এক দশকে সর্বনিম্ন

পোশাক রপ্তানি আয়ে ধস!

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
কর্মরত পোশাকশ্রমিক
করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে গত দশকের যে কোনও সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় উলেস্নখযোগ্য হারে কমেছে। তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের মতে, করোনা বিস্তারের আগেই কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও মুদ্রার বিনিময় হারের অবমূল্যায়নের কারণে রপ্তানি সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। এমন সময়ে করোনার আঘাত শিল্পটিকে কঠিন এবং দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, বিদায়ী অর্থবছরের পোশাকের রপ্তানি ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২৭ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমকি ৬ বিলিয়ন ডলার কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে এ খাতটি। ৬ দশমকি ৬ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বছরের প্রথমার্ধে এবং বাকি ৫.৬ বিলিয়ন কমেছে শেষার্ধে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমই'র সভাপতি রুবানা হক বলেন, 'মাত্র তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) তাদের রপ্তানি কমেছে ৪.৮ বিলিয়ন ডলার যা এ শিল্পে কোভিড-১৯-এর প্রভাবের তীব্রতা কতখানি তা বোঝা যায়।' শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে কারখানাগুলোতে তাদের সামর্থ্যের ৫৫ শতাংশের সমান অর্ডার আছে, যা বছরের শেষের দিকে অর্থাৎ ডিসেম্বরে কিছুটা বাড়তে পারে। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। তবুও, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে আশা করা যায় যে নিয়মিত রপ্তানির ৮০ শতাংশই ফিরে আসতে পারে। আনসেটলড দায়/পরিশোধযোগ্য পরিমাণগুলো প্রায় ১.৯ বিলিয়ন ডলার-এর কাছাকাছি, ফলে চলমান ভাইরাস পরিস্থিতিতে উদ্বেগগুলো এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, অধিকাংশ কারখানা এখনও নগদ অর্থের প্রবাহ এবং মূলধন নিয়ে লড়াই করছে। ফলে চলমান সংকট থেকে উত্তরণ বেশ কঠিন হবে। মার্চের পর থেকে ১৭৯টি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে আরও অনেকই ট্রেইলটি অনুসরণ করতে পারে বলেও ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো, শুল্ক ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, এই জুন মাসে আয় ছিল ২.১২ বিলিয়ন ডলার। তবে এক বছরের আগের জুনের তুলনায় যা ১১.৪৩ শতাংশ কম কিন্তু গত মে মাসের তুলনায় ৭২.৪ শতাংশ বেড়েছে। খাতটি এ বছরের এপ্রিলে শিপমেন্টের জটিলতায় পড়েছিল। ফলে ৪০ বছর আগে শুরু হওয়া পোশাক রপ্তানি থেকে উপার্জন দাঁড়ায় ০.৩৭ বিলিয়ন ডলারে। যা এই শিল্পের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। গত পাঁচ বছরে পোশাক রপ্তানির যৌগিক বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৮৬ শতাংশ। বিগত দশ বছরের হারটি ১০.৭০ শতাংশ বেশি। সাধারণত পোশাক থেকে প্রাপ্ত জাতীয় রপ্তানির ৮৪ শতাংশ বেশি। কারখানা সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে মার্চ থেকেই পশ্চিমা বিশ্বে টানা লকডাউনে বিভিন্ন ব্রান্ডসহ সংশ্লিষ্ট মার্কেট বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। পাশাপাশি বন্ধ ছিল বাংলাদেশে কারখানাগুলোও। তবে, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতারা মে থেকে তাদের দোকানগুলো পুনরায় চালু করা শুরু করলেও দেশের করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সংকটে পড়ে দেশীয় কারখানাগুলো। অর্ডার বাতিলসহ কর্মীদের বেতন-বোনাসের হিসাব সংকট আরও জটিল হয়। ফলে স্থানীয় কারখানায় পোশাকের অর্থ প্রবাহ এবং উৎপাদন অনেকটাই মন্থর হয়ে যায়। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ার কারণে গার্মেন্ট রপ্তানি পুনরায় শুরু হতে পারে। তবে পোশাক খাতে কিছু সংস্কার প্রয়োজন এবং বিজিএমইএ সে বিষয় নিয়ে চেষ্টা করছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ তুলা ফাইবারভিত্তিক পোশাকের আইটেমগুলোর উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। তবে আহসান এইচ মনসুর মনে করেন নির্দিষ্ট কোনো আইটেমের উপর নির্ভরশীল না হয়ে একাধিক আইটেমের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। যেমন- পাঁচটি আইটেম রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ তাই কমপক্ষে ৫০টি এ জাতীয় আইটেম বিকাশ করা উচিত। এছাড়াও ইউরোপ এবং আমেরিকার পাশাপাশি এশিয়া, মধ্য এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার রপ্তানি বাজারকেও টার্গেট করার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।