শাবনূরের কারণেই আত্মহত্যা সালমানের!

দ্বিধা-বিভক্ত চলচ্চিত্র পরিবার

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্র্ট
শাবনূর ও সালমান শাহ
মৃতু্যর ২৪ বছর পর এবার ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রাণপুরুষ সালমান শাহ'র মৃতু্যর কারণ নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চাঞ্চল্যকর ও রহস্যময় এ কোনো হত্যা কিংবা স্বাভাবিক মৃত্য নয়, আত্মহত্যা করেছেন সালমান শাহ- প্রতিবেদনই এমনই দাবি করেছে পিবিআই শুধু তাই নয়, প্রতিবেদনে বলা হয়, পারিবারিক কলহের জের ধরেই সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন এমনকি চিত্রনায়িকা শাবনূরের কারণেই সালমান শাহর পরিবারে কলহের সৃষ্টি হয় বলেও মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির ডিআই?জি বনজ কুমার মজুমদার। সোমবার সকালে ধানমন্ডিতে তাদের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'পিবিআই তদন্তে সালমান শাহকে হত্যার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পারিবারিক কলহ ও মানসিক যন্ত্রণায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন।' প্রতিবেদনটিতে সালমান শাহ'র মৃতু্যর বেশকিছু কারণ উলেস্নখ করেন পিবিআই প্রধান। এগুলো হলো- সালমান শাহ ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা, সামিরার সাথে দাম্পত্য কলহ, সালমান শাহর মাত্রাতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা। এছাড়াও জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জীভূত অভিমানে রূপ নেওয়া, সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনের অপূর্ণতাও কারণ। জানান, সালমান একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়ার বা আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। এদিকে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর চলচ্চিমহলে দিনভর হট ইসু্য হয়ে থাকে সালমান শাহ ও শাবনূর প্রসঙ্গ। চলে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি। অনেকে এই প্রতিবেদনকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন, অনেকে আবার পিবিআইয়ের প্রতিবেদনকেই সঠিক বলে ধারণা করছেন। অনেকে আবার দীর্ঘদিনের এই হত্যা মামলা পরিষ্কার হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে পিবিআইয়ের এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন সালমান শাহর পরিবার। সালমান শাহ ও শাবনূরকে নিয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও বক্তব্য নিয়ে চলচ্চিত্রের অনেকের সঙ্গে কথা হয় যাযাদির। তবে বেশিরভাগই মন্তব্য করতে রাজি হননি। কেউ কেউ আবার মন্তব্য করলেও নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়েছেন। এ বিষয়ে পুনঃতদন্ত চেয়ে সালমান শাহর মামা চিত্রপরিচালক আলমগীর কুমকুম বলেন, 'এ মামলার যে রাজসাক্ষী রুবি সুলতানা, তিনি সামিরার মামী। তিনি তো বলেছেন, সালমানকে হত্যা করা হয়েছে। তার ছেলেকে দিয়ে সামিরা পুটলি সরিয়েছে। ওই পুটলিতে কী ছিল? তাকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো না? তার পর্যন্ত কি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে পিবিআই? আমরা পুনঃতদন্ত চাইব।' আলমগীর কুমকুম আরও বলেন, 'ময়নাতদন্তের জায়গায় সামিরার বাবা কেন আমার সঙ্গে গেল? আমাকে ওখানে জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নের উত্তর কেন উনি দিলেন? কেন সালমানের লাশ যেখানে পাওয়া গেল, সে ফ্যানের একটা বেস্নডও বাঁকা হয়নি? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।' আবার পিবিআইয়ের এই প্রতিবেদনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সালমান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি অভিনেতা আশরাফুল হক ডন। তিনি সোমবার দুপুরে বলেন, 'বিধাতা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। অবশেষে কলিজার বন্ধুকে হত্যার মিথ্যে অভিযোগ থেকে মুক্ত হলাম। আমি সব সময়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। ২৪টা বছর বুকের ভেতর বন্ধু হত্যার মিথ্যা অপবাদ আমাকে নিয়ে ঘুরতে হয়েছে। আমার যে ক্ষতি হয়েছে তার পূরণ কিছুতেই হবে না। আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম। সত্য কোনোদিন মিথ্যে হয় না। আর মিথ্যেকেও কোনোদিন জোর করে সত্যি বানানো যায় না।' ডন আরও বলেন, 'সালমান শাহ ছিল আমার কলিজার বন্ধু। এটা এই ইন্ডাস্ট্রির সবাই জানে। তার মৃতু্যতে কিন্তু আমারই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হলো। নায়ক-ভিলেন হিসেবে আমাদের যে জুটি ছিল সেটি তরুণদের কাছে অনেক অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সালমান চলে যাবার পর আমিও আর সিনেমায় তেমনভাবে নিয়মিত হতে পারিনি। তবু আমার ওপর বন্ধু খুনের মিথ্যে দায় চাপানো হলো। কত কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণা আমি সয়েছি দীর্ঘ এই ২৪ বছর সেটা আমিই কেবল জানি।' প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃতু্যর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।