সাক্ষাৎকার

ধন্য আমার সংগীত জীবন

লোকগানের শিল্পী দিলরুবা খান। পারিবারিক আবহেই গানের সঙ্গে তার শখ্যতা। তার বাবা সৈয়দ হামিদুর রহমান রাজশাহী ও রংপুর বেতারের শিল্পী ছিলেন। তবে নিজস্ব প্রতিভাই তাকে করে তুলেছে লোকগানের পরিচিত শিল্পী। 'রেললাইন বহে সমান্তরাল' ভ্রমর কইও গিয়া, পাগল মন, নির্জন যমুনার কূলে ও দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা গানগুলোর মাধ্যমে দিলরুবা খান আজও উজ্জ্বল হয়ে আছেন। দীর্ঘ ২৫ বছর পর কণ্ঠ দিয়েছেন চলচ্চিত্রের গানে।

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
দিলরুবা খান
কেমন আছেন ? এখন অনেকটা ভালো আছি। কিছু দিন আগে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। প্রচন্ড ঠান্ডা লেগেছিল। কাশতে কাশতে বমিও হতো। এখন আলস্নাহর রহমতে ভালো আছি। বাসাতেই আছি। তবে ঠান্ডা ইচ্ছা করেই লাগিয়েছিলাম। ইচ্ছা করে কিভাবে? নভেম্বরে পাবনায় গিয়েছিলাম। ঢাকার বাইরে তো শীত পড়েছে অনেক আগেই। সেখানে দুইদিন ছিলাম। রাত শেষে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি টেবিলে খেজুরের রস। আর যাই কোথায় ! কতদিন পর খেজুরের রস পেয়েছি। বহুদিন পর হাতের কাছে খেজুরের রস পেয়ে লোভ সামলাতে পারিনি। সঙ্গে সঙ্গে দুই গস্নাস খেয়ে নিলাম। শীতের সকালে ঠান্ডা খেজুরের রস খাওয়ার পরপরই ঠান্ডা লেগে যায়। আজ জিটিভিতে সৃষ্টি সুখের উলস্নাসে প্রচারিত হবে। এখানে অতিথি হিসেবে আপনাকে দেখা যাবে ... হঁ্যা, অসুস্থ শরীরে এই অনুষ্ঠানটি করেছি। আমি করতে চাইনি। কিন্তু আগে কথা দিয়ে রেখেছিলাম বলে প্রযোজক আমায় ছাড়েনি। বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠানটি করতে হয়েছে। এতে সাতটি গান করেছি। প্রথমে আমাকে বলা হয়েছিল পাঁচটি গান করলেই হবে। এরপর আরও দুটি গান করিয়ে নিয়েছে। শুনলাম নতুন গান নিয়ে আসছেন? হঁ্যা। চলতি মাসের শেষে গানটি প্রকাশ হবে। 'আমি আর আসব নাকো ফিরে তোমার কাছে ফিরে' কথার গানটি লিখেছেন এসপিএল শামীম। কম্পোজিশন করেছেন তুরণ আর মাস্টার করেছে নিপুণ। অনেক ভালো লেগেছে গানটি। খুব দরদ দিয়ে গানটি করেছি। আমার শিল্পীজীবন ধন্য হয়েছে গানটি করে। গানটির বিশেষত্ব কী, যার জন্য নিজেকে ধন্য মনে করছেন ? এই গানটি কণ্ঠে তোলার আগে ছোট্ট একটি গল্প আছে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে শামীম নামে এক গানপাগল ছেলে আছে। ও আমারও খুব ভক্ত। ও এবং ওর বন্ধুরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওরা খুব বিনয়ের সঙ্গে আমাকে বলে, আমরা গ্রামের লোক। গান ভালোবাসি, গান নিয়ে কাজ করি। গ্রাম থেকে আমরা ঢাকার দিকে এগুতে চাই। গ্রামের ছেলে বলে অবহেলা না করে আপনি যদি দয়া করে আমাদের ঈশ্বরদী শহরে আসতেন, তাহলে ধন্য হতাম। এরপর আমি ৮ নভেম্বর ঈশ্বরদী যাই। সেদিন রাতেই ওখানে আমার কণ্ঠে গানটি রেকর্ডিং হয়। আমি ধন্য এ জন্য যে, আমি ওদের ডাকে সাড়া দিতে পেরেছি। ওদের আগ্রহকে মূল্যায়ন করেছি। ওরা আমাকে পেয়ে এত, এত খুশি হয়েছে যে, তা বলে বুঝাতে পারব না। ২৫ বছর পর কিছু দিন আগে সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন? এই গানটি মিউজিক ছাড়া খালি কণ্ঠে গেয়েছি। সিনেমাতে ওভাবেই শোনা যাবে। খুব সুন্দর একটি গান। দেহতত্ত্বের ওপর লেখা। দরদ দিয়ে গেয়েছি। প্রায় ২৫ বছর পর সিনেমার জন্য গাইলাম। শেষ কোন গানটি গেয়েছি, মনেও পড়ে না। ছবির নাম 'পায়রার চিঠি'। সরকারি অনুদানে শিশুতোষ এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন নিশীথ সূর্য। গানটির কথা ও সুর তৈরি করেছেন সূর্য নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন করেছেন মুশফিক লিটু। দীর্ঘদিন পর সিনেমায় গেয়ে ভালো লেগেছে। গানের বর্তমান পরিবেশ কেমন যাচ্ছে বলে মনে হয়? খুবই খারাপ যাচ্ছে। আফসোস হয়, গানের বর্তমান অবস্থা নিয়ে। মৌলিক গানের অভাব। এ সময়ের শিল্পীদের মধ্যে ভাইরাল-তারকা হওয়ার প্রবণতা কাজ করে। কিন্তু আমরা ভাইরাল হওয়ার পেছনে ছুটিনি। গানের পেছনে ছুটেছি। এখনকার শিল্পীদের সঙ্গে গীতিকার ও সুরকারের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তারা গীতিকার ও সুরকারদের কাছে গিয়ে গান নিয়ে কথা বলেন না। এর সমাধানে সবাইকে কাজ করতে হবে। নতুন গান, সুর করতে হবে। তবেই ভালো কিছু হবে। নতুন সংগীতায়োজনে পুরনো গান গাওয়া হচ্ছে, এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কি? কথা ঠিক রেখে নতুন করে সংগীতায়োজন হতে পারে। কিন্তু কখনো কখনো কথারও পরিবর্তন করা হয়। এটা কত বড় দৃষ্টতা ভাবতে অবাক লাগে। আমার 'নির্জন যমুনার কূলে' গানটি সুমি মির্জা নামে একজন কথার পরিবর্তন করে গেয়েছে। বিষয়টি জানার পর প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু লাভ হয়নি। পুরনো গানকে নিজের মতো করে গেয়ে ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সহজেই তারকা খ্যাতি পাওয়ার জন্য এমন পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। আমরা তা করিনি। আমার বাবা সৈয়দ হামিদুর রশিদ বেতারের শিল্পী ছিলেন। আমার দাদা এবং দাদার বাবাও গানের লোক ছিলেন। সংগীত পরিবারের মেয়ে হয়েও নিজেকে প্রচারের জন্য গান করিনি। অডিশনের মাধ্যমে রেডিও-টেলিভিশনে গাওয়ার সুযোগ পাই। ১৯৮৬ সালে 'রেলালাইন বহে সমান্তরাল' গান দিয়ে আমার পরিচিতি হয়। ভ্রমর কইও গিয়া, পাগল মন, নির্জন যমুনার কূলে, দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা, কাগজ গেল দিস্তা দিস্তা, বনমালি তুমি পরজনমে গানগুলো আসে এরও পর। যেসব গান দিয়ে আমার পরিচিতি হয়েছে, তা ধীরে ধীরে হয়েছে। তাড়াহুড়ো ছিল না।