করোনায় শুটিং বন্ধ পুনঃপ্রচারে টিভি অনুষ্ঠানমালা

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ শুটিং, ডাবিং, এডিটিং। নতুন পর্ব সংকটে পড়েছে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার হয়ে আসা ধারাবাহিক নাটকগুলো। কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেল ইতোমধ্যে বেশকিছু ধারাবাহিক পুনঃপ্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার কিছু কিছু ধারাবাহিক পর্ব সংকটের কারণে আপাতত প্রচার বন্ধ রাখা হয়েছে। ঠিক এ সময় ঘরবন্দি মানুষদের জন্য সুখবর নিয়ে এলো বাংলাদেশ টেলিভিশন। ঘরবন্দি মানুষকে সুস্থ ধারার বিনোদন দিতে রাষ্ট্রীয় এ টিভি চ্যানেলটি নব্বই দশকের জনপ্রিয় দুটি ধারাবাহিক নাটকের পুনঃপ্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলো হলো- নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের লেখা 'কোথাও কেউ নেই' ও 'বহুব্রীহি'। নাটক দুটি প্রযোজনা করেছিলেন বরকত উলস্নাহ ও নওয়াজিশ আলী খান। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে চ্যানেলটির মহাপরিচালক এস এম হারুক-অর-রশীদ বলেন, 'এখন বেশিরভাগ মানুষই ঘরবন্দি। এই সময়ে সবাই যেন খানিকটা স্বস্তিতে থাকেন সেই কারণেই জনপ্রিয় এই দুটি ধারাবাহিক প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এখন চাইলেও তো শুটিং করতে পারছি না। শিল্পীরাও আসবেন না। আর আসার মতো সময়ও নয় এখন। সব মিলিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।' 'বহুব্রীহি' ধারাবাহিকটি ১৯৮৮-৮৯ সালে বিটিভিতে প্রচারিত হয়। পারিবারিক গল্পে নির্মিত এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আলী যাকের, আফজাল হোসেন, লুৎফর নাহার লতা, লাকী ইনাম, আবুল খায়ের, আফজাল শরীফসহ অনেকে। সামরিক শাসনের সেই সময়ে এ ধারাবাহিকে টিয়া পাখির মুখে বলা 'তুই রাজাকার' সংলাপটি জনপ্রিয় হয়। স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি ঘৃণার প্রতীক হিসেবে এটি আলোচিত হয়েছিল। আর ১৯৯২-৯৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত 'কোথাও কেউ নেই' ধারাবাহিকের নির্দেশনা দেন বরকত উলস্নাহ। এ নাটকের 'বাকের ভাই' চরিত্রটি দর্শকদের কাছে এখনো অমলিন। এ চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়া এতে মুনা চরিত্রে সুবর্ণা মুস্তফা, বদি চরিত্রে আবদুল কাদের, মজনু চরিত্রে লুৎফর রহমান জর্জ, মতি চরিত্রে মাহফুজ আহমেদ, বকুল চরিত্রে আফসানা মিমি, উকিল চরিত্রে হুমায়ুন ফরিদীসহ অনেকে অভিনয় করেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপে কোনো নির্মাতাই ধারাবাহিকের নতুন পর্ব টেলিভিশন চ্যানেলে জমা দিতে পারেননি। ফলে বেশিরভাগ চ্যানেলে কর্তৃপক্ষই ধারাবাহিকগুলোর আগের পর্বগুলোই পুনঃপ্রচার করার কথা ভাবছে। নির্মাতা সকাল আহমেদের নাটক 'ভদ্রপাড়া' বাংলাভিশন এবং 'খান বাড়ি বাড়াবাড়ি' দেখাচ্ছে ইটিভি। তিনি বলেন, 'আমার এই দুটি নাটকই করোনা পরিস্থিতির কারণে নিয়মিত প্রচারের সমস্যায় পড়বে। 'খান বাড়ি বাড়াবাড়ি' নাটকটি ১২ পর্ব পর্যন্ত জমা দেওয়া আছে। বাকি পর্বগুলোর শুটিং করে জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেটা আটকে গেছে। ফলে পুরানো পর্ব প্রচার করা ছাড়া আর গতি নেই। বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান তারেক আখন্দ জানান, 'শুটিং বন্ধের ইমপ্যাক্ট আমাদের চ্যানেলের প্রচারিত ধারাবাহিকগুলোর ওপর কিছুটা পড়বেই। নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলেই সেগুলোর শুটিং বাতিল করা হয়েছে। আমাদের হাতে যে পর্বগুলো আছে, সেগুলো আপাতত চালাব। পরে সমস্যা হলে বিকল্প সিদ্ধান্ত নেব। আগামী ১০ এপ্রিলের পরও যদি শুটিং শুরু হয়, তাহলেও আমাদের কোনো ধারাবাহিক বন্ধ হবে না। সংকটে পড়লে কোনো কোনো নাটকের আগের পর্ব চালাতে হতে পারে।' এদিকে, গত মাসের শেষ দিকে পাশের দেশ ভারত পুনঃপ্রচারের দিকে হেটেছে। ঘরবন্দি মানুষদের একঘেয়েমি দূর করতে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন সংস্থা দূরদর্শন ফিরিয়ে এনেছে রামানন্দ সাগরের 'রামায়ণ', বি.আর চোপড়ার 'মহাভারত', শাহরুখ খান অভিনীতি 'সার্কাস', রজত কাপুর অভিনীতি 'ব্যোমকেশ বক্সী'-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটকগুলোকে। এগিয়ে এসেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও। স্টার জলসা, জি বাংলা এবং কালারস বাংলার মতো বেসরকারি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলও তাদের পুরানো ক্লাসিক টিভি ধারাবাহিকগুলোকে আবারও প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে 'এক আকাশের নিচে', 'গানের ওপারে', 'অগ্নিপরীক্ষা', 'আমার দুর্গা', 'দ্বীপ জ্বেলে যাই', 'গোয়েন্দা গিন্নি', 'ভুতু', 'সারেগামাপা', 'মীরাক্কেল', 'মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য', 'মনসা', 'বোঝে না সে বোঝে না', 'সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে'-এর মতো ছোট পর্দার জনপ্রিয় সিরিয়ালগুলো। আগামী ৬ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্টার জলসায় দেখানো হবে মিমি চক্রবর্তী অভিনিত প্রথম ধারাবাহিক 'গানের ওপারে'। ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত এই ধারাবাহিকটি আবার দেখানোর খবর শুনে নস্টালজিক অভিনেত্রী ও সাংসদ মিমি। এ ব্যাপারে তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, 'এটাই ছিল আমার প্রথম কাজ, কিন্তু শুটিং'-এ ব্যস্ত থাকার কারণে আমি এটা দেখতে পারিনি। সে সময় বহু মানুষ এই ধারাবাহিকের প্রশংসা করেছিলেন। অনেকে এ-ও জিজ্ঞাসা করেছেন- গানের ওপারে-২ নির্মিত হবে কি না? যাই হোক প্রায় দশ বছর পর, আমি এটা দেখতে পারব। আমার মনে হয়, টিভির সামনে বসা এবং এটা দেখার সেরা সময়।' এই ধরনের উদ্যোগ সম্পর্কে জি এন্টারটেনমেন্ট'-এর ক্লাস্টার হেড সম্রাট ঘোষ বলেন, 'আমি আশাবাদী যে, জনপ্রিয় টিভি শোগুলোর কারণে নস্টালজিয়া ফিরে আসবে এবং দর্শকদের তাদের পুরানো দিনগুলোতে ফিরিয়ে আনবে। পাশাপাশি এই কঠিন সময়ে তাদের মন ভালোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।' ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই স্টার জলসা চ্যানেলের পক্ষ থেকে মহাভারতের বাংলা ডাবিং দেখানো শুরু হয়েছে। জি বাংলায় সম্প্রচারিত হওয়া 'সুদীপার রান্নাঘর'-এর সুদীপা চ্যাটার্জি বলেন, 'পুরানো জনপ্রিয় বাংলা টেলি-ধারাবাহিক বা টেলি- সোপগুলো আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বয়স্ক মানুষ থেকে শুরু করে গৃহবধূ, পরিচারিকা সবাই উপভোগ করতেন। লকডাউনের কারণে শুটিং বন্ধ থাকায় নতুন এপিসোডও দেখানো হচ্ছে না। তাই আমার পুরানো এপিসোডগুলোকে পুনরায় চালু করার জন্য বাড়িতেই কেবলমাত্র নতুন প্রোমো তৈরি করেছি।' এ বিষয়টিকে টিভি নাটক সংশ্লিষ্ট অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করছেন। এমন দুর্যোগের মুহূর্তে এ ধরনের সিদ্ধান্ত মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে সহাযোগিতা করবে। পাশাপাশি নির্মল বিনোদন পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হবে না।