ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছেন খালেদা জিয়া

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
খালেদা জিয়া
কারামুক্তির দুই মাস পর্যন্ত নিজেকে দলীয় নেতাকর্মীসহ বাইরের সবার কাছ থেকে দূরে রাখলেও ইদানীং আস্থাভাজনদের দেখা দিতে শুরু করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মুক্তির শর্ত ও আইনগত সব দিক যথাযথভাবে পালন করেই সংশ্লিষ্টদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। অসুস্থ নেত্রীর ধীরে ধীরে সক্রিয় হওয়ার খবরে বিএনপি এখন অনেকটাই চাঙা। দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান তিনি। এরপর থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গুলশানের বাসায় 'কোয়ারেন্টিনেই' ছিলেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ৭৫ বছর বয়সি খালেদা জিয়া। বাইরে থেকে শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়া ও চিকিৎসার বন্দোবস্ত দিচ্ছিলেন। এ সময়ে দলের সিনিয়র নেতারা তার বাসায় দেখা করতে গেলেও শারীরিক অসুস্থতা ও করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি কারও সঙ্গে দেখা করেননি। শুধু গত ১১ মে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ১২ মে বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস তার সঙ্গে স্বল্প সময়ের জন্য দেখা পান। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে কারামুক্তির দুই মাসের মাথায় দল ও জোট নেতাদের সাক্ষাৎ দিতে শুরু করেছেন বিএনপিপ্রধান। ঈদের দিন ২৫ মে রাতে মির্জা ফখরুলসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন। তার পরদিন তিনি কথা বলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সক্রিয় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে। এরপর ২৭ মে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর সঙ্গে সাক্ষাৎ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এর বাইরে করোনায় আক্রান্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের টাস্ট্রি ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে ফোন কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পাওয়া দল ও জোটের নেতারা এই সাক্ষাৎকে শুধু ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় হিসেবে অবহিত করেছেন। তবে এই সাক্ষাতে দলের ব্যাপক প্রভাব পড়বে তাও স্বীকার করেছেন। বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, দলের নেতৃত্বে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই আছেন। তবে খালেদা জিয়া এখন মুক্ত, তাঁর প্রভাব দলে স্পষ্ট। এ ছাড়া মুক্তির শর্ত এবং আইনগত বিষয়েও তিনি সচেতন। সেভাবেই তিনি তার অবস্থানে থাকবেন। মুক্ত নেত্রীর সঙ্গে হরহামেশা যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও দলে খালেদা জিয়ার একটা প্রভাব তারা অনুভব করতে পারছেন। দল অনেকটা চাঙা। শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে দেশবাসীর প্রতি যে বার্তা তিনি দিচ্ছেন তাতে নেতারা সন্তুষ্ট। বিএনপি নেতারা জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। করোনায় উদ্ভূত সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের চেয়ারপারসন খুবই উদ্বিগ্ন। বাসায় নিয়মিত টিভি দেখে ও পত্রিকা পড়ে এবং সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। নেতাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে এই মহামারি প্রতিরোধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এবং অসহায় গরিব মানুষের পাশে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে দাঁড়াতে নেতাকর্মীসহ সমাজের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলীয় প্রধান। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি প্রধান মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আলস্নাহর কাছে দোয়া করেছেন, দেশের মানুষকে এই মহামারির আগ্রাসন থেকে মহান রাব্বুল আলামীন যেন রক্ষা করেন। এ ছাড়া দেশের এ ভয়াবহ সঙ্কটকালে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলের নেতাকর্মীসহ দেশের বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। এদিকে দলীয় নেতাদের বাইরে খালেদার জিয়ার ঐক্যফ্রন্টে এক নেতাকে সাক্ষাৎ দেওয়া ও আরেক নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলের আলোচনা হচ্ছে। ঐক্যফ্রন্টকে কি বার্তা দিলেন দলীয় প্রধান তা জানতেও অনেকে কৌতুহলী। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্ন বলেন, 'উনি কেমন আছেন, তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক আলাপ হয়নি।' ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ কয়েক নেতা এবং বিএনপির একটি সূত্র জানায়, অনেকটা স্তিমিত জোট ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে এখনো আশাবাদী খালেদা জিয়া। সাক্ষাৎপ্রাপ্ত বিএনপির সিনিয়র নেতারা এনিয়ে খালেদা জিয়ার ইতিবাচক মনোভাব টের পেয়েছেন। এই জোটের আরেক শীর্ষ নেতা জানান, জোট নিয়ে বিএনপির অনেকের মধ্যে সমালোচনা থাকলেও খালেদা জিয়া ইতিবাচকই। তিনি এই জোটকে কার্যকর দেখতে চান। রাজনৈতিক কোনো দলের না হলেও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি চিকিৎসক জাফরুলস্নাহ চৌধুরী ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা। ঐক্যফ্রন্ট ও খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'উনি হয়তো জোট নিয়ে পজিটিভ। রাজনীতি না থাকলে কারও জন্যই লাভ হবে না উনি হয়তো সেটা বুঝেছেন। আর সেটা করতে হলে সবাইকে নিয়েই করতে হবে।'