শিল্পীর পাশে শিল্পী

প্রকাশ | ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
পর্দায় তাদের চরিত্রের দৈর্ঘ্য কম, সংলাপও নেই বলার মতো। প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোকে সহযোগিতা করাই এদের মূল কাজ। এসব অভিনয় শিল্পীদের আয়-রোজগারও অনেকটা 'দিন আনে দিন খাই'র মতো। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শুটিং বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন এসব সাধারণ শিল্পী। রীতিমত পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এমন দুর্দিনে এসব স্বল্প আয়ের শিল্পী ও কলাকুশলীদের পাশে দাঁড়িয়েছে নাট্য অভিনয় শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ। তাদের সাহায্যের জন্য গঠন করা হয়েছে একটি তহবিল। সংঘের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছে দেশের অন্যতম সুপারশপ মীনা বাজার। তারা করোনার এই সময়ে আগামী তিন মাস এক লাখ টাকার বাজার অভিনয় শিল্পী সংঘের সুবিধাবঞ্চিত ও স্বল্প আয়ের সদস্যদের বাড়িতে পৌঁছে দেবে। একই কাজ করবে স্বপ্নও। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংঘের আইন ও কল্যাণ সম্পাদক শামীমা ইসলাম তুষ্টি। এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, 'আমরা জানি না এই দুর্দিন কবে শেষ হবে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমাদের স্বল্প আয়ের যে অভিনেতারা আছেন, তারা ও কলাকুশলীরা। তারা বেশিরভাগই দৈনিক আয়ে চলেন। শুটিং আরও বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকতে পারে। অনেকেই বেকার হয়ে গেছেন এবং অনেকেই সামনে শুটিং বন্ধ থাকলে বেকার হয়ে যাবেন। আমাদের মধ্যে যারা সচ্ছল ও সামর্থ্যবান শিল্পী আছেন, তারা হয়তো এই দুর্যোগ সামলে নিতে পারবেন। কিন্তু যারা পারবেন না, আমরা তাদেরও সঙ্গে নিয়ে বাঁচতে চাই। সে জন্যই আমাদের এ উদ্যোগ।' এমন দুরবস্থায় বসে নেই চলচ্চিত্র পরিবারও। এমনিতেই চলচ্চিত্রের কাজ কম থাকায় দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েনের মধ্যে আছেন চলচ্চিত্রের স্বল্প আয়ের শিল্পীরা। তার ওপর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বন্ধ আছে সব ধরনের শুটিং। ফলে এই মুহূর্তে স্বল্প আয়ের শিল্পীদের জীবন ধারণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বেকার ও অসচ্ছল শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে এসব শিল্পীদের বাসায় খাবার, মাস্ক ও হ্যান্ডওয়াশ এবং আপদকালীন সময়ের জন্য নগদ অর্থ প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। এ বিষয়ে জায়েদ খান বলেন, 'আমাদের চলচ্চিত্রের অবস্থা বর্তমানে খুব একটা ভালো নয়, অনেক শিল্পীই বেকার হয়েছেন। তাই অনেক শিল্পী এখন অসচ্ছল। তারপরও সাধারণ মানুষের মতো তারা হাত পাততে পারেন না মানুষের কাছে। কারণ, শিল্পীরা সব সময় আত্মসম্মান নিয়ে চলেন। এই বেকার ও অসচ্ছল শিল্পীদের জন্য খাবার, মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক অসচ্ছল শিল্পীর বাসায় তা পৌঁছে দেবে সমিতি।' এসময় শিল্পী সমিতির সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অভিনেতা ডিপজল ও অনন্ত জলিল। শিল্পী সমিতি ও অনন্ত জলিলের যৌথ উদ্যোগে শুক্রবার স্বল্প আয়ের শিল্পীদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়। এ বিষয়ে অনন্ত তার ফেসবুক পেজে লিখেন, 'বেকার ও অসচ্ছল শিল্পীর ঘরে ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, মাস্ক ও হ্যান্ড ওয়াশ আমার ফ্যাক্টরির গাড়ি ও লোকজন দিয়ে ও শিল্পী সমিতির মিশা সওদাগর এবং জায়েদ খানের সার্বিক সহযোগিতায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।' জানা গেছে, শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে ২২০ থেকে ২৩০ জনের মতো অসচ্ছল শিল্পীদের সহযোগিতা করা হবে। এমনকি যারা শিল্পী সমিতির অফিসে আসছেন না, তালিকা দেখে তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে দ্রব্যসামগ্রীর এই প্রণোদনা প্যাকেট পৌঁছে দেয়া হবে। প্রসঙ্গত, ২২ মার্চ সকাল ৬টা থেকে ৩১ মার্চ রাত ১০টা পর্যন্ত ছোট পর্দার সব শুটিং বন্ধের সিদ্ধান্ত হয় ১৯ মার্চ। ছোট পর্দাসংশ্লিষ্ট সব শুটিং বন্ধ ঘোষণা করেছে ছোট পর্দার ১৪টি সংগঠন। তার আগেই চলচ্চিত্রের শুটিং বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার দেশে দশ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। বন্ধ আছে গণপরিবহণও।