শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
লকডাউন ওয়ারী

কেউ দিচ্ছেন হুমকি কেউ করছেন অনুরোধ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০
করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে 'রেড জোন' হিসেবে চিহ্নিত পুরান ঢাকার ওয়ারী শনিবার থেকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মানুষ বের হওয়ার চেষ্টা করছে। ছবিটি রোববার তোলা -যাযাদি

করোনার সংক্রমণ রোধে ২১ দিনের জন্য গত শনিবার থেকে লকডাউন করা হয়েছে রাজধানীর ওয়ারীকে। নিয়ম অনুযায়ী ওই এলাকায় কেউ প্রবেশ বা বের হওয়ার কথা নয়। তবে রোববার সকালে ওই এলাকা থেকে বেশিরভাগ লোকই খাতায় নাম লিখে বা অনুরোধ করে বের হচ্ছেন। আবার 'উচ্চপদস্থ' সরকারি কর্মকর্তারা হুমকি দিয়ে এলাকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

রোববার ওয়ারীর চারদিকে ঘুরে দেখা গেছে, এলাকার প্রত্যেকটি প্রবেশপথ বন্ধ রয়েছে। সেগুলোতে বাঁশের বেড়ার ওপর কাপড় টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কাপড়ের ফাঁক দিয়ে বাইরে থেকে সিগারেট আনিয়ে নিতে দেখা গেছে কয়েকজনকে। জরুরি চলাচলের জন্য খুলে রাখা হয়েছে হট কেক গলি এবং ওয়ারী থানার পাশে র?্যাংকিন স্ট্রিট। ওই রাস্তা দিয়ে হাসপাতালের রোগীরা প্রবেশ করছেন। তবে সেই পথে রোগীদের কোনো ধরনের সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি।

সেখানে কর্তব্যরত ওয়ারী থানার সাব-ইন্সপেক্টর আসাদ বলেন, 'আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এলাকাবাসীর সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করছি না।'

সকাল ৯টার পর থেকেই হট কেক গলিতে ভিড় ছিল সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের। তাদের প্রত্যেকেই স্বেচ্ছাসেবকদের খাতায় নাম লিখিয়ে বাইরে বের হয়েছেন।

পূবালী ব্যাংক কর্মকর্তা স্বপ্না রায় বলেন, 'এলাকা থেকে বের হতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবকরা নাম লিখিয়ে বের হতে দিচ্ছেন।'

শুধু স্বপ্না রায় নয়, ৩০ মিনিটের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে বেশিরভাগ ব্যাংক কর্মকর্তা কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই এলাকা থেকে বের হতে পেরেছেন। সেখানে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক পার্থ ঘোষ বলেন, 'জরুরি সেবাদানকারী লোকজনই এলাকা থেকে বের বা প্রবেশ হতে পারবেন। তবে সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবকদের কথায় ব্যাংকাররা বেরিয়েছেন।'

সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা হুমকি দিয়েই এলাকা থেকে বের হচ্ছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তারা বলছেন, এলাকাবাসী যদি সহযোগিতা না করে এরকম হুমকি দিয়ে বেরিয়ে যায়, তাহলে এমন লকডাউনের দরকার কী ছিল?

ক্ষোভ প্রকাশ করে সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক মঞ্জুরুল কাদের মামুন বলেন, 'একচুয়ালি প্রাইভেট ব্যাংকে যারা সার্ভিস করেন তারা আমাদের খুবই বিরক্ত করছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কথামতো ২১ দিনের লকডাউনে এই এলাকা থেকে কেউ বের বা প্রবেশ হতে পারবে না। কিন্তু এলাকার লোক বিষয়টিতে আমাদের কো-অপারেট করছে না। কিছু সময় আগে তিতাসের এক কর্মকর্তা আমাকে থ্রেট করেছে। সে আমাকে বলেছে কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার আমি নেব কি না? আমি তো দায়ভার নেওয়ার লোক না। জোর করে সে বের হয়ে গেলো। জরুরি সেবা এবং ই-কমার্সের লোকজন ছাড়া কেউ বের হতে পারবে না এটাই হওয়ার কথা, কিন্তু তা হচ্ছে না। আমরা সাধারণ মানুষদের বুঝিয়ে ঘরে পাঠাতে পারছি। কিন্তু সরকারি বড় কর্মকর্তাদের আমরা সেটা মানাতে পারছি না। তারা আমাদের থ্রেট করে বের হয়ে যাচ্ছে।'

হট কেট গলিতে কর্তব্যরত ওয়ারী থানার সাব-ইন্সপেক্টর সুকান্ত বলেন, 'এই আবাসিক এলাকা সিটি করপোরেশন লকডাউন দিয়েছে। কোনো বিশৃঙ্খলা হয় কি না- সে বিষয়টি আমরা তদারকি করছি আর এলাকায় প্রবেশ এবং বের হওয়ার বিষয়টি দেখছে স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে নির্দেশনা মতে এই এলাকা থেকে জরুরি সেবা প্রদানকারী কর্মীরা বের হতে পারবেন, আর বিশেষ বিবেচনায় বিভিন্ন রোগীকে প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বের বা প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।'

থ্রেট করে বের হয়ে যাওয়া তিতাসের কর্মকর্তার বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারিতে আনার ব্যবস্থা করবেন এমনটা জানিয়ে ওই এলাকার কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান আলো বলেন, 'হুমকি দিয়ে কারও এলাকা থেকে বের হওয়ার কথা না। স্বেচ্ছাসেবকরা সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আছেন, অর্থের বিনিময়ে কিন্তু তারা কাজ করছেন না। বিষয়টি আমি কঠোর নজরদারিতে আনার ব্যবস্থা করছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<104985 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1