ধারাবাহিক নাটকে আগ্রহ হারাচ্ছেন শিল্পীরা

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
'পরের মেয়ে' ধারাবাহিক নাটকের একটি দৃশ্য
অনুষ্ঠাননির্ভর প্রায় প্রতিটি চ্যানেলেই প্রতিদিন একাধিক ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে। কিন্তু এসব নাটক যেমন দর্শকদের মনের খোরাক মেটাতে পারছে না, তেমনই তারকারাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। অথচ একসময় ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের জন্য অভিনয়শিল্পীরা মুখিয়ে থাকতেন। ধারাবাহিক নাটকের মাধ্যমেই শিল্পীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ত। এ প্রজন্মের অনেক অভিনয়শিল্পী আছেন যারা কয়েক বছরে একটি ধারাবাহিকেও অভিনয় করেননি। আবার এমনও আছেন যারা ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কোনো ধারাবাহিকে তাদের দেখা মেলেনি। খন্ডনাটকের ফাঁকে খুব কম তারকাই আছেন যারা ধারাবাহিক নাটক করছেন। নিয়মিত তারকাদের অনেকেই ধারাবাহিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। গেল কয়েক বছর অভিনেতা সজল ও অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা কোনো ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন না। মডেল-অভিনেত্রী মেহজাবিন, আফরান নিশোকেও ধারাবাহিকে দেখা যায় না। সাফা কবির গেল প্রায় তিন বছরে কোনো ধারাবাহিকে অভিনয় করেননি। এছাড়া ধারাবাহিকে অভিনয় না করার তালিকায় আরও আছে ইরফান সাজ্জাদ, তানজিন তিশা, শবনম ফারিয়া, জোবানসহ অনেকের নাম। কিছু দিন আগে অভিনেত্রী অহনাও ধারাবাহিকে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবার সেই কাতারে যুক্ত হলেন অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ। যদিও এ অভিনেত্রীর 'তোলপাড়' নামে একটি ধারাবাহিক আরটিভিতে প্রচার হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে আর কোনো ধারাবাহিকে কাজ করছেন তিনি। ধারাবাহিকে যারা নিয়মিত অভিনয় করছেন তারাও ধারাবাহিক নিয়ে বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ গল্প উপস্থাপন ও সংলাপে দুর্বলতা এবং অযথাই কোনো চরিত্রকে নির্মাতারা লম্বা করেন। ফলে সেই সময়টুকুতে চরিত্রের প্রতি শিল্পীরও কোনো আন্তরিকতা থাকে না। দায়সারাভাবেই কাজ করেন। এছাড়া দীর্ঘ সময় ব্যয় হয় ধারাবাহিকের পেছনে, একই চরিত্রে দীর্ঘদিন মত্ত থাকা, কিছু পর্বের পর থেকে মূল শিল্পীর হারিয়ে যাওয়া, বাজেট সংকটসহ নানামুখী সমস্যায় থাকে ধারাবাহিকে। ধারাবাহিক না করার সিদ্ধান্তের কারণ নিয়ে অপর্ণা ঘোষ বলেন, 'টিভি ধারাবাহিকের গল্প নিয়ে আমি কোনোভাবেই এখন সন্তুষ্ট না। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ধারাবাহিকে প্রস্তাব পেয়েছি সেগুলোতে আমার জন্য নতুনত্বের কিছু পাইনি। যার কারণে নতুন কোনো ধারাবাহিকে আমার কাজ করা হচ্ছে না।' অভিনেতা ইরেশ যাকের বলেন, 'আমি আসলে ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করি না। সারা বছর খন্ডনাটক ও চলচ্চিত্র নিয়েই অভিনয়ে আমার ব্যস্ততা। যেহেতু নিজে কোনো ধারাবাহিকে কাজ করি না। তাই ধারাবাহিক নাটক নিয়ে কোনো মন্তব্যও করতে চাই না।' অভিনেতা সজল বলেন, 'সর্বশেষ কোন ধারাবাহিকে কাজ করেছিলাম তা মনে নেই। ৬-৭ বছর হবে ধারাবাহিক নাটকে একদমই অভিনয় করি না। সময় স্বল্পতার জন্য করা হয় না। এছাড়া যে নাটকটি করব তার চরিত্র নিয়ে কম করে হলেও একদিন ভাবতে হয় আমাকে। যে কারণে মাসের প্রায় সব দিনেই কোনো না কোনো সিডিউল ওয়ার্ক থাকে।' অভিনেত্রী সাফা কবির বলেন, 'বছর দুই-তিন ধরে আমি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করছি না। খন্ডনাটকেই কাজ করতে ভালো লাগছে। খন্ডনাটকে বিভিন্ন গল্পের নানা চরিত্রে নিজেকে আবিষ্কার করা যায়। কিন্তু ধারাবাহিক নাটকের বেলায় লম্বা সময় দিতে হয়। একই গল্প ও চরিত্র নিয়ে এতদিন কাজ করতে ভালো লাগে না। ধারাবাহিকের জন্য খন্ডনাটকে সময় বের করা যায় না। তাই খন্ডনাটকেই ব্যস্ত আছি।' ইরফান সাজ্জাদ বলেন, 'খন্ডনাটকের চাপ বেশি থাকায় ধারাবাহিক নাটকে কাজ করা হয় না। সর্বশেষ 'সোনার শেকল' ধারাবাহিকে কাজ করেছিলাম প্রায় তিন বছর আগে। খন্ডনাটকেই কাজ করতে একটু সুবিধাও আছে। অনেক সময় নিজের মতো করে সময় করে নেওয়া যায়। বিভিন্ন গল্পের নানা চরিত্রে নিজেকে ভাঙা যায়, যাচাই করা যায়। কিন্তু ধারাবাহিকে তা হয় না। সবচেয়ে বড় কথা আমি খন্ডনাটকেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।'