করোনা ঝুঁকিতেই খুলছে সব, কী হবে স্বাস্থ্যবিধির

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশে করোনা পরিস্থিতি এখন অবনতির দিকে। গত কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই কম-বেশি ২০ জনের মৃতু্য হচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছে দুই হাজার ২৯ জন। সব মিলিয়ে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪০ হাজার। আর এ পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ৫৫৯ জন। সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিতে সরকার ৩০ মের পর ছুটি আর না বাড়িয়ে সবকিছু সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বিধি কি সেভাবে মেনে চলা হচ্ছে? সীমিত আকারে সব খুলে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধির হালই বা কী হবে? জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণ পরিস্থিতির এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরি প্রয়োজনীয় কাজের পরিসর আরও বাড়ানো যেত। কিন্তু সবকিছু উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলে বিপদের ঝুঁকি আরও বাড়বে। তবে যেহেতু খুলেই দেওয়া হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে। এগুলো ঠিকমতো মানা হচ্ছে কিনা, তা অফিসের ভেতরে-বাইরে থেকে তদারক করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের করা ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণের (প্রজেকশন বা পূর্বাভাস) তথ্য বলছে, ৩১ মে পর্যন্ত ৪৮ থেকে ৫০ হাজার মানুষ সংক্রমিত হতে পারেন। মারা যেতে পারেন ৮০০ থেকে এক হাজার মানুষ। এ পর্যন্ত এই পূর্বাভাসের কাছাকাছি দেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৩০ মের পর আর সরকারি ছুটি বাড়ছে না। সীমিত আকারে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত এবং শিল্প-কলকারখানা খুলে দেওয়া হবে। সীমিত আকারে সীমিত যাত্রী নিয়ে গণপরিবহণ, যাত্রীবাহী নৌযান ও ট্রেনও চলবে। এমনকি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিমান চলাচল করতে পারবে। তবে আপাতত বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জীবন ও জীবিকা- এই দুটো বিষয় মাথায় রেখেই সীমিত আকারে অফিস-আদালত ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য ভেতরে ভেতরে অবশ্য সরকার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে। অফিস খুললে কীভাবে চলতে হবে, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ আগেই ১৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এই নির্দেশনার মধ্যে সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১১ মে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এই ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয়। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয়সংখ্যক জীবাণুমুক্তকরণ টানেল স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া, অফিস চালুর আগে অবশ্যই প্রতিটি অফিসকক্ষ, আঙিনা বা রাস্তাঘাট জীবাণুমুক্ত করা, প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার বা থার্মোমিটার দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে অফিসে প্রবেশ করানো, অফিসের পরিবহণগুলো অবশ্যই শতভাগ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা এবং যানবাহনে বসার সময় কমপক্ষে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। সার্জিক্যাল মাস্ক শুধু একবার (ওয়ানটাইম) ব্যবহার করা যাবে। তবে কাপড়ের মাস্ক সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। যাত্রার আগে ও যাত্রাকালীন পথে বারবার হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা, খাবারের সময়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা, অফিসে কাজ করার সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, কর্মস্থলে অবশ্যই মাস্ক পরার পাশাপাশি ঘন ঘন সাবানপানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিয়মিত মনে করিয়ে দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা, তা পরিদর্শন দলের মাধ্যমে তদারক করতে হবে। এছাড়া দৃশ্যমান জায়গায় ছবিসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশনা ঝুলিয়ে রাখা এবং কাউকে অসুস্থ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বৃহস্পতিবার বলেন, প্রথমত সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখীর এই সময়ে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জনস্বাস্থ্যের বিপদের ঝুঁকি আরও বাড়বে। আরও সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। জরুরি প্রয়োজনের পরিসর আরও বাড়ানো যেত। এখন সরকার আত্মসামাজিক ও প্রশাসনিক কারণে খুলছে কিনা, সেটি বলা যাচ্ছে না। তবে এখন যেটা করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মানা হচ্ছে কিনা, সেটি কঠোরভাবে দেখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা, সেটি অফিসের ভেতরে এবং বাইরে থেকে তদারক করা দরকার।