ফিরছে পারিবারিক গল্পের নাটক

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
'পরের মেয়ে' নাটকের একটি দৃশ্য
পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজকাল খুব একটা নাটক নির্মিত হয় না। এখনকার নাটক দেখে মনে হয়, প্রেমিক-প্রেমিকার রসায়ন, স্বামী-স্ত্রীর খুনসুটি কিংবা বিচ্ছেদ ছাড়া যেন সমাজে আর কিছু নেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দর্শক হাসানোর নামে ভাঁড়ামো। প্রযোজক, নির্মাতা কলাকুশলীরা প্রায় ভুলতেই বসেছেন পারিবারিক গল্পের নাটকের কথা। পারিবারিক গল্পের সেসব নাটক ও চরিত্রগুলোর নাম থাকত মানুষের মুখে মুখে। দর্শকরা মুখিয়ে থাকতেন সেইসব নাটক দেখতে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেইসব দিন। যাচ্ছেতাই প্রেম, রসহীন কৌতুক, ভাষার বিকৃতি, অপ্রয়োজনীয় স্মার্টনেসের বাইরে কম গল্পই খুঁজে পাওয়া যায় এখনকার নাটকে। নাটকের এমন দৈন্যদশার কারণে ক্ষোভে-দুঃখে অনেক খ্যাতিমান নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী টিভি নাটক থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পারিবারিক গল্পে নাটক নির্মিত হচ্ছে। নির্মাতারা এতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। ইতোমধ্যে এনটিভিতে প্রচার চলতি 'ফ্যামিলি ক্রাইসিস' নাটকটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। মারুফ রেহমানের রচনায় নাটকটি পরিচালনা করেছেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। একটি যৌথ পরিবারের গল্পের এ নাটকে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, শর্মিলী আহমেদ, মুনিরা ইউসুফ মেমী, রোজী সিদ্দিকী, মনিরা আক্তার মিঠু, শবনম ফারিয়া, রুনা খান, সোহেল খান প্রমুখ। একই চ্যানেলে শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক নাটক 'পরের মেয়ে'। সৈয়দ জিয়াউদ্দিনের রচনায় 'পরের মেয়ে' পরিচালনা করেছেন হাবিব শাকিল। অভিনয় করেছেন সাদিয়া জাহান প্রভা, দিলারা জামান, ইন্তেখাব দিনার, গোলাম কিবরিয়া তানভীর, জিয়াউল হাসান কিসলু, মুনিরা ইউসুফ মেমী, ইলোরা গওহর, টয়া প্রমুখ। শিগগিরই বৈশাখী টিভিতে প্রচারে আসছে ধারাবাহিক নাটক 'খান বাড়ি বাড়াবাড়ি'। ইউসুফ আলী খোকনের রচনায় নাটকটি পরিচালনা করেছেন সকাল আহমেদ। অভিনয় করছেন পারসা ইভানা, কাজল সুবর্ণ, নিশাত প্রিয়ম, সামান্তা, মিম চৌধুরী ও মাহমুদুল ইসলাম মিঠু। শিগগিরই 'খান বাড়ি বাড়াবাড়ি' ধারাবাহিকটি বৈশাখী টিভিতে প্রচারে আসবে। পারিবারিক গল্পের আরেক ধারাবাহিক নাটক 'ফ্যামিলি ফ্যান্টাসি'। অম্স্নান ঘোষের রচনায় এটি পরিচালনা করছেন অনন্য ইমন। দেশ টিভির এ নাটকে দুই বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সালহা খানম নাদিয়া ও নাদিয়া আহমেদ। বিটিভির ধারাবাহিক নাটক 'কালের যাত্রা'। মামুনুর রশীদের উপন্যাস অবলম্বনে সবুজ ওয়ালিদের চিত্রনাট্যে নাটকটি নির্মাণ করেছেন আকরাম খান। ধারাবাহিক নাটকের পাশাপাশি পারিবারিক গল্পে নির্মিত হচ্ছে খন্ডনাটকও। গত বছরে আশফাক নিপুণের 'মিস শিউলি', বৃন্দাবন দাসের রচনায় দীপু হাজরার 'জয়েন ফ্যামিলি', মাবরুর রশিদ বান্নাহ পরিচালিত 'আশ্রয়' ও 'মুগ্ধ ব্যাকরণ', হানিফ সংকেতের 'অজ্ঞ-বিজ্ঞ সমাচার'সহ বেশকিছু পারিবারিক গল্পের খন্ডনাটক প্রশংসা কুড়ায়। পারিবারিক গল্পের নাটক নিয়ে নাট্যজন আতাউর রহমান বলেন, 'টিভি নাটকের সুন্দর একটা সময় আমরা দেখেছি। তখন ফ্যামিলি ড্রামা হতো। পারিবারিক গল্পের চমৎকার নাটক তৈরি হতো। কমেডিও ছিল কিন্তু এখনকার মতো এত ভাঁড়ামো ছিল না। নাটকের গল্প, অভিনয়ে মুগ্ধ হতেন সবাই। নাটকের কিছু কিছু সংলাপ তো মানুষের মুখে মুখে রটে যেত। এখন এসব অতীত। ৩০টির মতো টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি অসংখ্য ইউটিউব চ্যানেল। প্রচুর নাটকে একই গল্প, একই মুখ, কোনো নতুনত্ব নেই। দর্শক এসব পছন্দ করেন না। তারা চান পারিবারিক গল্প। এজন্যই বিদেশি সিরিয়ালগুলো দর্শক দেখছেন। সেখানে কিছু নেগেটিভ বিষয় থাকলেও দর্শক গ্রহণ করছেন কারণ সেখানে পারিবারিক গল্প আছে। দর্শক সব সময় পারিবারিক গল্প পছন্দ করে।' নাট্যাভিনেতা ড. ইনামুল হক বলেন, 'পরিবার, সমাজ নিয়েই তো মানুষের জীবন। আর নাটকের গল্প যদি তা নিয়ে হয় তবে দর্শক গ্রহণ করে। কারণ সেখানে তার কথা, তার পরিবারের কথা বলা হচ্ছে। জীবনের সঙ্গে মিলে যায়। এজন্য দর্শক বরাবরই পারিবারিক ও সামাজিক গল্পের নাটক দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সারা বছর আমাদের নাটকে পারিবারিক গল্পের সংকট দেখা যায়। তবে এখন কিছু কিছু পারিবারিক গল্পের নাটক তৈরি হচ্ছে। অভিনেত্রী দিলারা জামান বলেন, 'এক সময় পারিবারিক গল্পেই নাটক নির্মাণ হতো। এখন সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। সবকিছুর মতো নাটকেও পরিবর্তন হয়েছে। এখনকার নাটকে প্রেমিক-প্রেমিকার গল্পই বেশি। পারিবারিক গল্প নিয়ে বেশি বেশি নাটক নির্মাণ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ইদানিং কিছু পরিচালক পারিবারিক গল্পের নাটক নির্মাণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এটা অত্যন্ত ভালো খবর।'