এমপিওভুক্তিতে জালিয়াতি

বিদেশে থেকেও এমপিও পেলেন এক সহ-সুপার

জালিয়াতি রোধে কড়া নির্দেশনা দালাল চক্রের তৎপরতা বেড়েছে অভিযোগ পেলে তদন্তের নির্দেশ

প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২০, ০০:০০

নূর মোহাম্মদ
২০১৬ সালে হাজিদের সেবা দিতে সৌদি আরব যান টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার আমুয়াবাইদ আজাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক হারুনুর রশিদ। তারপর আর দেশে ফেরেননি। ২০১৯ সালে মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হলে হঠাৎ তিনি হাজির। ভাগিয়ে নেন সহ-সুপারের পদ। অথচ মাদ্রাসার হাজিরা খাতাসহ কোথাও তার নাম নেই। মাদ্রাসা সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে ভুয়া হাজিরা খাতা, রেজুলেশনসহ এমপিও জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র তৈরি করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গভর্নিং বডির ৮ জন সদস্য তার এমপিও না দিতে শিক্ষামন্ত্রী, সচিব, মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসে অভিযোগ করেন। শুধু এ প্রতিষ্ঠান নয়, নতুন এমপিও হওয়া ২৭৩০টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে এরকম জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এদিকে, এমপিওভুক্তিতে এরকম জালিয়াতির তথ্য পাওয়ার পর আঞ্চলিক অফিসগুলো কড়া বার্তা পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসলে তার এমপিও আটকে রেখে সঠিকভাবে তদন্ত করে এমপিও দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি এবং দেশের ৯টি আঞ্চলিক অফিস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও কাজ শুরু হওয়ার পর সারাদেশে পুরানো দালাল শ্রেণি ফের তৎপর হয়ে উঠেছে। সব কাগজপত্র তৈরি করে এমপিও পাইয়ে দেওয়ার প্যাকেজ অফার করছে। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ও গভর্নিং বডিকে ম্যানেজ করতে হবে ওই শিক্ষককে। এদিকে এমপিও হওয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অতীতে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকলেও গভর্নিং বডি, অধ্যক্ষদের ম্যানেজ করে হঠাৎ পেয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। এ ধরনের প্রচুর অভিযোগ এসেছে দেশের ৯টি আঞ্চলিক অফিসে। সেখানে প্রতিকার না পেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, মাদ্রাসা এবং কারিগরি অধিদপ্তরের দ্বারস্থ হচ্ছেন। অনেকেই আবার মন্ত্রী, সচিবের কাছে আবেদন করছেন। এ ব্যাপারে দুইজন আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালকের সঙ্গে কথা হয় যায়যায়দিনের। তারা বলেন, এমপিও করিয়ে দেওয়ার নামে এক শ্রেণির প্রতারক চক্রের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তারা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে থেকে চুক্তি করে আমাদের এখানে আসে। অফিসের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এর সঙ্গে যুক্ত। তবে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থেকে এমপিও কাজ হচ্ছে। সৌদি আরবে থেকেও নিয়মিত হাজিরা ও এমপিওভুক্তি দীর্ঘ তিন বছর সৌদি আরবে অবস্থান করেও এমপিওভুক্ত হয়েছেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আমুয়াবাইদ আজাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার হারুন অর রশিদ। চার বছর অনুপস্থিত থেকেও তিনি এমপিওভুক্ত হয়েছেন। শুধু সহ-সুপার নয়, সুপার আরিফুল ইসলাম ৪ বছরের মধ্যে মাত্র ১৮ দিন অফিস করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। ভুয়া রেজুলেশন ও ভুয়া হাজিরা খাতা দেখিয়ে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত সুপার এবং সহকারী সুপার এমপিওভুক্ত হয়েছেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির ৮ জন সদস্য। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের করা অভিযোগে জানা যায়, দাখিল এ মাদ্রাসাটি সর্বশেষ এমপিও হওয়ার ২৭৩০টি প্রতিষ্ঠানের একটি। তবে মাদ্রাসার সুপার আরিফুল ইসলাম ৪ বছরে মাত্র ১৮ দিন অফিস করেছেন। এছাড়া দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতা, কমিটি গঠনের অনিয়ম আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম, জামায়াতের রাজনীতি করারসহ আরও বেশি কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের সত্যতা মিলেছে সুপারের কাছে। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, সহ-সুপার সৌদি আরব গেছেন ঠিক আছে। কিন্তু হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর ছিল না। তাহলে কীভাবে তিনি এমপিও পেলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যা হয়েছে আমার অজান্তে। আমি অসহায়। যারা অভিযোগ করেছেন তারা অনেক প্রভাবশালী। চার বছরের মধ্যে ১৮ দিন অফিস করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি না আসলে মাদ্রাসা চলল কীভাবে? অভিযোগ তদন্তের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন সুপার। তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত হলেই আমি উপস্থিত ছিলাম সে তথ্য বেরিয়ে আসবে। এদিকে, সৌদি আরবে থেকে এমপিওভুক্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সহ-সুপার হারুনুর রশীদ বলেন, আমি ৪৫ থেকে ৫০ দিন হজ করার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে ছিলাম। ২০১৯ সালে আগস্ট মাসে দেশে ফিরেছি। সৌদি আরব কবে গিয়েছিলেন এমন প্রশ্নে সঠিক উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। এদিকে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অভিযোগে বলেন, সহ-সুপার মো. হারুনুর রশীদ দীর্ঘ তিন বছর সৌদি আরবে অবস্থান করেও এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কমিটির সভাপতি ও সুপারকে ম্যানেজ করে সব কাগজপত্র তৈরি করেছেন। এদিকে, সারাদেশে জালিয়াত চক্রের কাছে জিম্মি হয়েছে পড়েছেন দেশের এমপিওভুক্তির আশায় থাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের সিন্ডিকেটের কারণে শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারছেন না। এমপিওভুক্তি আবেদনের পাসওয়ার্ডসহ সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কুক্ষিগত রাখার অভিযোগ উঠেছে চক্রটির বিরুদ্ধে। \হ