কোয়ারেন্টিনে বেশিরভাগ মন্ত্রী-এমপি

নিম্নবিত্তদের ত্রাণ বিতরণে ভাটা!

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০২০, ০০:০০

ফয়সাল খান
ত্রাণের আশায় অসহায় মানুষ -ফাইল ছবি
করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কাজে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। ঈদের পর থেকে সরকারি- বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণে তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। অথচ পবিত্র রমজান মাস এবং ঈদকে সামনে রেখে পালস্না দিয়ে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের। সূত্রমতে, সরকারি ত্রাণের পাশপাশি ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মীদেরও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে। সরকারের পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে খাদ্যসহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন অনেকেই। কেউ কেউ দুস্থদের তালিকা করে রাতের আঁধারেও বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী। 'ডাক্তারের কাছে রোগী নয়, রোগীর কাছে ডাক্তার' ব্যতিক্রমী স্বাস্থ্যসেবা চালু করেও নজির স্থাপন করেছিলেন অনেক নেতা। তবে ঈদের পর আগের সক্রিয় নেতাকর্মীদের এখন আর দেখা যাচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ত্রাণ বিতরণের লম্বা লাইনের ছবি নেই। শুধু ত্রাণ বিতরণই নয়, করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে নতুন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি তারা। অথচ করোনা বিস্তার রোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার গণভবনে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায় তিনি এ নিদের্শনা দেন। সরকারপ্রধানের কঠোর নির্দেশনার পরও চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো ত্রাণতৎপরতা চালাতে পারেননি এমপি-মন্ত্রী এবং ওয়ার্ড, ইউনিয়ন উপজেলা পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, মূলত স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি ও সিনিয়র নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া খাদ্যসামগ্রী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন তারা। বর্তমানে এসব জনপ্রতিনিধি ও নেতা ত্রাণ না দেওয়ায় তারাও বিতরণ করছেন না। সূত্রমতে, অনেক এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ ছিল। তারা স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে আছেন- এমন তথ্যও শোনা গেছে। ঈদের পর স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিন বা সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকা এমপি-মন্ত্রীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে বলে জানা গেছে। ঈদের প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের গুটিকয়েক নেতা ছাড়া ত্রাণ বিতরণে আর কাউকে দেখা যায়নি। অথচ দিন দিন করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বর্তমানে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও কঠোরভাবে লকডাউন বা কারফিউ দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। এই অবস্থায় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ত্রাণতৎপরতা জোরদার করা না হলে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনীতি চাঙা করতে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে ধর্মীয় উৎসবগুলোকে বেছে নেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। তখন নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন সহয়োগিতার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা করেন তারা। ফলে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রথম থেকে তাদের দেখা না গেলেও রমজান মাস এবং ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে ওঠেন বেশিরভাগ নেতা। কিন্তু ঈদ শেষ হওয়ার পর ওই সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ত্রাণ কার্যক্রম চোখে পরেনি। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ নেতারা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের সব শ্রেণির পেশার মানুষের পাশে থাকতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। এ ছাড়া লকডাউন শিথিল করার কারণে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কর্মে ফিরেছে। ফলে আগের মতো ত্রাণ দরকার নেই বলে দাবি করছেন অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীর এক নেতা যায়যায়দিনকে জানান, রোজার মাস আর ঈদের মধ্যে মানুষের চাহিদা বেশি থাকে। ওই সময় সবার সহানুভূতি ও দান করার আগ্রহও বেশি থাকে। সমাজের বিত্তবানরা এমনিতেই নিম্নবিত্তদের সহায়তা করে থাকেন। এবার করোনা থাকার কারণে রোজার মসে নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিতরণের পরিমাণ বেশি ছিল। যার কারণে বর্তমানে মনে হচ্ছে ত্রাণ বিতরণ কমে গেছে। অপর এক নেতা জানান, মূলত লকডাউনের কারণে ত্রাণ বিতরণের প্রয়োজন ছিল। লকডাউন শিথিল হওয়ার কারণে অনেকেই কাজে ফিরেছেন। সেক্ষেত্রে আগের মতো এত বেশি সংখ্যক মানুষের ত্রাণের প্রয়োজন হচ্ছে না। তাছাড়া সারাদেশে সরকারি খাদ্য ও নগদ সহায়তা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম যায়যায়দিনকে বলেন, দেশের প্রতিটি কাজেই জনপ্রতিনিধির গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই সব জনপ্রতিনিধিকে দেশের স্বার্থে এবং দেশের মানুষের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এই অবস্থান থেকে জনপ্রতিনিধিদের পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ হয়নি দাবি করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, দেশে করোনাভাইরাস আঘাত করার পর থেকেই আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রমে কোনো ধরনের নিষ্ক্রিয়তা নেই।