প্রশাসনের ৬৭ কর্মকর্তা আক্রান্ত,মৃত্যু ৩ জনের

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২০, ০০:০০

বিডি নিউজ
কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রভাগে দায়িত্ব পালন করা প্রশাসন ক্যাডারের ৬৭ জন কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে মাঠ প্রশাসনেরই ৪৮ জন। এখন পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারের তিনজন কর্মকর্তা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত আরও চারজন কর্মকর্তাও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত তাদের ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং মৃতদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম-সচিব (নগর উন্নয়ন-২ অধিশাখা) সায়লা ফারজানা শুক্রবার রাতে জানান, ২৮ মে পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারের ৬৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। 'তাদের মধ্যে নেগেটিভ হয়েছেন ৪০ জন, এখনো পজিটিভ আছেন ২৭ জন।' আক্রান্তদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে জানিয়ে সায়লা বলেন, 'আক্রান্ত কর্মকর্তাদের কোনো সমস্যা হলে সহায়তা করা হচ্ছে। কারও ডাক্তারের হেল্প লাগলে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেকে হাসপাতালে যেতে পারছেন না, সে ক্ষেত্রে তাদের ডাক্তারদের সঙ্গে লিঙ্ক করিয়ে দেয়া হচ্ছে। যারা বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন, তারা উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা নিচ্ছেন, সবাইকে তো হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না। কাউকে হাসপাতাল ভর্তি করার প্রয়োজন হলে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলি। তালিকা দেখে সিনিয়র স্যাররা এসব করছেন।' প্রশাসন ক্যাডারের আক্রান্ত কর্মকর্তাদের নামের একটি তালিকা হাতে পেয়েছে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সেখানে দেখা যায়, একজন জেলা প্রশাসক (ডিসি), কয়েকজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং বেশ কয়েকজন সহকারী কমিশনার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া সরকারের অতিরিক্ত সচিব থেকে শুরু করে যুগ্ম-সচিব, উপ-সচিবরাও এই তালিকায় রয়েছেন। যেসব কর্মকর্তার এখনো কোভিড-১৯ পজিটিভ আছে, তাদের বেশিরভাগই নিজের বাড়ি, সরকারি বাংলো ও কর্মস্থলে আইসোলেশনে আছেন। আর হাসপাতালে ভর্তি আছেন চারজন। কোভিড-১৯ নেভেটিভ আসার পর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা পস্নাজমা দিতে চান বলে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনকে জানিয়েছেন। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড দুই হাজার ৫২৩ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪২ হাজার ৮৪৪ জন। বাংলাদেশে এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৮২ জন। ২৭ জনের এখনো পজিটিভ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, কেরানীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা পারভীন ও কামরুল হাসান সোহেল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. হাবিবুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. খাইরুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মো. মনিরুজ্জামান, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক এসএম শফিক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) বাবুল কুমার সাহার কোভিড-১৯ পজিটিভ। জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাউল সাবেরিন, মুন্সীগঞ্জ ডিসি অফিসের সহকারী কমিশনার মো. ইলিয়াস শিকদার, ঢাকার লালবাগ রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম-প্রধান মো. মহিউদ্দিন কাদেরী, মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইরিন আক্তার; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ হাসান, মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসান বিন মুহাম্মদ আলী এবং জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া সিলেট ওসমানীনগরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফসানা তাসলিম, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মাসুদুর রহমান, লক্ষ্ণীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. রাজিব হোসেন, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপ-প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মাহমুদা হাসান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা নাজমুল হুদা শামীম এবং নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. জাফর আরিফ চৌধুরীর কোভিড-১৯ পজিটিভ। তাদের বাইরে অবসরপ্রাপ্ত সচিব বজলুর করিম চৌধুরীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আক্রান্তের পর এখন নেগেটিভ ৪০ জনের বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এসএম হারুন অর রশীদ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্ট (যুগ্ম-সচিব) শরীফ মো. মাসুদ, আইসিটি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মুনিমা হাফিজ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (উপ-সচিব) শাহ মোহাম্মদ মাহবুব, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপ-সচিব) মো. ওয়াহেদুর রহমান, জেদ্দার লেবার কাউন্সিলর মো. আমিনুল ইসলাম, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব আবু রায়হান মিঞা, জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব তাহমিনা বেগম, মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খান মো. নাজমুস সোয়েব এবং হবিগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে ইশরাতের কোভিড-১৯ পজিটিভ হলেও এখন তারা নেগেটিভ। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান রুহুল ইসলাম, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী রড়ুয়া, টঙ্গীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ পাভেল, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মতিউর রহমান, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং, নরসিংদীর রায়পুরার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুর রহমান খোন্দকার, জামালপুর সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা বেগম, কক্সবাজারের চকোরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী নূর খান এবং ভৈরবের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিমাদ্রী খীসাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও এখন নেগেটিভ। এ ছাড়া ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (এনডিসি) অরুন কৃষ্ণ পাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার তানিয়া তাবাসসুম, নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শাখাওয়াৎ জামিল সৈকত, চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মারুফা সুলতানা খান হীরামনি, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার শিবানী সরকার, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ফারজানা আকতার ও মো. কামরুল হাসান মারুফ, নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মেহেদী হাসান কাওসার, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আফিয়া আমিন পাপ্পা ও আমেনা বেগম, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার নুসরাত জাহান, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আবদুল মতিন খান, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. ফয়জুর রহমান ও এবিএম সারওয়ার রাব্বি, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. আমজাদ হোসেন এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজমুন নাহারের এখন কোভিড-১৯ নেগেটিভ। মারা গেছেন যারা দুদকের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) জালাল সাইফুর রহমান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকার এবং অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা অতিরিক্ত সচিব মো. তৌফিকুল আলম কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব শামসুল কিবরিয়া চৌধুরী, আ. রশিদ ইসহাক ভূইয়া এবং ইপিসিএস (ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস) কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।