১৩ ঘণ্টা কীভাবে বেঁচে ছিলেন সুমন ব্যাপারী!

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মঙ্গলবার স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুমন ব্যাপারী -যাযাদি

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন ব্যাপারী হাসপাতালের বেডে বসে দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, 'লঞ্চ যখন ডোবে, তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময় ঘুম ভাঙে। শুধু এটুকু বুঝতে পারলাম, লঞ্চটি ধাক্কা খাইল। আর কিছু খেয়াল নাই। কিসের মধ্যে ছিলাম আলস্নাহ জানেন, তবে ভেতরে এক জায়গায় খাড়ায় প্রথমে ছিলাম রড ধইরা।' দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জ ছেড়ে আসে, সে সময় তিনি ইঞ্জিন রুমের সাইডে বসা ছিলেন বলেও জানান। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে এ প্রতিবেদকের কথা হয় তার সঙ্গে। এ সময় সুমন ব্যাপারী বলেন, মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ি উপজেলার আব্দুলস্নাহপুর গ্রামে তার বাড়ি। তিনি একজন ফল ব্যবসায়ী। সদরঘাটের বাদামতলী ফলের আড়তেই তার ব্যবসা। ব্যবসার কাজেই তিনি ঢাকায় ফিরছিলেন। দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে সুমন বলেন, 'আমার কাছে মনে হইল ১০ মিনিট ছিলাম, আলস্নাহ যে ক্যামনে ১২-১৩ ঘণ্টা পার কইরা দিল তা বলতে পারি না। আমি ভেতরে কিসের মধ্যে ছিলাম, কিচ্ছু বুঝতে পারি নাই, তবে পানির তলে ছিলাম এইটুক জানি।' সেখান থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আলস্নাহ বাইর কইরা নিয়ে আসছে। বের হওয়ার সময় কিচ্ছু বুঝি নাই। বের হওয়ার পর আমারে উদ্ধার কইরা নিয়ে আসছে। পানির মধ্যে যখন ছিলাম, তখন সাঁতার কাটার ফোম দেখছিলাম চোখের সামনে, হাতরায় নিতে পারতেছিলাম না, পরে লোহার রড ধরে বসে ছিলাম।' নিশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল কি না জানতে চাইলে সুমন ব্যাপারী বলেন, 'নিশ্বাস আলস্নাহ দিছে। না দিলে তো মইরাই যাইতাম। ওপরে যখন উঠি, তখন কিছুই বুঝতে পারি নাই, ক্যামনে উঠলাম কীভাবে উঠলাম।' স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম এ সাত্তার সরকার জানান, সুমনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে এখনো। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন, কথাবার্তা বলছেন। আমরা কিছু টেস্ট করব, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।' এর আগে বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ১৩ ঘণ্টা পর এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর দেবাশীষ বর্ধন সোমবার বলেন, 'আমরা ধারণা করছি, উদ্ধার হওয়া এই ব্যক্তি সম্ভবত ইঞ্জিন রুমে ছিলেন। সাধারণত ইঞ্জিন রুম এয়ারটাইট হওয়ার কারণে সেখানে পানি প্রবেশ করে না। ১০টা ১০ মিনিটের দিকে কুশন পদ্ধতি ব্যবহার করে জাহাজ ভাসানোর চেষ্টা করা হলে সম্ভবত ইঞ্জিন রুম খুলে যায়। সে সময় তিনি বের হয়ে আসেন এবং উদ্ধারকর্মীরা তাকে উদ্ধার করেন।' ব্যাখা দিলেন বিশেষজ্ঞ এদিকে মর্নিং বার্ড থেকে জীবিত উদ্ধার যাত্রীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রশ্ন উঠছে। ১৩ ঘণ্টা পানির নিচে জীবিত থাকার বিষয়টি অনেকেই অস্বাভাবিক বলছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। ভ্যাকুয়াম তৈরি হওয়ায় তিনি শ্বাস নিতে পেরেছেন। তাদের বক্তব্য এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। অক্সিজেন আছে এমন কোনো জায়গায় আটকে ছিলেন ওই ব্যক্তি। বাতাসের চাপের কারণে লঞ্চের ওই জায়গায় পানি না থাকায় ডুবে থাকার কোনো চিহ্ন মেলেনি তার দেহে। সাবেক ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা ও অগ্নি নিরাপত্তা পরামর্শক সেলিম নেওয়াজ ভুঁইয়া বলেন, অলৌকিক কিছু হতে পারে না। বাস্তবসম্মত কিছু হলে এটাই হতে পারে, সেখানে বাতাস ছিল। এছাড়া সেখানেই অল্প অল্প করে শ্বাস নিয়ে বেঁচে ছিল। সে যদি পানিতেই না থাকে তাহলে তার শরীরে কোনো পরিবর্তন হওয়ার কথাই না। এভাবে ডুবে যাওয়া নৌযানের ভেতর বেঁচে থাকার বিষয়টি নতুন নয়। এর আগেও চাঁদপুরের ষাটনল এলাকায় দুই ব্যক্তি এবং নারায়ণগঞ্জে একটি ডুবে যাওয়া বাল্কহেড থেকে এক ব্যক্তিকে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া রানা পস্নাজা ট্র্যাজেডিতেও ঘটনার ১৭ দিন পর ধ্বংস্তূপ থেকে রেশমা নামে এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করে সেনা বাহিনীর সদস্যরা।