একাধিক প্রেম করে শ্রীঘরে ভুয়া ক্যাপ্টেন!

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

তানভীর হাসান
আরিফুল ইসলাম সিফাত
'আমার নাম ক্যাপ্টেন আরিফুল ইসলাম সিফাত। খুলনার জাহানারাবাদ ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত রয়েছি। আইডি নং-বিএ ৯০৪৯'। 'আমার বাবা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আবিদুল ইসলাম'। দাম্ভিকতার সাথে এমন পরিচয় দেওয়ার পর প্রথমে যে কেউই বিশ্বাস করে বসবেন। এক্ষত্রে উঠতি বয়সি তরুণী হলে তো কথাই নেই। ঠিক এভাবে ফেসবুকে এমন পরিচয় দিয়ে রাজধানীর খিলক্ষেতের এক তরুণীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন আরিফুল ইসলাম। সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার নেশায় তরুণীর পরিবারও ব্যাকুল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই তরুণীর বাসায়ও আসা-যাওয়া শুরু করেন তিনি। কিন্তু 'চোরের দশদিন গেরস্তের একদিন' বলে একটি প্রবাদ আছে সেটি আবারও সত্য হলো আরিফুলের ক্ষেত্রে। ভুয়া ক্যাপ্টেন পরিচয় ও ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য প্রচারের দায়ে খিলক্ষেত থানায় দায়েরকৃত মামলায় তার ঠিকানা এখন কেরানীগঞ্জে অবস্থিত এশিয়ার বৃহৎ জেলখানায়। শুধু এই তরুণীই নয়, এ ধরনের একাধিক তরুণীর সঙ্গে আরিফুলের প্রেমের তথ্য বেরিয়ে আসছে। জানা গেছে, মো. আরিফুল হাসান হৃদয় ওরফে শুভ ওরফে সিফাতের (১৮) বাবা অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. আবিদুল ইসলাম। পরিবারের সঙ্গে আরিফুল বসবাস করেন বগুড়ার সোনাতলার চরপাটারহাটে। ঝরভধঃ ঈযড়ফিযধৎু (দুষ্ট মুখের মিষ্টি হাসি ) নামে তার একটি ফেসবুক আইডি রয়েছে। সেই আইউি থেকে জধনবুধ ইড়ংৎর ঐড়হবু নামের আইডির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। এ সময় আরিফুল নিজেকে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পরিচয় দেন। এতে ওই তরুণী অবিশ্বাস করলে তখন সে ক্যাপ্টেন পদেরর্ যাংক ব্যাচ সম্বলিত ছবি পাঠান। এক পর্যায়ে নিজের আইডির কাভার ফটোতেও ছবিটি জুড়ে দেন। এতে ওই তরুণীর বিশ্বাস জন্ম নিলে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর শুরু হয় মোবাইল ফোনে কথাবার্তা। প্রেমের পারদ যখন চড়মে তখন তারা দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। এরই মাঝে ওই তরুণীর মায়ের সাথেও কথা বলে আরিফুল। তরুণীর মাও আরিফুলের কথা বিশ্বাস করে। পরে তাকে বাসায় আসতে বলে। একপর্যায়ে গত মাসের ১৫ তারিখে আরিফুল ওই তরুণীর খিলক্ষেতের বাসায় আসে। সেখানে সে একদিন অবস্থান করে পরের দিন চলে যায়। বাসায় অবস্থানকালে আরিফুল জানায়, সে খুলনা জাহানারাবাদ ক্যান্টনমেন্টে ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত আছেন, তার পরিচয় নং- বিএ ৯০৪৯ এবং তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আব্দুলস্নাহ। এ সময় আরিফুল তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে রাজিও হয় তরুণীর পরিবার। এরপর তারা আরিফুল সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন। এরই মাঝে গত শুক্রবার আরিফুল ওই তরুণীর বাসায় আসেন। বলেন, নাইট পাসের ছুটিতে তিনি ঢাকায় একটি জরুরি কাজে এসেছিলেন। আরিফুলের কথাবার্তায় তাদের সন্দেহ হয়। কারণ বিবাহিত সদস্যরা ছাড়া কেউ এই ছুটি পায় না। তারা এ সময় তার সম্পর্কে আরও খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে আরিফুল ভুয়া সেনা কর্মকর্তা বলে তারা নিশ্চিত হন। এমন খবরের ভিত্তিতে আরিফুলের মা জান্নাতুল ফেরদৌসি ঢাকায় আসেন। খিলক্ষেত থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত আমিনুল ইসলাম জানান, আরিফুলের মা সরাসরি খিলক্ষেত থানায় এসে তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে এবং ২ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে পুলিশকে জানায়। এমন খবরের ভিত্তিতে পুলিশ মুক্তিপণ দাবিকারী মো. এন্তাজুল ইসলাম (২৯) নামে এক যুবককে আটক করে। পরে এন্তাজুলকে সাথে নিয়ে খ-১৭৩/৫ খিলক্ষেত তেতুলতলার বাসায় অভিযান চালিয়ে আরিফুলকে উদ্ধার করা হয়। এরপর দেখা যায় ঘটনা উল্টো। আরিফুল ভুয়া ক্যাপ্টেন পরিচয়ে তরুণী ও তার পরিবারের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। পরে আরিফুলের মাও বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপর আরিফুলের মোবাইল ফোন দিয়ে তার ফেসবুক আইডি পরীক্ষা করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে শনিবার ২০২০ইং ধারা -২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২৪ ( ১ ) ( ২ ) মামলা দায়ের করা হলে আরিফুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। তিনি জানান, শুধু ওই তরুণীই নয়। এ ধরনের আরও একাধিক তরুণীর সঙ্গে আরিফুলের প্রেমের সম্পর্কের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের সাথেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে আরিফুলকে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। ওই তরুণীর বাবা আব্দুস সামাদ বলেন, প্রথমে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। মেয়ে ও মা মিলে আরিফুলের সঙ্গে কথা বলেছে। এরপর সে কয়েকবার বাসায় এলে আমার সন্দেহ হয়। দেখতে স্মার্ট হলেও সেনা কর্মকর্তারা কখনো এভাবে ছুটি পায় না বলে আমার ধারণা আছে। এমন ধারণা থেকে তার সম্পর্কে সন্ধান শুরু করলে বিস্তারিত বেরিয়ে আসে।