বিল পাস

ভার্চুয়াল আদালত প্রয়োজন অনুসারে বসবে

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মহামারিকালে প্রয়োজনের তাগিদে যাত্রা শুরু করা ভার্চুয়াল আদালত 'প্রয়োজন অনুসারে' চালানোর বিধান রেখে সংসদে বিল পাস হয়েছে। বুধবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক 'আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার বিল-২০২০' সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ছোঁয়াচে রোগ কোভিড ১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে গত মার্চে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে আদালতও বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ছুটির মধ্যে বিচারকাজ থেমে যাওয়ায় ভার্চুয়াল আদালতের ভাবনা গতি পায়, যেখানে আইনজীবী, বিচারক, আসামি, বাদী কিংবা আদালতকর্মী কেউই একসঙ্গে না বসেই শুনানি নিতে পারেন। ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ রেখে গত ৭ মে মন্ত্রিসভা এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়ার পর তার ভিত্তিতে ভার্চুয়াল আদালতের কাজ শুরু হয়ে যায়। এই ভার্চুয়াল আদালতে শুধু জামিনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শুনানিই হচ্ছে। তবে অনভ্যস্ততা ও অপ্রতুল অবকাঠামোর কারণে ভার্চুয়াল আদালত নিয়ে আইনজীবীদের অস্বস্তি রয়েছে। এই সময়ে বিচারকাজ পরিচালনা ও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিম্ন আদালতের দুই ডজনের বেশি বিচারকের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কোনো অধ্যাদেশ জারির পর তা আইনে পরিণত করতে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদে অনুমোদন নিতে হয়। না হলে অধ্যাদেশটির কার্যকারিতা হারায়। সে অনুযায়ী অধ্যদেশটি আইন হিসেবে জারি করতে গত ২৩ জুন সংসদে বিল তোলা হয়। তখন বিলটি পরীক্ষা করে ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ২৪ জুন সংসদীয় কমিটি বিলটি নিয়ে বৈঠক করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। পরে ২৯ জুন সংসদীয় কমিটি বিল পরীক্ষা করে সংসদে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। সংসদে তোলা বিলের ৫ ধারায় বলা ছিল- 'সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমতে হাইকোর্ট বিভাগ সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।' সংসদীয় কমিটি ওই ধরায় পরবির্তন আনার সুপারিশ করে। 'সময় সময়' শব্দ দুটির আগে 'প্রয়োজন অনুসারে' শব্দ দুটি যোগ করার কথা বলা হয় সেখানে। বিলটি পাসের প্রক্রিয়ার সময় জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ অভিযোগ করেন 'ভার্চুয়াল কোর্টের' কারণে আইনজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দেবে। বিরোধী দলের সদস্যদের বিভিন্ন সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'এ আইন বিশেষ সময়ের জন্য। পূর্ণাঙ্গ ট্রায়াল এখনই করা সম্ভব হবে না। তার জন্য সাক্ষ্য আইন, ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন করতে হবে।' তিনি বলেন, 'গতকাল পর্যন্ত ৫০ হাজার কারাবন্দির জামিন হয়েছে। আর সেটা হয়েছে এই ভার্চুয়াল কোর্টের জন্যই। আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এগিয়ে যাব আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়েই।' মন্ত্রী বলেন, 'প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এখন আমরা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা করা শিখেছি। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করছি। মাস্ক পরছি। সেজন্য প্রয়োজন অনুসারে যেখানে খুব দরকার, সেখানে নরমাল কোর্ট চালাতে বলেছি। এগুলো আইনজীবীরা আমাকে বলেছেন। আমি প্রধান বিচারপতির অনুমতি নিয়েছি বলেই কথাটা বলছি। তিনি বলেছেন, তিনি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রয়োজন হলে তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। তিনি আরও বলেছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে কোর্ট চালু হবে।'