সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রিতে ঝুঁকছেন হকার, বাড়ছে সংক্রমণঝুঁকি

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর একটি ফুটপাতে করোনা সুরক্ষাসামগ্রী নিয়ে পসরা সাজিয়েছেন হকার -যাযাদি
করোনা মহামারির কারণে পেশায় পরিবর্তন এনেছেন রাজধানীর হকাররা। প্যান্ট, শার্ট, ফল বিক্রি বাদ দিয়ে সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রিতে ঝুঁকছেন তারা। নিজ ব্যবসার চরম মন্দা দেখা দেওয়ায় সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রি করে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করছেন ফুটপাতের হকাররা। তবে সুরক্ষাসামগ্রীর অবাধ বিক্রিতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও ও ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, জীবনের তাগিদে অনেকটা বাধ্য হয়েই ব্যবসা পরিবর্তন করেছেন তারা। তবে এ ব্যবসায়ও প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো মুনাফা পাচ্ছেন না। এ মহামারির সময় কোনোমতে পরিবার নিয়ে দুবেলা-দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছেন তারা। এ ব্যাপারে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) অপর প্রান্তে ফুটপাতে সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, অনেকটা বাধ্য হয়েই ব্যবসায় পরিবর্তন করেছি। আমার মূল ব্যবসা ছিল বোরকা ও মেয়েদের পস্নাজু তৈরি করা। সেগুলো তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে সাপস্নাই দিতাম। এতে করে বেশ ভালোই চলছিল, কিন্তু হঠাৎ এ মহামারি দেখা দেওয়ায় সব বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে আগারগাঁও ফুটপাতে সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রি করছি। করোনার প্রথম দিকে বিক্রি খুব ভালো ছিল। প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো ব্যবসা নেই বলেও তিনি উলেস্নখ করেন। কেরানীগঞ্জ থেকে শার্ট-প্যান্ট এনে বিক্রি করে ভালোই ব্যবসা হতো বলে জানালেন মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ফুটপাত ব্যবসায়ী ওসমান মিয়া। তিনি বলেন, করোনার আগে প্রতিদিন বিকালে দোকান খুলতাম। রাত আটটা-নয়টা পর্যন্ত ব্যবসা করতাম, এতে করেও মাসশেষে ভালোই আয় হতো। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর বেচাবিক্রি শূন্যের কোঠায় গিয়ে দাঁড়ায়। লকডাউনের সময় প্রথম কয়েকদিন খুব কষ্টে সংসার চলেছে। কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমারই এক সহকর্মী এ ব্যবসা শুরু করায় তাকে দেখেই আমিও শুরু করি। এতে করে দিনশেষে যায় হচ্ছে তাতে কোনোমতে জীবন চলে যাচ্ছে এই আর কি। তবে নকলের ছড়াছড়ি থাকায় ফুটপাতের সুরক্ষাসামগ্রীর ওপর অনেকটাই আস্থা রাখা যাচ্ছে না বলে জানালেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, আমি বেশ কয়েকবার ফুটপাত থেকে সুরক্ষাসামগ্রী কিনে ঠকেছি। যেসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার তারা বিক্রি করছেন সেগুলো নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এছাড়া দামের ক্ষেত্রেও তারা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন বলেও তিনি উলেস্নখ করেন। এদিকে ফুটপাতে সুরক্ষাসামগ্রীর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ব্যবহৃত সামগ্রীগুলো আবার প্যাকেজজাত হয়ে বাজারে আসছে। এতে করে সংক্রমণ বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সাহেদ ইমরান বলেন, ফুটপাতে সুরক্ষাসামগ্রী অনেক আগে থেকেই বিক্রি হয়। সুতরাং সচেতনতা আমাদের মধ্যে আগের থেকেই নেই। তবে এখানে অনেক মানহীনসামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁঁকি বাড়তে পারে। শোনা যাচ্ছে ব্যবহৃত মাস্ক ও গস্নাভস প্যাকেটজাত করে বাজারে চলে আসছে। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সংক্রমণ বাড়তে পারে। এটা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই ভয়ংকর হবে। এতে করে সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেড়ে যাবে বলে আমরা মনে করছি। তাই এ মুহূর্তে সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যাপারে সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।