শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিষাক্ত স্পিরিটে প্রাণ গেল ২১ জনের

যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ মে ২০২০, ০০:০০

বিষাক্ত 'স্পিরিট' পান করে উত্তরের তিন জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১ জন। এর মধ্যে রংপুরে ১০ জন, দিনাজপুরের বিরামপুরে ৯ জন ও বগুড়ার ধুনটে ২ জনের মৃতু্য হয়েছে। ঈদের দিন থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব মৃতু্যর ঘটনা ঘটে। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

রংপুর : রংপুরে বিষাক্ত স্পিরিট পানে ১০ জন মারা গেছেন। তারা জেলার পীরগঞ্জ ও সদর উপজেলার বাসিন্দা। রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ মে সকালে বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নুর ইসলাম (৩০), রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের সরোয়ার হোসেন (৩১) ও মোস্তফা কামাল (৩০) মারা যান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ দল প্রায়ই শ্যামপুর বাজার এলাকায় মদ ও বিষাক্ত স্পিরিট পানের আসর বসায়। বিশেষ করে ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের আসর আরও জমজমাট হয়ে ওঠে। ঈদের দিন সোমবার শ্যামপুর বাজার এলাকায় নেশাজাতীয় নিষিদ্ধ স্পিরিট পান করেন কয়েকজন। এক পর্যায়ে তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন।

রংপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

এদিকে, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাটে বিষাক্ত মদ পানে ঈদের দিন থেকে পরবর্তী দু'দিনে সাতজনের মৃতু্য হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ১৫ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে বাড়িতে ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, নওশা মিয়া (৫২), সেলিম সরকার (৫০), দুলা মিয়া (৫০), আব্দুর

রাজ্জাক (৩৮), জাহিদুল ইসলাম (৪০), চন্দন সরকার (২৮)।

পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় নেশাজাতীয় বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে মৃতু্যর সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিরামপুর উপজেলার মামুদপুর এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে আব্দুল আলিম (৩০) এবং বুধবার রাতে একই এলাকার আবদুল আজিজের ছেলে সোহেল রানা (৩০) ও আবুল হোসেনের ছেলে মনোয়ার হোসেন (৪২)-এর মৃতু্য হয়।

এর আগে বুধবার বিকেলে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই উপজেলার ইসলামপাড়ার তাপস কুমারের ছেলে অমৃত রায় (২৫) মারা যায়। দুপুরে মামুদপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও তার স্ত্রী মনজু আরা (৩৫) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মঙ্গলবার রাতে একই গ্রামের আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মতিন (২৭), তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আজিজুল ইসলাম (৩৩) ও সুলতান মাহমুদের ছেলে মহসিন আলী (৩৮) নিজ বাসায় মারা যান।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিরামপুর উপজেলার মামুদপুর এলাকার কয়েকজন হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকান থেকে বিষাক্ত অ্যালকোহল/স্পিরিট জাতীয় তরল কিনে পান করে। রাতে আব্দুল মতিন, আজিজুল ইসলাম ও মহসিন আলী নিজ নিজ বাসায় মারা যান। বুধবার দুপুরে শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মনজু আরা, বিকেলে অমৃত রায় ও রাতে সোহেল রানা ও মনোয়ার হোসেন মারা যান।

বিরামপুরের ওসি জানান, বিষাক্ত স্পিরিট বিক্রির ঘটনায় বুধবার পৌর এলাকার একটি হোমিও ফার্মেসির মালিক আব্দুল মান্নানসহ অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। পরে বুধবার রাতেই আব্দুল মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হাসপাতালে ভর্তি দুজনের বরাতে বিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মিথুন সরকার বলেন, 'তারা মান্নানের হোমিও ফার্মেসি থেকে রেক্টিফায়েড স্পিরিট কিনেছিল। আরও কয়েকটি হোমিও দোকানে স্পিরিট বিক্রি হয় বলে তারা খবর দিয়েছে।'

তবে স্পিরিটের সঙ্গে অন্য কিছু মেশানো হয়েছিল কিনা সেটা ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বগুড়া : বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বিষাক্ত মদ (রেকটিফাইড স্পিরিট) পানে দুই ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে।

নিহতরা হলেন, ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের ইশ্বরঘাট গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে আল আমিন (৩০) ও একই গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে আব্দুল আলিম (৩০)।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপাসিন্ধু বালা।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আব্দুল আলিমের মৃতু্য হয়। এর আগে বুধবার বিকেলে আল আমিন নামের ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার কালেরপাড়া ইউনিয়নের ইশ্বরঘাট গ্রামের আল আমিন ও আব্দুল আলিম বুধবার তাদের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে যান। ঘুরতে গিয়ে তারা বিষাক্ত মদ (রেকটিফাইড স্পিরিট) পান করেন। পরে দুপুরে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। বিকাল ৩টার দিকে নিজেদের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন আল আমিন ও আব্দুল আলিম। এক পর্যায়ে বিকাল ৫টায় আল আমিন নিজ বাড়িতে মারা যান।

এদিকে স্বজনরা অসুস্থ আব্দুল আলিমকে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে যান। সেখানে মদ হিসেবে রেকটিফাইড স্পিরিট পানের তথ্য প্রকাশ করেন আব্দুল আলিম। পরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য আব্দুল আলিমকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় আব্দুল আলিমের মৃতু্য হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. গাজী মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানান, বিষাক্ত মদ (রেকটিফাইড স্পিরিট) পান করে অসুস্থ হলে আব্দুল আলিমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে আনা হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপাসিন্ধু বালা জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। রেকটিফাইড স্পিরিট পান করে আল আমিন ও আব্দুর রশিদ নামের দুজনের মৃতু্য হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100584 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1