চলচ্চিত্রে আরও একটি বিপর্যয়ের বছর

প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
বছরের একমাত্র ব্যবসা সফল ছবি 'পাসওয়ার্ড' এর একটি দৃশ্যে শাকিব খান ও শবনম বুবলি
হতাশা আর ব্যর্থতায় বিদায় নিচ্ছে চলচ্চিত্রের ২০১৯। ছবি নির্মাণ, মুক্তি ও ব্যবসায়িক দিক থেকে বিপর্যয়ের বছরে পরিণত হয়েছে বছরটি। ছবি মুক্তির সংখ্যা যেমন সর্বনিম্ন ছিল, তেমনি একটি মাত্র ছবি ছাড়া কোনোটাই ব্যবসা সফলের তালিকায় নাম লেখাতে পারেনি। সামনে যে দু/একটি ছবি মুক্তির তালিকায় রয়েছে তা ব্যবসা-সফল হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না চলচ্চিত্রবোদ্ধারা। সব মিলিয়ে বছরটি চলচ্চিত্র পরিবারের জন্য হতাশায় রয়ে গেল। বছরটা শুরু হয়েছিল ভারতীয় আমদানিকৃত ছবি 'বিসর্জন' দিয়ে। দেশীয় কোনো ছবি প্রস্তুত না থাকায় ৪ জানুয়ারি দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি। পরের সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া দেশীয় ছবি 'আই অ্যাম রাজ' প্রথম দু'দিনেই মুখ থুবড়ে পড়ে। বছরের প্রথম মাস ছবি খরায় ভুগলেও পরের মাস ফেব্রম্নয়ারি নিয়ে প্রত্যাশা ছিল অনেক। এ মাসে তারকাবহুল একগুচ্ছ ছবি মুক্তি পায়। মৌসুমী, পরীমনি, বিদ্যা সিনহা মিম, আঁচল, পূজা চেরি, অদৃত, চম্পা, আনিসুর রহমান মিলন, নুসরাত ইমরোজ তিশা, সিয়াম আহমেদ, বাপ্পি চৌধুরী অভিনীত তারকাদের কোনো ছবিই দর্শক টানতে পারেনি। ব্যর্থতার এই চিত্র দেখা গেছে রোজার ঈদ পর্যন্ত। রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া শাকিব খান-বুবলি অভিনীত 'পাসওয়ার্ড' ছবিটি ভালো ব্যবসা করে। আশায় বুক বাঁধেন প্রযোজক ও নির্মাতারা। কিন্তু সে আশা-নিরাশায় পরিণত হয় বছরের শেষ মাসের এই সময় পর্যন্ত। এমনটি কুরবানির ঈদে শাকিব খানের 'মনের মতো মানুষ পাইলাম না' ছবিটিও ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে 'প্রেমচোর'। শাপলা মিডিয়া ব্যানারে নির্মিত এ ছবিটি নির্মাণ করেছেন উত্তম আকাশ। এতে জুটি বেঁধেছেন নবাগত শান্ত খান ও ভারতের নায়িকা নেহা আমানদীপ। ছবিটি দর্শক মহলে কোনো সাড়া ফেলেনি। প্রায় অর্ধশত প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও দর্শক শূন্যতায় ভুগছে ছবিটি। আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে 'গার্মেন্টস শ্রমিক জিন্দাবাদ'। এ ছবির মাধ্যমে দীর্ঘদিন দুই বছর পর দর্শকদের সামনে আসছেন কাজী মারুফ। চলতি মাসে মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের 'রোহিঙ্গা'। 'বিশ্বসুন্দরী' মুক্তির কথা থাকলেও তা প্রায় অনিশ্চিত। জানা গেছে, ছবিটির কিছু অংশের কাজ এখনো বাকি। তবে এ মাসেই মুক্তির কথা জানিয়েছেন ছবির পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী। দেশীয় ছবির পাশাপাশি সারা বছরে দশটির মতো ভারতীয় ছবি আমদানি করে মুক্তি দেয়া হয়। তাতেও লোকসান গুনতে হয় চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের। শুধু ব্যবসার দিক দিয়েই নয়, এ বছর ছবি মুক্তির সংখ্যাও অনেক কম। গত বছর ৫৬টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও পরিসংখ্যান বলছে, চলিস্নশের ঘরেই থেমে যাচ্ছে এবারের বছর। এর আগের দুই বছর অর্থাৎ ১৬-১৭ সালেও ৫৬টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। মধুমিতা হলের মালিক ও প্রযোজক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, 'ছবিতে ভালো গল্প নেই, ভালো গান নেই, নির্মাণশৈলীর অভাব, ভালো শিল্পীর অভাব। ফলে এসব নিম্নমানের ছবির কারণে নতুন দর্শক তো আসছেনই না, পুরনো দর্শকরাও সরে পড়ছেন।' চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, 'এক সময় বছরে শতাধিক ছবি মুক্তি পেত। এখন কমতে কমতে অনেক নিচে নেমে গেছে। এর কারণও আছে। একদিকে, সিনেমা হল কমছে। প্রযোজকরা ছবি বানাতে সাহস করছেন না। ছবি না চললে প্রযোজকরা এগিয়ে আসবেন কি করে? অন্যদিকে ভালো ছবির সংকট দীর্ঘদিন ধরে। দর্শক এখন আমাদের ছবিতে প্রাণ পাচ্ছেন না। ভালো গল্পের অভাব। ভালো অভিনয়শিল্পীর সংকট। শাকিব খানের ছবি ছাড়া অন্যদের ছবি দেখতে দর্শক হলে আসতে চান না। আবার শাকিব খানের সব ছবিও ব্যবসা-সফল হচ্ছে না। সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো নয়। তবুও আমরা ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখি।'