ট্রেন-লঞ্চ চলাচল শুরু বাস চলবে আজ

ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই স্বাভাবিক কর্মকান্ডে দেশ

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশে সংক্রমণের মাত্রা উর্ধ্বমুখী থাকলেও ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর ঝুঁকি আর শঙ্কার মধ্যেই খুলতে শুরু করেছে সব; মানুষকে 'স্বাভাবিক' কর্মকান্ডে ফিরতে হচ্ছে নতুন বাস্তবতায় অভ্যস্ত হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে। এখন সবাইকে বাইরে বের হতে হবে স্বাভাবিক সময়ের মতোই, কিন্তু সর্বক্ষণ সচেতন থাকতে হবে নিজে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এবং অন্যকে বাঁচাতে। দূরত্ব রক্ষা করে চলা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিকে করে নিতে হবে জীবনের সঙ্গী। রোববার থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে সব সরকারি অফিস; সারাদেশে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলও শুরু হয়েছে। ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দূরপালস্নার বাস-মিনিবাস চলাচল শুরু হচ্ছে আজ সোমবার থেকে। বিপণিবিতান আর দোকানপাট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল রোজার মধ্যেই। তবে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ এই মুহূর্তে খুলছে না। গত ২৬ মার্চ থেকে চলা সাধারণ ছুটির মেয়াদ না বাড়িয়ে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। এই সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণের পাশাপাশি সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরে অফিসে আসতে বলা হয়েছে। তবে বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তানসম্ভবাদের এ সময় অফিসে আসা মানা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, 'আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় সবাই অফিসে এসেছেন। আমিও অফিসের একটা কাজে মন্ত্রণালয়ে আছি। কাজ শেষ করে অফিসে চলে যাব।' জরুরি খাত হিসেবে ব্যাংকগুলো আগে থেকেই সীমিত পরিসরে খোলা ছিল। রোববার থেকে আগের সূচিতে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা জাকারিয়া হোসেন বলেন, 'আমরা ব্যাংকাররা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছি। এ কারণে ব্যাংকে আসতে ভয় লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই। সরকারি নির্দেশ তো মানতেই হবে।' বিআরটিসি ছাড়া অন্য বাস বা মিনিবাস রোববার না নামলেও সকালে মিরপুর, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, তেজগাঁও এলাকা ঘুরে সড়কে প্রচুর যানবাহন চলতে দেখা গেছে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকরণ পরে সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। লকডাউন শুরু হওয়ার পর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের যেসব চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল, সেগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যালে যানবাহনের ভিড় দেখা গেছে। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার বাসিন্দা ওষুধ ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সাধারণ ছুটি তুলে দেওয়ায় অর্থনীতির চাকা হয়তো কিছুটা সচল হবে, তবে মহামারি আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা কাজ করছে তার মনে। তিনি আরও বলেন, 'আমাদের দেশের মানুষ এমনিতেই নিয়ম মানে না। বলা হয়েছে নিয়ম মেনে করা হবে, কিন্তু লকডাউন চলার সময়ই অনেকে নিয়ম মানেনি। এখন এভাবে আরও খুলে দিলে মহামারি আরও বেড়ে যাবে। এটা যে কঠোরভাবে মানা হবে সে বিষয়টা নিশ্চিত করবে কে?' রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাপড় বিক্রি করেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার শামসুল হক। তিনি বলেন, লকডাউনে জীবন ও জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিলেন তিনি। সীমিত পরিসরে সব খোলা শুরু করায় আবার হয়তো ব্যবসা চালু হবে তার। 'পরিবার নিয়ে খুব কষ্ট করছি এই দুই মাস। আহন চালু হইল, কিছু কাপড় কিন্না আবার বাইর হমু।' সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর সব সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগও পুরো সময় চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ খোলা থাকবে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সতর্কতা হিসেবে গত ৪ এপ্রিল সব সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অফিস-আদালত চালু হওয়ার পর সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা এসেছে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে। বাইরে চলাচলের সময় মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনি ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লকডাউন শেষে অফিস খোলার আগের দিন শনিবার অধিদপ্তরের এক আদেশে 'অতি জরুরি প্রয়োজন' ছাড়া রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণে বাংলাদেশে রোববার পর্যন্ত মারা গেছেন ৬৫০ জন। এ পর্যন্ত ৪৭ হাজার ১৫৩ জন রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য সরকারিভাবে জানানো হলেও অনেকেই এখনো পরীক্ষার বাইরে রয়ে গেছেন। প্রাণচঞ্চল রেলস্টেশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুই মাস ছয় দিন পর সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে আন্তঃনগর ট্রেন। রোববার সকালে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এসেছে ট্রেন। স্টেশনগুলোতেও তাই দেখা গেছে প্রাণচাঞ্চল্য। প্রথম ধাপে বিভিন্ন রুটে মোট আট জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে। জানা যায়, সব স্টেশনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে জীবাণুনাশক স্প্রে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, শারীরিক দূরত্ব মেনে আসনসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। অনেকটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম দিন যাত্রীদেরও ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। রেলওয়ের তথ্যমতে, দ্বিতীয় ধাপে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে আগামী ৩ জুন থেকে আরও ১১ জোড়া ট্রেন চালানো হবে বিভিন্ন রুটে। রোববার (৩১ মে) সকালে সিলেট থেকে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে কালনী এক্সপ্রেস ছেড়ে এসেছে ঢাকার উদ্দেশে। চট্টগ্রাম থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকার পথে রওয়ানা দিয়েছে সকাল ৭টায়। চট্টগ্রাম থেকে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এসেছে বিকাল ৫টায় এবং চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে সকাল ৯টায়। রাজশাহী থেকে বনলতা এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে সকাল সাড়ে ৭টায়। খুলনা থেকে সকাল ৮টায় চিত্রা এক্সপ্রেস ঢাকার পথে রওয়ানা দিয়েছে। পঞ্চগড় থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এসেছে দুপুর সাড়ে ১২টায়। এছাড়াও লালমনিরহাট থেকে লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এসেছে সকাল ১০টায়। এই আট জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন রোববার থেকে শিডিউল অনুযায়ী চলাচল করবে। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ৩ জুন থেকে আরও ১১ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। সেগুলো হলো ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটে তিস্তা এক্সপ্রেস, ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস, ঢাকা-চিলাহাটি রুটের নীলসাগর এক্সপ্রেস, খুলনা-চিলহাটি রুটের রূপসা এক্সপ্রেস, খুলনা-রাজশাহী রুটের কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, রাজশাহী-গোয়ালন্দঘাট রুটের মধুমতি এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের মেঘনা এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, ঢাকা-নোয়াখালী রুটের উপকূল এক্সপ্রেস, ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটের কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও ঢাকা-চাঁদপুর রুটের ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস। তবে আপাতত বিমানবন্দর, টঙ্গী, জয়দেবপুর স্টেশনে এসব ট্রেন থামবে না। যাত্রীদের কমলাপুর থেকেই ট্রেনে উঠতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৫ মার্চ থেকে বন্ধ করা হয় যাত্রীবাহী ট্রেন। নৌযান চলাচল শুরু ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর রোববার সকালে সারাদেশে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। ঢাকা নদীবন্দরসহ সারাদেশের ৪২টি রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল শুরু করেছে। যাত্রীবাহী লঞ্চের যাত্রীরা নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষায় ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে ভিড় করেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ২৪ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। ঢাকা নদীবন্দরের নৌযান পরিদর্শক হুমায়ুন কবির জানান, রোববার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা নদীবন্দরে লঞ্চ এসেছে ৬টি এবং বন্দর ছেড়ে গেছে ১৩টি। রোববার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, লঞ্চের যাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব না মেনে টার্মিনালের পন্টুনে ঠাসাঠাসি করে বসে আছেন। এ সময় অনেকেই মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন না। ভোলাগামী লঞ্চযাত্রী ইদ্রিস মিয়া বলেন, 'শনিবার জানতে পেরেছি লঞ্চ চলাচল শুরু করবে। তাই ভোলা যাওয়ার উদ্দেশে সদরঘাট টার্মিনালে এসেছি। লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষায় টার্মিনালে বসে আছি।' বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিস্নউটিএ) পরিচালক (বন্দর ও পরিবহণ) কাজী ওয়াকিল নওয়াজ বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চযাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিআইডবিস্নউটিএ ও লঞ্চমালিকদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের প্রবেশপথে ছয়টি জীবাণুনাশক টানেল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জীবাণুনাশক দ্রব্য ছিটানো হচ্ছে। সীমিত পরিসরে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। ওয়াকিল নওয়াজ আরও বলেন, যেসব লঞ্চ আসা-যাওয়া করবে, সেসব লঞ্চে যাত্রীর মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে হবে। বাস চলবে আজ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বন্ধ হওয়ার দীর্ঘ ২ মাস ৭ দিন পর, আজ সোমবার (১ জুন) থেকে শুরু হবে গণপরিবহণ ও দূরপালস্নার বাস চলাচল। বাস চলাচলের উপযোগী করতে রোববার প্রস্তুতি নিয়েছে পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকেরা। বাস ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাসে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত ও জীবাণুনাশক স্প্রে করা হবে। এছাড়াও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হবে। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বাস না চালানোয় বাসে মরিচা ধরে আছে। এসব বাস ধুয়ে মুছে পরিষ্কারের পাশাপাশি টেকনিক্যাল সমস্যাও সমাধান করছে মেকানিকরা। একই চিত্র দেখা যায় রাজধানীর মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে। পরিবহণ শ্রমিকরা গাড়ি প্রস্তুত করছেন। গাড়ি ধোয়া মোছার পর জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। স্টার লাইন পরিবহণের পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা বাস চলাচলের উপযোগী করছি। বাসে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিয়মিত জীবাণুনাশক স্প্রে করা হবে। এছাড়াও হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকবে। ইউনিক পরিবহণের চালক সলিম মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাস বন্ধ রয়েছে। তাই ধোয়া মোছার পাশাপাশি গাড়িতে কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন আমাদের মেকানিকরা। যাত্রাবাড়ীতে ইউনিক পরিবহণের ডিপোতে গিয়ে দেখা যায়, বাস প্রস্তুত করে সারি সারি লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। সবগুলোই নতুন করে চেক করা হচ্ছে। এনা পরিবহণের চালক পলাশ হাসান বলেন, আমাদের কোম্পানির সব বাসই চালানোর জন্য প্রস্তুত করছে। এখন আমরা নিজেরা গাড়ি চালিয়ে চেক করে নিচ্ছি। দূরপালস্নার বাসের বাইরেও রাজধানী ও আশপাশের জেলায় চলাচলকারী বাসও প্রস্তুত করছে পরিবহণ মালিক শ্রমিকরা। বাসের আসনে নতুন করে কাভার লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উলস্নাহ বলেন, সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই আমরা কাজ শুরু করি। এখন বাসগুলো চলাচলের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে আমরা সব চালককে সর্বোচ্চ নির্দেশনা দিয়েছি। যাত্রীরাও যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস ভ্রমণ করেন, আমরা সেই অনুরোধ করব। আগের রূপে সচিবালয় বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেওয়া অতি ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে কর্মচাঞ্চল্যহীন প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে সচিবালয়ে ফিরছে আগের রূপে। করোনাভাইরাস সঙ্কটকালে বিধি-নিষেধ শিথিল করায় দুই মাস পর রোববার থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে কাজ শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে সংক্রমণের আতঙ্ক নিয়েই তারা অফিসে এসেছেন। তবে সতর্ক রয়েছেন সবাই। সকাল থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করতে শুরু করলেও দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারছে না। সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রাজীব ঘোষ বলেন, যারা হেঁটে প্রবেশ করছেন, তাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন না আর সাংবাদিকের প্রবেশের বিষয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি জানান, 'যেসব কর্মকর্তা গাড়িতে প্রবেশ করবেন, তাদের নিজ নিজ ভবনে প্রবেশমুখে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করা হবে।' কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যর সংখ্যা যখন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সেই পরিস্থিতিতে খুলে দেওয়া হলো অফিস। গত ২৬ মার্চ থেকে চলা সাধারণ ছুটির মেয়াদ না বাড়িয়ে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণের পাশাপাশি সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরে অফিসে আসতে বলা হয়েছে। তবে বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তানসম্ভবাদের এ সময় অফিসে আসা মানা। সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হলেও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে রোববার থেকে যারা অফিস করছেন তারা অনেকেই সংক্রমণের আশঙ্কা ও আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। একাধিক কর্মকর্তা জানান, যেসব কর্মকর্তা গাড়ি নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করছেন তাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তারা সরাসরি অফিস কক্ষে যাচ্ছেন। সংক্রমণ শঙ্কায় সতর্কতা নিলেও আতঙ্ক প্রকাশ করে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কেউ যদি সংক্রমিত হয়ে থাকেন তা বোঝার উপায় নেই- এখানেই সবার ভয়। অফিসে আসাতে পুরো পরিবারই আতঙ্কে রয়েছে। সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনে কর্মরত এক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, দর্শনার্থী না থাকায় লিফটগুলোতে তেমন ভিড় নেই। তবে লিফটে চড়লে বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড়াতে বলা হয়েছে এবং প্রতিটি লিফটের সামনে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নৌ-মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সকাল থেকে তিনি অফিস করছেন এবং প্রায় সবাই অফিসের এসেছেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সুমন মেহেদী বলেন, 'প্রায় সব কর্মচারী-কর্মকর্তা অফিস করছেন। মুখে মাস্ক ও সতর্কতা অবলম্বন করে সবাই কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান প্রথম দিন হিসেবে উপস্থিতি অনেক ভালো। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তথ্য কর্মকর্তা শেফায়েত হোসেন বলেন, 'সকাল থেকে মোটামুটি সব কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করছেন।' এদিকে সচিবালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি দপ্তরেও কাজ শুরু হয়েছে। টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান জানান, সকাল থেকেই কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত হয়েছেন এবং সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। মাইক্রোবাসে প্রতি সিটে ২ জন করে কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতায়াতের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।