গণপরিবহণে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ছবিটি বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট থেকে তোলা -যাযাদি
রাজধানীতে গণপরিবহণে যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় গণপরিবহণের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাসে আগের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শ্যামলীতে ৮ নম্বর বাসের যাত্রী নূর আহমেদ জানান, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী। অফিসের জন্য গাবতলী মাজার রোডের বাসা থেকে নিয়মিত বাংলামোটরে যাতায়াত করতে হয় তাকে। তিনি বলেন, 'মাজার রোড থেকে নিয়মিত বাংলামোটর যেতে ১৫ টাকা লাগতো। সেই ভাড়া এখন দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকায়। অথচ সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু বাসের চালক-হেলপাররা তা মানছে না। আদতে এ দেশে কখনোই বাসভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার।' শুধু নূর আহমেদ নন, আরও অনেকেই বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দুই মাসেরও বেশি সময় রাজধানীসহ সারাদেশে গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ ছিল। সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সুপারিশে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারির পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ১ জুন থেকে আবারও চলছে বাস ও অন্যান্য যানবাহন। তবে এক আসনে যাত্রী ও এক আসন ফাঁকা রেখে স্বাস্থ্যবিধি মানলেও গণপরিবহণে ৬০ শতাংশ ভাড়ার অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। যদিও চালকদের দাবি, ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না। বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট ও শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই দিনের তুলনায় এ দিন বাসের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু যাত্রী তুলনামূলকভাবে কম। নিতান্তই খুব বেশি প্রয়োজন না হলে গণপরিবহণ এড়িয়ে চলছে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসচালকরা মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেন। বেশিরভাগ হেলপারের মুখে মাস্ক, হাতে গস্নাভস ও জীবাণুনাশকের বোতল দেখা গেছে। যাত্রীরা ওঠার সময় তাদের হাতে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। কয়েকটি বাসের কিছু আসন ক্রস চিহ্ন দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। যাত্রীরা এ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। কিন্তু ভাড়া নিয়ে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। বাসে আগের ভাড়ার চেয়ে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা জানিয়েছেন, ১০০ শতাংশ ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। যেমন ১০ টাকার ভাড়া ১৬ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও তারা গুনছেন ২০ টাকা। যাত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু চালক-হেলপারের দাবি, 'ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না। হয়তো দুই-এক টাকা কমবেশি হতে পারে। তাছাড়া যাত্রী সংখ্যা কম।' ফার্মগেটে বিআরটিসি বাসে অফিসগামী শাহীনুর রহমান বলেন, 'কাকলি থেকে বাংলামোটর যাচ্ছি। আগে এটুকু দূরত্বের ভাড়া ছিল ১০ টাকা। কিন্তু এখন ২০ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ নিচ্ছে বাসচালকরা।' বিআরটিসি বাসটির চালক কামালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ফার্মগেট থেকে মতিঝিলের ভাড়া কত? তার উত্তর, 'ফার্মগেট থেকে মতিঝিল আগে ১০ টাকা ছিল, এখন ২০ টাকা হয়েছে। যাত্রী কম, কিছু করার নাই মামা।' গত দুই দিনের তুলনায় বুধবার রাস্তায় বাসের সংখ্যা ছিল বেশি। এছাড়া প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহনের চাপ লক্ষ করা যায়। কারওয়ান বাজার মোড় পার হতে প্রতি সিগন্যালে ১০ মিনিটের বেশি সময় লেগেছে। এ কারণে কারওয়ান বাজার মোড় থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত গাড়ির জ্যাম দেখা গেছে। ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) কে. এম. শহীদুল ইসলাম সোহাগ নিশ্চিত করেছেন, আগের দুই দিনের মতোই গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক ছিল বুধবারও। প্রতিটি বাসের ৫০ শতাংশ আসন পূরণ হওয়ার কথা থাকলেও যাত্রী সংখ্যা কম থাকার কারণে তা হচ্ছে না। এদিকে, বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়ন কবির পলস্নব। প্রজ্ঞাপনটি দেখতে চেয়েছেন আদালত। তাই এখনো কোনো আদেশ হয়নি।