আম্পানে আমের সর্বনাশ

প্রকাশ | ২২ মে ২০২০, ০০:০০

রাজশাহী অফিস
বাগানে স্তূপকৃত আম
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে রাজশাহীতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বুধবার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঝড়ে রাজশাহীর অন্তত ১৫ শতাংশ আম গাছ থেকে ঝরে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গণমাধ্যমে এমন তথ্য দিয়েছে। তবে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আম ঝরেছে ২০ শতাংশ। এদিকে গাছের আম ঝরে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের। তারা বলেন, এবার এমনিতেই আমের ফলন কম। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দাম পাওয়া নিয়েই ছিলেন অনিশ্চয়তায়। তার ওপর ঝড়ে আম ঝরে পড়ায় ফলনও কমে গেল। এতে তারা লোকসানের মুখে পড়বেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, রাতেই বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে আমরাই জেলা প্রশাসককে জানিয়েছিলাম যে ২০ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। তবে সকালে আমরা বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করে দেখছি ক্ষতির পরিমাণ আরেকটু কম। শহরে ১০ শতাংশ এবং চারঘাট উপজেলায় ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। তবে বাঘা উপজেলায় আম বেশি। সেখানে ঝরেছে প্রায় ২০ শতাংশ। সব মিলিয়ে আম ঝরেছে ১৫ শতাংশ। শামসুল হক আরও বলেন, আম ঝরে গেলে ফলন কমে। এরপর আবার চাষিরা যদি আমের ভালো দাম না পান তাহলে হয়তো এবার তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই আমের যেন সঠিক মূল্য পাওয়া যায় তার জন্য যা যা করা দরকার আমরা করার চেষ্টা করছি। তিনি জানান, ঝড়ে রাজশাহীর অন্য কোনো ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। মাঠে পাকা ধান আছে। সেগুলো মাটিতে শুয়ে গেছে। তবে ধান পেকে যাওয়ায় চাষিরা তা এখন কেটে নেবেন। তাই ধানের ক্ষতি হবে না। তবে কিছু ধান ঝরে যেতে পারে। মাঠের সবজির কোনো ক্ষতি হবে না। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, আম্পানের মূল কেন্দ্র রাজশাহীতে আঘাত করেনি। তবে বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৫৫ মিনিট থেকে ২টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৯ কিলোমিটার। এটি অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রায় পড়ে না। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারের ওপরে থাকলে তাকে ঘূর্ণিঝড় বলা যায়। রাজশাহীতে ঘূর্ণিঝড়ের একধাপ নিচের মাত্রার ঝড় হয়েছে। সে সঙ্গে বৃষ্টিপাতও হয়েছে। বুধবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮১ মিলিমিটার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমচাষিরা বলছেন, ঝড়ের কারণে কোনো কোনো বাগানে অর্ধেক আম ঝড়ে গেছে। চাষিরা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে ঝড় শুরু হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এই ঝড় কখনো হালকা ও ভারি আকার ধারণ করে চলে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত। এতে জেলার বাগানগুলোতে ঝরে পড়েছে বিপুল পরিমাণ আম। বেলেপুকুর এলাকার আম চাষি আকবর আলী জানান, টানা ঝড়ে প্রচুর আম ঝরে গেছে। মানুষ বস্তার বস্তা আম কুড়িয়ে নিয়ে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫-৬ শতাংশ আম ঝড়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলায়। পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়ায় নওগাঁর পোরশায় চাষিদের বাগানের আম ঝরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বুধবার রাতে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বয়ে যাওয়া ওই ঝড়ের তান্ডবে বেশ কিছু গাছের ডালপালা ভেঙে ও গাছের আম ঝরে যায়। আমচাষি ও বাগান মালিক নুরুজ্জামান শাহ্‌ চৌধুরী, জিয়ারুল ইসলাম, রমজান আলী ও আনিসুর রহমান জানান, তাদের বাগানের প্রায় ২০ শতাংশ আম ঝরে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম জানান, এবারে উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১০হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৭ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ঝড়ে উপজেলায় গড়ে ৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কবলে রাজশাহীর চারঘাট-বাঘায় আমসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে পড়া সেই আম বিক্রি হচ্ছে ৫০ পয়সা কেজি দরে। অনেকেই আবার আমের ব্যবসায় চালান ঘরে তোলা দুষ্কর হবে বলে জানান। বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত চারঘাট-বাঘায় তান্ডব চালায় বিরতিহীনভাবে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে আম বাগান সংশ্লিষ্টরা। কালুহাটি গ্রামের আমচাষি বীর বাহাদুর জানান, ঝড়ে আমসহ ভুট্টা ও তিলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে আম বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। সে আম বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০ পয়সা কেজি দরে। আম কেনার লোকও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি মহামারি করোনায় আম নিয়ে রয়েছে সংশয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনজুর রহমান বলেন, আমের বেশ অনেক ক্ষতি হয়েছে। যা পুষিয়ে ওঠা কঠিন হবে। তবে দুটি উপজেলায় গড়ে ১০% আমের ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ফসলের তেমন একটা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই জানান কৃষি কর্মকর্তা।