করোনাভাইরাসের জিন বিন্যাস উন্মোচন বিসিএসআইআরে

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশের তিনজন কোভিড-১৯ রোগীর নমুনা থেকে নতুন করোনাভাইরাসের সম্পূর্ণ জিন বিন্যাস বা জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা পরিষদ-বিসিএসআইআরের জিনোমিক রিসার্চ গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা। গবেষণাগারের প্রধান সেলিম খান জানিয়েছেন এই তথ্য। তিনি বলেন, 'তিনজন কোভিড-১৯ রোগীর সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সের পর ডেটা অ্যানালাইসিসে দেখা যায় অ্যামাইনো এসিড লেভেলে মোট নয়টি ভেরিয়েন্ট রয়েছে।' যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, মৃতু্য হয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষের। এমন অবস্থায় নানা দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাক্সিন ও ওষুধ আবিষ্কারের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সেলিম খান বলেন, 'ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করতে গেলে তার হোল (সম্পূর্ণ) জিনোম সিকোয়েন্সিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে উহানে যে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল, আমরা তার প্রেক্ষিতে দেখছি, ভাইরাস ক্রমাগতভাবে তার জেনেটিক বৈশিষ্ট্য পালটে ফেলছে। এখন জিনোম সিকোয়েন্সিং করেই আমরা ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের পথ পাব।' 'ডাটা অ্যানালাইসিসে বাংলাদেশের এই ভাইরাসটির সাথে সবচাইতে বেশি মিল (৯৯.৯৯ শতাংশ) পাওয়া যায় ইউরোপিয়ান উৎসের; বিশেষ করে সুইডেনের সঙ্গে। বিস্তারিত জানার জন্য বিসিএসআইআরের তিনটিসহ বাংলাদেশে সর্বমোট ২৩টি মাত্র ফুল সিকোয়েন্সিং ডাটা মোটেই যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, 'উৎস, ক্লাস্টার, ট্রান্সমিশন ডাইনামিক্স, মলিকুলার ডেটিং, ভ্যাক্সিন ডিজাইনসহ অন্যান্য গবেষণা কাজ বেগবান করার জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন অনেক বেশি সিকোয়েন্সিং ডাটা। তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সম্ভাব্য সব এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে বিসিএসআইরের জিনোমিক রিসার্চ গবেষণাগারে সিকোয়েন্সিং করার নির্দেশনা দিয়েছে।' জিনোম হলো প্রাণী বা উদ্ভিদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের বিন্যাস বা নকশা। কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের জিনোমে নিউক্লিওটাইডগুলো কীভাবে বিন্যস্ত আছে তার লিপিবদ্ধ করাকে বলে জিনোম সিকোয়েন্সিং। এই নকশার ওপরই নির্ভর করে ওই প্রাণী বা উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য। এর আগে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) গবেষকরা নতুন করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন। এ ছাড়া নতুন এই ভাইরাসের জিন রহস্য উন্মোচনে বিস্তৃত গবেষণা শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জিনোম সিকোয়েন্সিং করার জন্য বিসিএসআইআরের জিনোমিক রিসার্চ গবেষণাগারের বিজ্ঞানীদের নমুনা সরবরাহ করেছে বাংলাদেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার। সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পর বিশ্বব্যাপী ইনফ্লুয়েঞ্জা তথ্য সরবরাহকারী জার্মানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জিআইএসএআইডিতেও তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সেই তথ্য তাদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হতে যাচ্ছে বলে জানান সেলিম খান। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা পরিষদে যাত্রা শুরু করে জিনোমিক রিসার্চ ল্যাব। জিনোমিক গবেষণার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং (এনজিএস) প্রয়োগ করে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে এই ল্যাবের যাত্রা শুরু হয়, যার অন্যতম লক্ষ্য ছিল পারসোনাল মেডিসিন। সেলিম খান জানান, করোনাভাইরাসের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করতে তারা নেক্সটসেক-৫০০ মেশিন ব্যবহার করেছেন। নেক্সটসেক মেশিনের সাহায্যে জিনোমিক রিসার্চ ল্যাব ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাংগাস সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ শুরু করেছিল।