করোনা মোকাবিলার জরুরি সিদ্ধান্ত কীভাবে হচ্ছে?

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হাসপাতালে রোগীর তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী -যাযাদি
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গত চার মাসে সাধারণ ছুটি ঘোষণা, জোনভিত্তিক লকডাউন, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, টেস্টিং বুথ ও ল্যাব বাড়ানো, কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফি নির্ধারণসহ প্রতিনিয়ত নানা সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এসব সিদ্ধান্ত সময়োপোযোগী হচ্ছে কিনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞদের মতামত কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, এর বাস্তবায়ন কতটা সমন্বিত- এমন প্রশ্ন উঠেছে। পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন ডা. শারমিন ইয়াসমিন বলেন, 'এখানে আমাদের একটা ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস সবসময় থাকতে হবে। এটা আমাদের একটা ইমার্জেন্সি সময়। এটা (করোনাভাইরাস) কিন্তু দীর্ঘদিন থাকবে।' বৈজ্ঞানিকভাবে কিন্তু আমাদের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি সিদ্ধান্তগুলো জনগণের উদ্দেশ্যে সবশেষে ওনারা প্রচার করেন সেখানে তার প্রতিফলন দেখি না। মহামারি মোকাবিলায় সরকার অনেক সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটা যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় কার্যকর ফল মিলছে না। বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে যেসব সুপারিশ করছেন সেগুলো দ্রম্নত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়নেও দেখা যায় ধীরগতি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বিএসএমএমইউ'র সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে কমিটির অনেক সদস্যই হতাশা জানাচ্ছেন। আমরা সুপারিশ করেই যাচ্ছি সেগুলো সিদ্ধান্ত আকারে ট্রান্সলেট হতে অনেক সময় লাগছে। কোনো কোনোটা হচ্ছেই না। কোনোটা হবে আর কোনোটা হবে না, আমাদেরকে ফিডব্যাকও দেওয়া হচ্ছে না। মি. ইসলাম জানান, এক মাসেরও বেশি হয়ে গেছে তারা রোগী শনাক্তের জন্য র?্যাপিড টেস্ট চালুর সুপারিশ করেছিলেন যার বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। অথচ অতি দ্রম্নত করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ফিস নেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়ে গেছে যেটা বেশ সমালোচিত। জাতীয় কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন মহামারি মোকাবিলায় চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা, টেস্ট, তদারকিসহ সার্বিক সমন্বয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় কমিটি কতটা সক্রিয় ভূমিকা রাখছে, সেটি অস্পষ্ট বলেই মনে করেন ডা. নজরুল ইসলাম। আমরা বিভ্রান্তির মধ্যেই আছি। ঠিক বুঝতে পারছি না। জাতীয় কমিটি হেডেড বাই হেলথ মিনিস্টার, এই কমিটির নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে কিনা আমরা কিন্তু জানতে পারছি না। ওনাদের যে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত এটা কমিটির মাধ্যমে হচ্ছে নাকি ওনারা নিজেরাই মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এটাও বোঝা যাচ্ছে না। এ পর্যায়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চার মাস পরে উচ্চহারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে পৌনে দু?ই লাখে আর মৃতু্য দু?ই হাজার দুইশ। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা প্রথম থেকেই করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা এবং সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যখন যেটা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে বিলম্বের পেছনে যুক্তি তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র আয়েশা আক্তার। আমরা যে কাজটা করব সেটা একদম অথেনটিকভাবে হবে এবং ভালোভাবে যেমন ল্যাবগুলো স্থাপন করেছি বায়োসেফটি মেইনটেইন করে। সব কাজে যখন আমরা সঠিকভাবে এবং গুণগত মানটা দেখব তখন কিন্তু সময় একটু লাগবেই। মহামারি মোকাবিলায় সবাইকে সঙ্গে নিয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের কাজ হচ্ছে বলেও দাবি করেন আয়েশা আক্তার। আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি আছে। অনেকগুলো কমিটি আছে। সে কমিটিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারপর সেগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে কমিটি গঠন করা আছে। কন্ট্রোলরুম আছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কন্ট্রোলরুম আছে। সেইসব কিন্তু আমরা এক সঙ্গে মিলে সমন্বয়ের সঙ্গে কাজটা করি। বিশেষ করে বলতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই কিন্তু সবগুলো কাজ হচ্ছে। তার সরাসরি হস্তক্ষেপেই কিন্তু সবগুলো কার্যক্রম এক সঙ্গে সবাই মিলে সমন্বয়ের সাথে আমরা কাজটা করছি। এদিকে সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে জোনভিত্তিক লকডাউনের ঘোষণা হলেও সেটি যথাসময়ে নিরুপণ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেই অভিযোগ। আর বেশকিছু সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অর্থনীতি, জীবন-জীবিকার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের দিকটি কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, সেটিও প্রশ্ন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। অধ্যাপক শারমিন ইয়াসমিন বলেন, মহামারিকালে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রম্নত বাস্তবায়ন করা দরকার। কোভিড-১৯ ক্রাইসিস, এটা কিন্তু শুধু হেলথ সেক্টরের কাজ না, এর সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা আছে। এখানে একটা সমন্বয়ের দরকার আছে। আমার যেটা মনে হয় ফাইনালি যখন ওনারা বসেন তখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তাদের বিষয়গুলোকে বেশি প্রাধান্য দেয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকেন। আমি মনে করি আমাদের স্বাস্থ্য সেক্টর থেকে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তাদেরকে অনেক ছাড় দিয়ে আসতে হয়। আমার কথা হচ্ছে, যেহেতু এটা একটা হেলথ ক্রাইসিস অবশ্যই জনস্বাস্থ্যের যে ব্যাপারগুলো আছে মহামারি প্রতিরোধের জন্য বা মোকাবিলা করার জন্য, সেখানে কিন্তু গুরুত্বসহকারে স্বাস্থ্যের বিষয়গুলোকেই বিবেচনায় আনা উচিত। বিবিসি বাংলা