চট্টগ্রামে এক কিটে দুই পরীক্ষা, তবুও জট

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চট্টগ্রামে ছয় দিন ধরে এক কিটে চলছে দুটি নমুনার পরীক্ষা। তবুও জট কমাতে প্রায় তিন হাজার নমুনা পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষায় রোববার রাতে এসে পৌঁছানো প্রায় নয় হাজার কিট দিয়ে আরও প্রায় ১৫-১৮ দিনের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। তবে জট এড়াতে নমুনা সংগ্রহের কেন্দ্রগুলোতে টেলিফোন বা এসএমএসের মাধ্যমে নাম নিবন্ধন, স্যাম্পল দেওয়ার সময় নির্ধারণ এবং ফলাফল জানানোর পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর আগে শনিবার চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আগের কয়েকদিনের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। রোববার নমুনার জন্য ঢাকায় লোক পাঠানো হয়। তারপর রাতে এসে পৌঁছায় নয় হাজার কিট। অন্যদিকে ২৩ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম জেলার চারটি সরকারি ল্যাবে এক কিটে দুটি করে নমুনার পরীক্ষা শুরু হয়। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদক গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএলআরআই) এই পদ্ধতিতে সফল পরীক্ষার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রামের ল্যাবগুলোতে এ উপায়ে পরীক্ষার নির্দেশনা দেয়। ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবের প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, ট্রায়ালে সঠিক ফলাফল নিশ্চিত হওয়ায় এখন অর্ধেক পরিমাণ কিট দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। নমুনার পরিমাণও আনুপাতিক হারে অর্ধেক নেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, 'পরীক্ষায় কয়েকটি ধাপ আছে। আগে ফাইনাল রিঅ্যাকশন ভলিউম ৫০ মিলিমিটার কিট ব্যবহার করা হতো, এখন ২৫ মিলিমিটার দিয়ে আমরা করছি। এতে ২০টি কিট দিয়ে এখন ৩৫টির মতো নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।' বিআইটিআইডি ল্যাবের জন্য নতুন করে তিন হাজার কিট পাওয়া গেছে বলেও জানান ডা. শাকিল আহমেদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবের সদস্যসচিব ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসানও দুই হাজার কিট পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক ড. এ এম জুনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, 'গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা এক কিটে দুই নমুনা পরীক্ষা করছি। নতুন করে যে কিট পেয়েছি তাতে আমাদের ২০ দিনের মতো নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।' এক কিটে দুটি নমুনা পরীক্ষা করা হলেও রোববার পর্যন্ত চট্টগ্রামে জমে থাকা নমুনার সংখ্যা প্রায় ২৮০০। নমুনা দিয়ে ১২-১৫ দিনেও ফল পাচ্ছে না নগরী ও বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন পরে যে ফল আসছে তা নিয়েও সৃষ্টি হচ্ছে সন্দেহ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, ১০-১২ দিন পর যদি নমুনা পরীক্ষার ফল পায় তাহলে তা কতটা সঠিক সে সন্দেহ থাকাটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে হয়ত কেউ কেউ রিপোর্ট আসার আগেই মারা যাচ্ছেন। সিভিল সার্জন কার্যালয় চট্টগ্রামের ফেসবুক পেইজে প্রতিদিন তার আগের ২৪ ঘণ্টার ফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে প্রকাশিত ২৭ জুনের প্রতিবেদনে জুয়েল দত্ত নামের একজন লেখেন, '৮ তারিখের রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।' ২৬ জুনের প্রতিবেদনে সোহরাওয়ার্দী হাসান রনি লেখেন, '১৬ জুন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে টেস্ট করিয়ে আসলাম। এখনো রিপোর্ট পাইনি।' এছাড়া বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা উপজেলাগুলো থেকে সংগৃহীত নমুনার মধ্যে কত তারিখ পর্যন্ত ফল প্রকাশিত হয়েছে তাও জানতে চেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জমে থাকা নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানোর কথা জানান বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের উপপরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম। চট্টগ্রামে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষাবিষয়ক তদারকি কমিটির প্রধান ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'রোববার পর্যন্ত প্রায় ২৮০০ নমুনা জমে আছে। সেগুলো আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। চট্টগ্রামে আপাতত কিটের কোনো সংকট নেই। এখানে পরীক্ষার যে সক্ষমতা তার চেয়ে বেশি নমুনা যাতে উদ্ধৃত না হয় আর সেজন্য একটি সিস্টেম ডেভেলপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।' এর মাধ্যমে যেসব কেন্দ্রে নমুনা সংগ্রহ করা হয় সেখানে ফোনে, অনলাইনে ও এসএমএসের মাধ্যমে নমুনাদাতা সিরিয়াল নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত দিনে গিয়ে নমুনা দেবেন এবং এসএমএসের মাধ্যমেই নির্দিষ্ট দিনে ফল জানানো হবে বলেও জানান ডা. শফিকুল ইসলাম। এর আগে তীব্র জট সৃষ্টি হলে মধ্য জুনে প্রায় তিন হাজার এবং এর আগে আরেক দফায় এক হাজার নমুনা ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষা করানো হয়েছিল। চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, সহসা কিটের কোনো সমস্যা হবে না। আরও নয় হাজারের মতো কিট এসেছে। পরে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য কমিটি কাজ করছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ২৯ হাজার ১২০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে শুরুতে তিন পার্বত্য জেলা, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় চার হাজার নমুনা ছিল। সে হিসেবে জেলার প্রায় ২৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'ডিজিটালি নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি কোনো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কত শয্যা, কত খালি আছে বা খালি হচ্ছে সেসব তথ্যও একটি ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্মে আনা যায় কিনা তা নিয়ে কাজ করা হবে।' এদিকে সোমবার প্রকাশিত ফলে চট্টগ্রামে আরও ৩৪৬ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮০৩৫ জনে। সোমবার প্রকাশিত ফলের মধ্যে বেসরকারি শেভরন হাসপাতালে দু'দিনে ৩৫২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৭৭ জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে বলে জানানো হয়। তবে ২৭ ও ২৮ জুন এই হাসপাতালের কোভিড-১৯ পরীক্ষার কোনো ফল দেওয়া হয়নি। সে হিসেবে গত তিন দিনে এসব নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। শনাক্ত ৩৪৬ জনের মধ্যে ২৭৪ জন নগরীর এবং ৭২ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে, চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ১৭১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৬৫ জন।