বান্দরবানে ব্রাশফায়ারে নিহত ৬

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবানে মঙ্গলবার সশস্ত্র গ্রম্নপের ব্রাশফায়ারে নিহত দুইজনের মরদেহ -বিডি নিউজ
বান্দরবানের বাঘমারায় ঘরে ঢুকে এক সশস্ত্র গ্রম্নপের ব্রাশ ফায়ারে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থি অংশের ছয়জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে বান্দরবান শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার বাঘমারা এলাকায় এই হত্যাকান্ড ঘটে বলে সদর থানার ওসি শহিদুল আলম চৌধুরী জানান। যেখানে হামলা হয়েছে, সেটি জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থি অংশের বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি রতন সেন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি। ৬০ বছর বয়সী রতন নিজেও এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন। নিহত অন্যরা হলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বিমল কান্তি চাকমা ওরফে প্রজিত চাকমা (৬৫), ডেভিড মারমা (৫০), জয় ত্রিপুরা (৪০), জিতেন ত্রিপুরা (৪২) ও মিলন চাকমা (৬০)। ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, সকালে সশস্ত্র কয়েকজন বাড়িতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। আহত হন আরও তিনজন। আহত তিনজন হলেন সংগঠনের কর্মী বিদু্যৎ চাকমা (৩৭) এবং স্থানীয় বাসিন্দা নিরু চাকমা (৫০) ও হ্লাওয়ংচিং মারমা (২২)। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে বান্দরবান সদর হাসপতালে নেওয়া হলেও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার জানিয়েছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং সংগঠনের সদস্য ওয়াইমং মারমা বলেন, সকালে যখন হামলা হয়, তখন তাদের ৯-১০ জন সদস্য ওই বাড়িতে ছিলেন। সকালের খাবারের জন্য রতন সেন ঘরে রান্না করছিলেন। 'হঠাৎ একদল সশস্ত্র লোক আসে। তারা বাড়িতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে পাশের ধান খেত দিয়ে চলে যায়।' ওয়াইমংয়ের ধারণা, হামলাকারীরা ৬-৭ জন ছিল। তবে তিনি দুইজনকে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখেছেন। রতন সেনের স্ত্রী মিনিপ্রু মারমা বলেন, বাড়িতে লোকজন আসায় তার স্বামী নিজেই সকালে বাজার করে রান্নার আয়োজন করেছিলেন। তিনি বলেন, 'আমি বাড়ির ভেতর কাজে ছিলাম। আর বাইরে রান্নার আয়োজন চলছিল। গুলির শব্দ শুনে বাইরে এসে দেখি আমার স্বামীসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওঠানে পড়ে আছে।' পরে বাড়ির পেছনে ধান খেত দিয়ে দুইজনকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন বলে জানান মিনিপ্রু। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থি অংশের বান্দরবান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উবামং মারমা বলেন, তিনি নিজেও ওই সময় সেখানে ছিলেন। তিনি বলেন, 'আমি ছিলাম বাড়ির ভেতর। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে মাটিতে শুয়ে পড়েছিলাম বলে প্রাণে বেঁচে যাই।' এই হত্যাকান্ডের জন্য উবামং জনসংহতি সমিতির মূল দলকে দায়ী করেছেন। তবে এ বিষয়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মূল দলের কারও বক্তব্য জানা যায়নি। পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার বলেন, 'এই হত্যাকান্ডে কারা কীভাবে জড়িত, তা তদন্ত করে দেখা হবে।' ১৯৯৭ সালে সরকারের সঙ্গে সন্তু লারমার পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ছেড়ে ইউপিডিএফ গঠন করেছিলেন প্রসীত খিসা। প্রায় এক যুগ আগে জনসংহতি সমিতি আরেক দফা ভেঙে সুধা সিন্দু খীসার নেতৃত্বে গঠিত হয় জেএসএস (এমএন লারমা)। সেই অংশটিই স্থানীয়ভাবে জেএসএস'র সংস্কারপন্থি অংশ হিসেবে পরিচিত। আবার তপন জ্যোতি চাকমা বর্মার নেতৃত্বে ইউপিডিএফের সংস্কারবাদী একটি অংশ তিন বছর আগে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে নতুন দল গঠন করে। এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে জেএসএস'র এমএন লারমা অংশের সঙ্গে তাদের এক ধরনের মিত্রতা তৈরি হয়। পাহাড়ি সংগঠনগুলোর এই বিভক্তির পথ ধরে ২০১৮ সালে পার্বত্য জেলাগুলোতে নতুন করে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়। ওই বছর ৩ মে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থি অংশের সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন তার শেষকৃত্যে যাওয়ার পথে হামলায় নিহত হন ইউপিডিএফের সংস্কারপন্থি অংশের নেতা তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাসহ পাঁচজন।