নিয়ন্ত্রণহীন বিদেশি সিরিয়াল

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
'জননী জন্মভূমি' সিরিয়ালের একটি দৃশ্য
দীর্ঘদিন ধরেই দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার হয়ে আসছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা। টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে তাদের। এমনকি শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজকসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে রাজপথেও জোরাল আন্দোলন হয়েছে। এ নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক এক প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছিল গত বছরে। বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনকারীরা সন্তোষ প্রকাশ করলেও এতদিনেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না বিদেশি সিরিয়াল প্রচার। আগের মতোই বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে বিদেশি সিরিয়াল। প্রচার চলতি সিরিয়ালগুলোর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও নতুন নতুন সিরিয়াল। সম্প্রতি একাধিক চ্যানেলে শুরু হয়েছে কয়েকটি ভিনদেশি সিরিয়াল। ১৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে একুশে টিভিতে শুরু হয়েছে জনপ্রিয় চীনা ড্রামা সিরিজ 'মূ'। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা ও রাত সাড়ে ১০টায় ড্রামা সিরিয়ালটি প্রচার হচ্ছে। বাংলায় ডাবিংকৃত ১০০ পর্বের এই সিরিজে চীনা মিং সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, ষড়যন্ত্র, ঘৃনা ও ভালোবাসার ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। ২০১২ সালে সিরিজিটি প্রথম চীনের সরকারি স্টেশন সিসিটিভিতে 'টার্বুলেন্স অব দ্য মু ক্লেন' নামে প্রচারিত হয়। চীনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তৈরি করা এই ড্রামা সিরিজটি পরিচালনা করেছেন রিংগো ইয়ু। গত ডিসেম্বর থেকে দীপ্ত টিভিতে নতুন একটি তার্কিশ টিভি সিরিয়াল প্রচার শুরু হয়েছে। 'ভাটানিম সেনসিন' নামের সিরিয়ালটি বাংলায় 'জননী জন্মভূমি' নাম দিয়ে প্রচারিত হবে। সিরিয়ালটি চলছে প্রতিদিন রাত সাড়ে ৯টায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুরস্কের ইতিহাসে বিখ্যাত মেজর মুমিন আকসায় (গাবুর মুমিন) এর বাস্তব জীবন আর ইজমির স্বাধীন হওয়ার সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বিখ্যাত তুর্কি সিরিয়াল 'ভাটানিম সেনসিন'। গত বছরে তথ্য মন্ত্রণালয়ে উলেস্নখ করা হয়েছিল বিদেশি সিরিয়াল প্রচারের আগে মন্ত্রণালয়ের প্রিভিউ কমিটি থেকে অনুমোদন নিতে হবে। ৯ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (সম্প্রচার) সভাপতি এবং উপসচিবকে (টিভি ২) সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, সারা যাকের এবং অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স, ডিরেক্টরস গিল্ড ও অভিনয় শিল্পী সংঘ থেকে একজন করে প্রতিনিধি। এই কমিটি ডাবিংকৃত কোনো বিদেশি অনুষ্ঠান বা সিরিয়াল দেখার পর অনুমতি দিলে তবেই সেটি চ্যানেলে প্রচারের যোগ্যতা পাবে; অন্যথায় নয়। মন্ত্রণালয়ে প্রকাশিত নীতিমালার পর দৈনিক যায়যায়দিনের কাছে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন কয়েকজন নাট্যব্যক্তিত্ব। ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেছেন, 'আমরা বিষয়টি নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। সেই প্রেক্ষিতেই এই প্রিভিউ কমিটি গঠিত হয়েছে। ভালো লাগছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু জানানো হয়নি আমাকে বা সংগঠনকে। জানার পর সিদ্ধান্ত নেব পরিচালকদের প্রতিনিধি হিসেবে কে যাব প্রিভিউ কমিটিতে।' টিভি নাটকের শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম বলেছিলেন, 'খুবই ভালো লাগছে যে অবশেষে বিদেশি অনুষ্ঠান ও সিরিয়াল ডাবিং করে প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম হচ্ছে। প্রিভিউ কমিটিটা দরকার ছিল। সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে দেশের সংস্কৃতির স্বার্থ রক্ষা পাবে বলে মনে করি আমি। সেই জায়গা থেকে অভিনয় শিল্পী সংঘকে এই কমিটিতে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য তথ্যমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পেলে সিদ্ধান্ত নেব আমাদের প্রতিনিধি কে হবেন। তবে সংগঠনের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের মধ্য থেকেই একজন প্রিভিউ কমিটিতে অংশ নেবেন।' নাসিম আরও বলেছিলেন, 'আগে চ্যানেলগুলো তাদের ইচ্ছেমতো সময়ে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার করত। আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছিলাম, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত এই পিকআওয়ারে কোনো বিদেশি সিরিয়াল প্রচার করা যাবে না। এই সময়ে আমাদের চ্যানেলগুলোতে আমাদের নাটক-সিনেমা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করবে। প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়টি নিয়ে কিছু আমার চোখে পড়েনি। তবে যেহেতু কাজ শুরু হচ্ছে এখন আমাদের এ দাবিটিও গুরুত্ব পাবে আশা করি। প্রিভিউ কমিটির মিটিংয়ে প্রচারের সময়টি নিয়েও আলোচনা করা হবে।' টেলিভিশন নাট্যকার সংঘের সভাপতি নাট্যকার মাসুম রেজা বলেছিলেন, 'আমাদের দাবি ছিল টেলিভিশনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। আমাদের প্রধান দাবি, বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ করা নয়, সরকারি নিয়ম মেনে যেন আনা হয়, তা দেখতে বলেছিলাম। অবশেষে একটি নিয়মের মধ্যে আসছে। এটা ভালো খবর।' কিন্তু মন্ত্রণালয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পরও বিদেশি সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণে না আসায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের নাট্যসংশ্লিষ্টরা। অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্শন করছেন তারা।