যতটা প্রচার হচ্ছে সবটাই ঠিক নয়: সাহেদপত্নী

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

বিডি নিউজ
সাদিয়া আরাবী রিম্মির সঙ্গে সাহেদ করিম -ফাইল ছবি
মহামারির মধ্যে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণা করে পালিয়ে থাকা রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদের স্ত্রী সাদিয়া আরাবী রিম্মি বলেছেন, তার স্বামীর নামে সংবাদমাধ্যমে যেসব প্রচার হচ্ছে তার 'সবটা ঠিক নয়'। তবে এসব খবরের 'কিছু' সত্যতা আছে বললেও সত্যগুলো কী কী, তা তিনি বলেননি। এদিকে ঘটনার তিনদিন পরেও সাহেদকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি আদালতে আত্মসমর্পণের চেষ্টা করতে পারেন বলে ধারণা করছেনর্ যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা। সাহেদপত্নী সাদিয়াও বলছেন, পালিয়ে বাঁচতে পারবেন না তার স্বামী, 'আত্মসমর্পণ করাই তার জন্য শ্রেয়'। দৃশ্যত স্বামীর পক্ষ নিয়ে সাদিয়া শুক্রবার রাতে বলেন, "সংবাদমাধ্যমে যেসব প্রচারিত হচ্ছে তার সবটাই ঠিক নয়। কিছু সত্য আছে। বিভিন্ন মাধ্যমে তার যে হাজার হাজার কোটি টাকার কথা বলা হচ্ছে আমি স্ত্রী হিসাবে কিছুই জানি না। আমিও জানতে চাই তার কোথায় এত টাকা আছে। তদন্ত হোক, সবাই জানুক সত্য ঘটনা। যার দুটা হাসপাতাল আছে তার তো কিছু টাকা থাকবে। যতটুকু জানি তিনি 'ক্লিন বিজনেস' করেন। ততটুকুই। তবে অন্যায় করে থাকলে তার পাশে নেই।" সাহেদের সঙ্গে তার সংসার জীবন ১৬ বছরের জানিয়ে সাদিয়া বলেন, 'টিভিতে টকশো, বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে তার ছবি এসব মাত্র তিন-চার বছর হলো। তার এসবের কারণে ভালোই মনে হতো। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে এতটা হেয় হতে হবে ভাবতে পারিনি। আমি এসব ঘটনায় খুবই লজ্জিত ও মর্মাহত।' পারিবারিক জীবনে তাদের মধ্যে তেমন কোনো ঝামেলা ছিল না জানিয়ে দুই কন্যা সন্তানের জননী সাদিয়া বলেন, সে পরিবারকে ঠিকমতো সময় দিত না সত্য। তবে সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। প্রায় প্রত্যেক পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটু ঝামেলা থেকেই থাকে, এটা আমারও ছিল। তবে বলার মতো না।' সাদিয়া বলেন, গত ৬ জুন উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতালের্ যাবের অভিযানের পর সাহেদের সঙ্গে তার 'শেষ কথা হয়েছিল'। তিনি বলেন, 'সে শুধু বলেছে, রাতে ফেরা হবে না, যেখানে আছি ভালো আছি। এরপর তার সাথে আর কথা হয়নি। পরে তার লোকজনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। সেই সব লোকজন প্রথম প্রথম ফোন ধরেছিলেন, এখন আর ধরেন না।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাহেদ এখন কোথায় আছেন, তা তিনি 'জানেন না'। তবে তাকে খুঁজতে বা অন্য কোনো কিছুর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার বাসায় আসেননি। বর্তমানের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে দুই বছরের ছোট বাচ্চাকে রেখে স্বামীর জন্য কিছু করতে বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করছেন তার স্ত্রী। 'এসব ব্যাপারে তার লোকজনই করবে,' বলেন তিনি। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই গত মার্চে রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করেছিল সরকার। যদিও তাদের হাসপাতাল চালানোর অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল আগেই। সেখানে নমুনা পরীক্ষা না করে করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার বেশকিছু অভিযোগ পাওয়ার পরর্ যাব খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সিল ও প্যাড নকল করে সেসব রিপোর্ট তৈরি করা হলেও সেসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র এসব নমুনা পরীক্ষা করেনি, রিপোর্টও দেয়নি। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে সোম, মঙ্গল ও বুধবার রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা এবং রিজেন্ট গ্রম্নপের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায়র্ যাব। অভিযানে বেশকিছু অনুমোদনহীন টেস্ট কিট এবং করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট পাওয়ার কথা জানানো হয়র্ যাবের পক্ষ থেকে। অভিযানের প্রথম দুই দিনে উত্তরা থেকে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মঙ্গলবার রাতে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায়। ওই মামলায় বলা হয়, প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তির কোভিড-১৯ পরীক্ষার নামে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আয় করলেও বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা বলে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার একটি বিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 'এই হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ নিজেকে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সে একজন ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু ও পাষন্ড।' এই মামলায় পলাতক আসামিদের মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শিবলীকে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করের্ যাব। তবে প্রধান আসামি সাহেদসহ বাকিরা এখনও অধরা। তাদের বিষয়ে জানতে চাইলের্ যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আশিক বিলস্নাহ শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় বলেন, সাহেদকে গ্রেপ্তারে তাদের একাধিক টিম ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কাজ করছে। 'সাহেদ একজন ধুরন্ধর, তাকে গ্রেপ্তারের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।' সাহেদ আদালতে আত্মসমর্পণ করার চেষ্টা করতে পারেন বলে মনে করছেনর্ যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা। 'এদিকেও আমাদের নজরদারি রয়েছে,' বলেনর্ যাবের একজন কর্মকর্তা। সাহেদকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার রাতে বলেছিলেন, 'খুঁজতেছে তো। হয়ে যাবে মনে হয়। তারও উচিত সারেন্ডার করা।'