এখন ছবিই তো নির্মাণ হচ্ছে না। যা হচ্ছে তা ভালো করছে না। সিনেমায় যদি নির্মাণ না হয় তাহলে তো সেখানে অনেক কিছুরই অভাব থাকবে। হাস্যরস থাকবে না, ভালো গল্প থাকবে না, ভালো অভিনয়ও থাকবে না। ছবি নির্মাণ হচ্ছে, শুটিং চলছে এসব কথা প্রায়ই শোনা যায়; কিন্তু বছরে কটা ভালো ছবি দর্শক পাচ্ছে? অরুণা বিশ্বাস বলেন, 'বর্তমান চলচ্চিত্র নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ভালো গল্প, চিত্রনাট্য, অভিনয়, হাস্যরস, নির্মাণসহ অনেক কিছুই এখন চলচ্চিত্রে আগের মতো নেই। এখন সিনেমা নির্মাণ কমে গেছে। চরিত্র কমে গেছে। হাস্যরসেরও অভাব রয়েছে। শিল্পীরা যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন না। কিছু কিছু লোক এই অঙ্গনটাকে করায়ত্ব করে রাখতে চান। তাদের আধিপত্যের কারণে অনেক কিছুই বন্ধ হয়ে আছে। নিজেদের মতো করে চালিয়ে নিচ্ছেন। নতুনরা অনেকেই এগিয়ে আসতে পারছে না। নতুনরা সুযোগ না পেলে তো চলচ্চিত্রের উন্নয়নও হবে না। এই অবস্থার পরিবর্তন হলে চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসবে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, 'আসলেই চলচ্চিত্রে এখন হাস্যরস নেই। বর্তমান সিনেমার গল্প থেকে কমেডি চরিত্র ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। যা আছে তা দর্শকদের মন জয় করতে পারছে না। এখন হাস্যরসের নামে ভাঁড়ামোই বেশি হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে ভালো গল্প, চিত্রনাট্যর অভাব। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু বলেন, 'এখনকার সিনেমায় হাস্যরস নেই তা নয়- তবে বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরস নেই। যা আছে তা ভাঁড়ামো ছাড়া কিছু নয়। এক সময় বাংলা চলচ্চিত্রে সব উপাদানই ছিল। আগে আমরা কৌতুক অভিনেতা রবিউলের ছবি দেখতাম। খুব উপভোগ করতাম তার অভিনয়। বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরসে ভরা ছিল তার অভিনয়। এখন যেটা হচ্ছে তাহলো ভাঁড়ামো। এই ভাড়ামো দর্শক দেখতে চান না। ১৫-২০ বছর ধরে এটাই হয়ে আসছে।'